গত বছর থেকে বদলে গেছে পার্থর ব্যক্তিগত জীবনও
ক্যারিয়ারের সুসময় পার করছেন তরুণ অভিনেতা পার্থ শেখ। তাঁর অভিনীত ‘নিরুদ্দেশ’, ‘প্রথম প্রেমের গল্প’সহ একাধিক নাটক এর প্রমাণ। ব্যস্ততা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনেও আসছে পরিবর্তন। এই ব্যস্ততা পার্থের ব্যক্তিগত জীবনে কী পরিবর্তন আনল, জানাচ্ছেন মনজুরুল আলম
বেশ কয়েকবার ফোন করেও পাওয়া গেল না। পরে ফোন ধরে জানালেন টানা শুটিংয়ে ব্যস্ত। এই ব্যস্ততা নাকি চলবে ঈদের আগপর্যন্ত। সেভাবেই নাটকের শিডিউল দেওয়া। এমনকি ঈদের পরের শিডিউলও ঠিক করে ফেলছেন। পার্থ জানালেন, ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়টায় বুঝে পা ফেলতে চান। যে কারণে গল্পে মনোযোগী হচ্ছেন, বাড়াচ্ছেন কাজের সংখ্যা।
মাস যদি ৬০ দিনে হতো
পার্থর জন্য মাস ৬০ দিনে হলো ভালো হতো। কারণ, সময়ের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি চিত্রনাট্য পাচ্ছেন। জানালেন, এমন হয়, অনেক ভালো গল্প, পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে করতে মন চায়। কিন্তু শিডিউল না থাকার কারণে কিছু গল্প হাতছাড়া হয়ে যায়। এই অভিনেতা বলেন, ‘এটা আসলে ভাগ্য। যখন ভালো গল্প আসবে, তখন সেই গল্পে কাজ করতে পারব কি না বলা যায় না। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হয়তো দেরি করতে চায় না। আমার ক্যারিয়ারের জন্য এই বছরটা গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে আমি এক্সপেরিমেন্ট করা যাবে এমন গল্প, নতুন নতুন চরিত্রে মনোযোগ দিচ্ছি। যে গল্পগুলো আমার জন্য চ্যালেঞ্জিং, নতুন অভিজ্ঞতা, আমার ক্যারিয়ারে ভিন্ন একটা মাত্রা যোগ করবে, সেগুলোকেই শিডিউল দিচ্ছি।’
পাঁচটায় লাঞ্চ
একসময় কাজের জন্য অপেক্ষায় থাকতেন দিনের পর দিন। একটু ব্যস্ততা বাড়লে দু–তিনটি কাজ করার সুযোগ হতো। সেই চিত্র গত বছর থেকে বদলে গেছে। সঙ্গে বদলে গেছে পার্থর ব্যক্তিগত জীবন।
যে পার্থকে আগে নিয়মিতই বন্ধুদের আড্ডায় পাওয়া যেত, সেই পার্থ জানালেন, এখন জীবনটা শুটিং টু বাসা হয়ে গেছে। এমনো হয় টানা ভোর পর্যন্ত শুটিং করতে হয়। ‘আড্ডা খুব মিস করি। পারিবারিক আয়োজনেও অনেক সময় থাকা হয় না। আমার ব্যক্তিগত সময়ই কমে গেছে। এগুলো আমার নতুন অভিজ্ঞতা। আত্মীয়স্বজন–বন্ধুরা অনেক সময়ই আমাকে না পেয়ে মন খারাপ করে। আবার এটাও বোঝে, যেহেতু আমি স্ট্রাগল করে আজকের জায়গায় এসেছি। আরও ভালো করি। যে কারণে মন খারাপ করলেও বন্ধুরাই আমার কাজের সবচেয়ে বড় সমালোচক। আমি সামান্য সময় পেলেই চিন্তা করি একটু আড্ডা দিয়ে বাসায় যাব। কিন্তু এত চাপে থাকতে হয় যে সময় হয়ে ওঠে না। এই যে দেখেন, সোয়া পাঁচটা বাজে এখন লাঞ্চ করতে যাব।’ বলেন পার্থ।
জুটি হয়েও কত কথা
দর্শক পছন্দ করে বলেই জুটি হয়ে অভিনয় করেন। সেটা নিয়েও শুনতে হয় কত কথা। কেউ কেউ নাকি ধরে নেন নায়িকার সঙ্গে প্রেম চলছে। এগুলো বেশ উপভোগ করেন এই অভিনেতা।
তিনি বলেন, ‘কে কী বলছেন, সেদিকে কখনোই মনোযোগ দিই না। আমার কাজটা করে যাই। অনেকেই বলেন আমি এর–ওর সঙ্গে প্রেম করি। জুটি হয়ে কাজ করতে গিয়ে প্রেম করতে হবে কেন? সম্পর্কটা পেশাদারত্বের। আমাদের সিঙ্ক ভালো। আমাদের মধ্যে রসায়ন ভালো। মানসিকভাবেও সিঙ্কের ব্যাপার আছে। যে কারণে হয়তো কারও সঙ্গে বেশি কাজ করি। কিন্তু এটা প্রেম নয়।’ নওবা তাহিয়া ও আইশা খানের সঙ্গে পার্থকে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। মূলত তাঁদের ঘিরেই এই গুঞ্জন।
নিরুদ্দেশ হতে চাই না
এক মাস আগেই সোহেল রাজ পরিচালিত ‘নিরুদ্দেশ ’ নাটক দিয়ে বেশ আলোচনায় আসেন। রোমান্টিক এই নাটকে পার্থর সহশিল্পী ছিলেন আইশা খান। ভালোবেসে আঘাত পায় এক তরুণ। একসময় ভালোবাসা তার জীবন থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায় তরুণটি। এই গল্পটি পছন্দ করেছেন অনেকে। বাস্তব জীবনে কখনো নিরুদ্দেশ হতে চেয়েছিলেন? এমন প্রশ্নে এই অভিনেতা বলেন, ‘একসময় নিরুদ্দেশ হতে মন চাইত। অনেক দূরে চলে যেতে চাইতাম। তখন আমি অনেক ফ্রাস্ট্রেশনে ছিলাম। এখন মনে হয় অভিনয় নিয়ে ভালো আছি। দর্শকদের ভালোবাসা নিয়েই থাকতে চাই।’
ব্যস্ততা
একসময় ইচ্ছা ছিল ক্রিকেটার হবেন। খেলতে গিয়ে হঠাৎ স্পাইনাল কর্ডের ইনজুরি পার্থকে ক্রিকেট থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। সময়গুলো ভালো যাচ্ছিল না, মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েন। দুই বছর পর ২০১৭ সালে দুই বন্ধুর সঙ্গে অডিশন দেখতে গিয়ে অমিতাভ রেজার বিজ্ঞাপনে নাম লেখান। সেই শুরু। ২০২১ সালে নাম লেখান সৈয়দ আহমেদ শাওকীর ‘কারাগার’’ ওয়েব সিরিজে। এটাই তাঁর ক্যারিয়ারের বাকবদল হয়ে দাঁড়ায়। পরে ওয়েব ‘অদৃশ্য’, ‘বাজি’, ‘ফ্রেঞ্জি’সহ বেশ কিছু ওটিটির কাজ তাঁর ক্যারিয়ারকে আরও শক্ত অবস্থানে নিয়ে যায়। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে বিঞ্জের ‘নয়া নোট’। ঈদে ডজনের মতো নাটকে পার্থকে দেখা যাবে।