টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার, হলেন থ্রিলার নির্মাতা

‘ইরিনা’, ‘জন্মদাগ’, ‘রেহনুমা’, ‘চিরকাল আজ’, ‘পুনর্জন্ম সিরিজ’, ‘রেডরাম’, ‘দ্য সাইলেন্স’, ‘কাজলের দিনরাত্রি’, ‘আমি কি তুমি’, ‘তিথিডোর’, ‘রুমি’—একের পর এক আলোচিত কাজ উপহার দিয়েছেন ভিকি জাহেদ। কোলাজ

হতে চেয়েছিলেন ক্রিকেটার। তবে এক চোট তাঁর পেস বোলার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে দেয়। এরপর কাজ করার কথা ছিল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই তাঁর পড়ার বিষয় ছিল কিনা! কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলেন নির্মাতা। এ সময়ে টিভি বা ওটিটির অন্যতম আলোচিত নির্মাতা ভিকি জাহেদ। আজ এই তরুণ নির্মাতার জন্মদিন। এ উপলক্ষে আলো ফেলা যাক তাঁর ক্যারিয়ারে।

নির্মাতা হতে চাননি ভিকি জাহেদ। চেয়েছিলেন পেস বোলার হতে। তবে বোলারদের চিরশত্রু চোটের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তো তাঁর জীবন পুরো বদলে যায়। তা–ও এক রাতে!

কাজ করার কথা ছিল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এটাই তাঁর পড়ার বিষয় ছিল কিনা! কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলেন নির্মাতা। এ সময়ে টিভি বা ওটিটির অন্যতম আলোচিত নির্মাতা ভিকি জাহেদ। আজ এই তরুণ নির্মাতার জন্মদিন।

সেই রাতে ‘আ ক্লকওয়ার্ক ওরেঞ্জ’ দেখতে বসেছিলেন ভিকি জাহেদ। কে জানত স্ট্যানলি কুবরিকের এই সিনেমাটি তাঁর জীবন বদলে দেবে। ২০১০ সালের দিকে ছবিটি দেখার পর অন্য এক ঘোরের মধ্যে চলে যান, ঠিক করেন এই নির্মাতা হবেন। তাঁর কাছে নির্মাণ একটা জার্নির মতো। ধীরে ধীরে শুরু হলো প্রচুর সিনেমা দেখা আর বই পড়া।

নির্মাণ নিয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, কাজ করেননি কারও সহকারী হিসেবেও; নিজে নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন চলচ্চিত্রের ভাষা। শুরুর দিকে প্রচুর স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বানিয়েছেন। বেশির ভাগই ‘ফিল গুড’ রোমান্টিক ধারার কাজ। তবে দেশি নির্মাতাদের মধ্যে ভিকি জাহেদ ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন কোভিড–পরবর্তী সময়ে। ‘ইরিনা’, ‘জন্মদাগ’, ‘রেহনুমা’, ‘চিরকাল আজ’, ‘পুনর্জন্ম’ সিরিজ, ‘রেডরাম’, ‘দ্য সাইলেন্স’, ‘কাজলের দিনরাত্রি’, ‘আমি কি তুমি’, ‘তিথিডোর’, ‘রুমি’—একের পর এক আলোচিত কাজ উপহার দিয়েছেন তিনি।

কে জানত স্ট্যানলি কুবরিকের এই সিনেমাটি তাঁর জীবন বদলে দেবে। ২০১০ সালের দিকে ছবিটি দেখার পর অন্য এক ঘোরের মধ্যে চলে যান, ঠিক করেন এই নির্মাতা হবেন। তাঁর কাছে নির্মাণ একটা জার্নির মতো।
তিনি যা–ই বানান, যেখানে ডার্ক বিষয় থাকবেই। থ্রিলারের মোড়কে তাঁর গল্পে দেখা যায় ক্রমিক খুনি, নরমাংসখাদক, জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি। এ ছাড়া তাঁর কাজে থাকে দুনিয়ার নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার রেফারেন্স।

এককথায় ভিকি জাহেদকে নিয়ে বলতে গেলে বলতে হবে ধূসর! পর্দায় চরিত্রের ধূসর দিক নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন তিনি। এ সময়ের অন্যতম থ্রিলার নির্মাতাও তিনি। কেবল থ্রিলার নয়, সায়েন্স ফিকশন থেকে শুরু করে এমন অপ্রচলিত বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন তিনি, যা দেশি কনটেন্টে খুব একটা দেখা যায় না।

