নিপীড়ক পুরুষদের খুন করেন তিনি
‘আ টাইগার ইন উইন্টার’, ‘মিস কন্সপিরেটর’ থেকে ‘দ্য অ্যাক্টেসেস’—একের পর এক সিনেমায় আভিজাত্যের দ্যুতি ছড়িয়েছেন কো হিউন-জং। বরাবরই তাঁকে শান্ত ও ধীরস্থির চরিত্রে দেখা গেছে।
সেই চেনা গণ্ডি ভেঙে দর্শকদের চমকে দিলেন কো হিউন-জং, এসবিএসের থ্রিলার সিরিজ ‘কুইন ম্যান্টিস’–এ ঠান্ডা মাথার ক্রমিক খুনির চরিত্রে রীতিমতো ভয় ধরিয়ে দিয়েছেন তিনি। খুনে চাহনি আর রহস্যময় অভিব্যক্তিতে চরিত্রটিকে জীবন্ত করে তুলেছেন।
জং ই–শিন নামের এক খুনির জীবনকে পর্দায় তুলে ধরা হয়েছে, চরিত্রটি ‘ম্যান্টিস’ নামে পরিচিত। এই চরিত্রে প্রাণ দিয়েছেন কো হিউন-জং। ম্যান্টিসের খুনের ধরনটা আলাদা—নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতনকারী পুরুষদের খুঁজে বের করে সে। তালিকা ধরে ধরে খুন করে।
ক্রমিক খুনি হিসেবে রাতারাতি কুখ্যাতি ছড়ি পড়ে ম্যান্টিসের। কারও কাছে সে এক ভয়ংকর খলচরিত্র, আবারও কারও কাছে বিকৃত ন্যায়বিচারের প্রতীক।
সিরিজের গল্পটা এমন—২৩ বছর আগে ম্যান্টিসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। একই কায়দায় আবারও খুনের ঘটনা ঘটতে থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনি রীতিমতো ধন্দে পড়ে যায়। কূলকিনারা করতে না পেরে তদন্তকারীরা বাধ্য হয়ে ম্যান্টিসের শরণ নেয়। ম্যান্টিস তদন্তকারীদের সঙ্গে কথা বলবে; তবে শর্ত দেয়, কারাগারে নয়, বাইরে একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় বসবে। কথা বলবে একজনের সঙ্গে, সে গোয়েন্দা কর্মকর্তা সু-ইওল। সু-ইওল আবার ম্যান্টিসের ছেলে।
ক্রমিক খুনি মাকে ঘৃণা করে গোয়েন্দা সু–ইওল। মায়ের ছায়াও মাড়াতে চায় না সে। ফলে সে মায়ের সঙ্গে বসতে চায়নি, তবে শেষ পর্যন্ত রাজি হয়। কারণ, যেকোনো মূল্যে দেশে খুনখারাবি থামাতে হবে।
দীর্ঘ দুই দশক পর মা ও ছেলের দেখা। নাটকীয় ঘটনাই বটে। খুনি আর গোয়েন্দা কর্মকর্তা—দুজন বিপরীতমুখী দুই চরিত্র। দর্শকেরা ভেবেছিলেন, দুই দশকের জমানো আবেগ ধরে রাখতে পারবে না মা ও ছেলে। তবে ঘটেছে উল্টোটা—পেশাদার ভঙ্গিতে ঠান্ডা স্বরে কথা বলেছে সু-ইওল, মা ক্রমেই মাতৃত্বের খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসছে, পুরোনো খুনিসত্তা তাকে ভর করেছে।
পর্দায় বিতণ্ডা ক্রমেই জমে ওঠে। কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না। ভালোবাসা ও ঘৃণার সীমানা ছাড়িয়ে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। ম্যান্টিসের ছোট্ট অথচ শীতল সংলাপ বাড়িয়ে তোলে সেই ভয়ের আবহ। সে ছেলেকে বলে, ‘রক্তের গন্ধ কি তোমার অপছন্দ? অথচ আমি ওটা ভালোবাসি। এটাই তো সেই গন্ধ, যা তুমি জন্মের মুহূর্তে পৃথিবীতে এনেছিলে।’
ম্যান্টিসের ভয়ংকর মুখভঙ্গি আর উত্তেজনা দেখে মনে হয়, সে ২৩ বছর আগে ফিরে গেছে। তার মাথায় খুন চেপেছে, পুরোনো হত্যাকাণ্ডের স্মৃতিকে উসকে উঠেছে। অন্যদিকে কোনো কূলকিনারা খুঁজে পায় না ছেলে, ক্রোধ গিলে চুপ করে থাকে।
সিরিজের দ্বিতীয় পর্বের শেষ দৃশ্যটি দর্শকের মধ্যে অস্বস্তি ছড়িয়েছে। এতে দেখা গেছে, মুখ থেকে একটি পাতা বের করে পোকামাকড়কে খাওয়াচ্ছে ম্যান্টিস; এ সময় তার মুখে ছিল খুনে হাসি।
আট পর্বের সিরিজটির দুটি পর্ব মুক্তি পেয়েছে। দুর্দান্ত অভিনয়ে দর্শকের হৃদয়ে দাগ ফেলেছেন কো হিউন-জং। তাঁকে দেখে দর্শকের মনে প্রশ্ন জাগছে, মানুষ আসলে কীভাবে দানবে পরিণত হয়? আর সেই উত্তর খুঁজতেই দর্শকেরা প্রতি সপ্তাহে সিরিজটির জন্য অপেক্ষা করছেন।
নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই ‘কুইন ম্যান্টিস’ আন্তর্জাতিকভাবে সাড়া ফেলেছে। ফ্লিক্সপ্যাট্রোলের তথ্য অনুযায়ী, এটি ১৬টি দেশে শীর্ষ ১০ টিভি শোর তালিকায় জায়গা করেছে এবং কোরিয়ায় টানা দুই দিন শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে।
তথ্যসূত্র: কোরিয়া টাইমস