ভিকি জাহেদ
খালেদ সরকার
সাফল্যের তিন কারণ
‘ইরিনা’, ‘জন্মদাগ’, ‘রেহনুমা’, ‘চিরকাল আজ’, ‘পুনর্জন্ম সিরিজ’, ‘রেডরাম’, ‘দ্য সাইলেন্স’, ‘কাজলের দিনরাত্রি’, ‘আমি কি তুমি’, ‘তিথিডোর’, ‘রুমি’—একের পর এক আলোচিত কাজ উপহার দিয়েছেন ভিকি জাহেদ; তবে থ্রিলারের জন্য বেশি পরিচিতি তাঁর। কেবল থ্রিলার নয়, সায়েন্স ফিকশন থেকে শুরু করে এমন অপ্রচলিত বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন তিনি, যা দেশি কনটেন্টে খুব একটা দেখা যায় না।  ভিকির এই সাফল্যের রহস্য কী? নির্মাতার নিজের পর্যবেক্ষণে উঠে এল তিনটি কারণ। ‘প্রথমত, নস্টালজিয়া। আশি–নব্বই দশকে “এক্স-ফাইলস”-এর মতো অনেক সিরিজ ছিল, যেগুলো আসলে অতিপ্রাকৃত বা মিস্ট্রি-থ্রিলার ঘরানার; এসব তখন তুমুল জনপ্রিয় হয়। এ ধরনের শো এখন হয় না, আমার কাজগুলোতে সেই সময়ের শোগুলোর কিছু উপাদান থাকে; যা দর্শককে নস্টালজিক করে। আমার কাজে দর্শকেরা নিজেদের ফেলে আসা শৈশব খুঁজে পান। ইউটিউব বা ফেসবুকে মন্তব্যের ঘরে অনেক দর্শক সে কথা লিখেছেনও।’ বলেন ভিকি। এ ছাড়া এই নির্মাতা মনে করেন, তাঁর সঙ্গে দর্শকের একটা ‘যোগ’ আছে। ভিকির ভাষ্যে, ‘দর্শকের সঙ্গে আমার একটা সাইকোলজিক্যাল বা মেটাফিজিক্যাল যোগ আছে; আমার কাছে দর্শক কী চান সেটা বুঝতে পারি।’ এটাকে নিজের জনপ্রিয়তার দ্বিতীয় কারণ বলে মনে করেন ভিকি। তৃতীয় কারণ ভাগ্য। নিরীক্ষাধর্মী কনটেন্ট বানিয়ে পরিচিতি পাওয়া পরম সৌভাগ্যবান না হলে হয় না বলে মনে করেন তিনি।

দুই বাংলায় তুমুল জনপ্রিয় নাটক ‘চিরকাল আজ’-এ তিনি পর্দায় তুলে ধরেছেন অ্যামনেশিয়ায় আক্রান্ত এক চরিত্রের জার্নি। ‘আমি কি তুমি’র মূল উপজীব্য প্যারালাল ইউনিভার্স। তবে তিনি যা–ই বানান, যেখানে ডার্ক বিষয় থাকবেই। থ্রিলারের মোড়কে তাঁর গল্পে দেখা যায় ক্রমিক খুনি, নরমাংসখাদক, জটিল কোনো রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি। এ ছাড়া তাঁর কাজে থাকে দুনিয়ার নানা প্রান্তে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার রেফারেন্স।

ইরিনা’, ‘জন্মদাগ’, ‘রেহনুমা’, ‘চিরকাল আজ’, ‘পুনর্জন্ম সিরিজ’, ‘রেডরাম’, ‘দ্য সাইলেন্স’, ‘কাজলের দিনরাত্রি’, ‘আমি কি তুমি’, ‘তিথিডোর’, ‘রুমি’—একের পর এক আলোচিত কাজ উপহার দিয়েছেন ভিকি জাহেদ।

এ প্রসঙ্গে আগে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভিকি জাহেদ বলেছিলেন, ‘শুরুর দিকে বেশির ভাগ মানুষই এ ধরনের বিষয় নিয়ে কাজ করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। প্রযোজক পেতেও সমস্যা হতো। তবে আমার বিশ্বাস ছিল। এখন সব দেশের সব ধরনের কনটেন্ট দর্শকের হাতের নাগালে। ওদের সঙ্গে টক্কর দিতে গেলে আমাদেরও বৈচিত্র্য আনতে হবে। যেসব গল্প কখনো বলা হয়নি, সেগুলো বলতে হবে। কারণ, দর্শক তো কনটেন্ট দেখবেন, আপনার বাজেট কম ছিল কি না, কতটা প্রতিকূলতা নিয়ে বানিয়েছেন, সেটা ভাববেন না। তাই টক্কর দিতে আমাদের একটাই অস্ত্র, গল্প।’

হিচকক-প্রেরণা
ভিকি জাহেদ থ্রিলার বানান; তাই তাঁর অন্যতম প্রেরণা যে আলফ্রেড হিচকক হবেন সে আর আশ্চর্য কী। চলতি বছর হিচককের দুই আলোচিত সিনেমা ‘ডায়াল এম ফর মার্ডার’ ও ‘রিয়ার উইন্ডো’র মুক্তির ৭০ বছর পূর্ণ হয়েছে। ভিকির সঙ্গে আলাপের শেষ হয় তাই হিচকক প্রসঙ্গে। নির্মাতা জানান, রিয়ার উইন্ডোর চেয়ে ‘ডায়াল এম ফর মার্ডার’ তাঁর বেশি প্রিয়। কারণ ব্যাখ্যা করলেন এভাবে, সিনেমাটিতে দীর্ঘ সিকোয়েন্স, লম্বা লম্বা সংলাপ; তারপরও বিরক্ত লাগে না। হিচককের অনেক ছবিতে সহিংসতা আছে, ধাওয়া করার দৃশ্য আছে, রোমাঞ্চ, উত্তেজনা আছে; কিন্তু “ডায়াল এম ফর মার্ডার”-এ সেসব খুব বেশি নেই। তারপরও ছবিটি আপনাকে পর্দায় আটকে রাখে, এটাই হিচকক-জাদু।’ ভিকি আরও মনে করেন, হিচককের সময় প্রযুক্তি তত উন্নত ছিল না, তার বেশির ভাগ ছবিও হয়েছে স্টুডিওর মধ্যে যা থ্রিলার নির্মাতার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং; কিন্তু তাঁর গল্প বলার ক্ষমতা এমন ছিল যে এসব কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। খুব অল্প উপকরণ দিয়ে কীভাবে পর্দায় রোমাঞ্চ আর রহস্য তৈরি করা হয়, সেটা হিচককের থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন ভিকি।

অল্প বাজেটে বৈচিত্র্যময় কনটেন্ট তৈরি করাও ভিকি জাহেদের আরেকটি গুণ। এ সময়ের বেশির ভাগ দর্শক বিশ্বের নানা প্রান্তের কনটেন্ট দেখে অভ্যস্ত। দেশি কনটেন্ট দিয়ে তাঁদের কাছে কীভাবে পৌঁছানো যাবে, সেটা ভালোই জানেন ভিকি। তাই তাঁর কাজ তরুণদের কাছে এতটা আলোচিত হয়। বিষয়, অভিনবত্ব, চেনা অভিনেতাকে নতুন রূপে হাজির করাও তাঁর সাফল্যের আরেকটি কারণ হতে পারে।

নির্মাণ নিয়ে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই, কাজ করেননি কারও সহকারী হিসেবেও; নিজে নিজেই তৈরি করে নিয়েছেন চলচ্চিত্রের ভাষা। শুরুর দিকে প্রচুর স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বানিয়েছেন। বেশির ভাগই ‘ফিল গুড’ রোমান্টিক ধারার কাজ।

মেহজাবীন চৌধুরী, আফরান নিশোদের মতো অভিনেতাদেরও তিনি নতুন করে চিনিয়েছেন। ‘পুনর্জন্ম’ সিরিজে নিশো অভিনীত চরিত্র ‘রাফসান’ হক তো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

শুরুর দিকে বেশির ভাগ মানুষই এ ধরনের বিষয় নিয়ে কাজ করতে নিরুৎসাহিত করেছেন। প্রযোজক পেতেও সমস্যা হতো। তবে আমার বিশ্বাস ছিল। এখন সব দেশের সব ধরনের কনটেন্ট দর্শকের হাতের নাগালে। ওদের সঙ্গে টক্কর দিতে গেলে আমাদেরও বৈচিত্র্য আনতে হবে। যেসব গল্প কখনো বলা হয়নি, সেগুলো বলতে হবে।
ভিকি জাহেদ

অন্যদিকে ক্যারিয়ারজুড়েই নানা বৈচিত্র্যময় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মেহজাবীন। এর মধ্যে রোমান্টিক চরিত্রই বেশি। রোমান্টিক ভাবমূর্তি ভুলিয়ে মেহজাবীনকে ভিন্ন রূপে হাজির করেন ভিকি জাহেদ।

(এ প্রতিবেদনের কিছু অংশ প্রথম আলোতে প্রকাশিত লেখা থেকে সংকলিত)