যমজ টাপুর টুপুরের নতুন অভিজ্ঞতা
দুই বছর আগে অনিমেষ আইচের ওয়েব ফিল্ম মায়া–তে একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন যমজ দুই বোন টাপুর ও টুপুর। পরে আলাদা কাজে ব্যস্ত হলেও দীর্ঘ সময় তাঁদের আর একসঙ্গে দেখা যায়নি পর্দায়। সেই অপেক্ষার অবসান হলো এবার। প্রথমবারের মতো একসঙ্গে অভিনয় করলেন একটি মিউজিক্যাল স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমায়। নতুন এই অভিজ্ঞতা নিয়ে উচ্ছ্বসিত দুই বোনই।
সাম্প্রতিক সময়ে শেষ হয়েছে ‘একদিন আমি চলে যাব’ শিরোনামের এই মিউজিক্যাল শর্ট ফিল্মের শুটিং। এতে তাঁদের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু। পরিচালনা করেছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা জাকির হোসেন। কাজটি নিয়ে দুই বোনের মধ্যেই রয়েছে বিশেষ উচ্ছ্বাস। কারণ, এটি শুধু একসঙ্গে কাজের আনন্দ নয়, অভিনয়ের ধরনেও ছিল নতুনত্ব।
পড়াশোনার ফাঁকে
টাপুর ও টুপুর—দুজনেই দীর্ঘদিন ভারতের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন। সেখান থেকেই ও লেভেল শেষ করে চলতি বছরের এপ্রিলে পরীক্ষা দিয়ে দেশে ফেরেন। সেই বিরতিতেই নাটক, মডেলিং ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রে অংশ নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। টাপুর বললেন, ‘আগে পড়াশোনার চাপে অভিনয়ে নিয়মিত হওয়া যেত না। দেশে আসার সুযোগও কম ছিল। এবার কয়েক মাস সময় পাওয়ায় কিছু ভালো কাজ ও গল্প নিয়ে আগ্রহী হতে পেরেছি।’ তরুণ এই অভিনেত্রী যোগ করেন, ‘অনেক গল্পেই কাজের প্রস্তাব আসে, কিন্তু সবকিছুতেই রাজি হই না। যখন বলা হলো মিউজিক্যাল শর্ট ফিল্মে অভিনয় করতে হবে, তখনই রাজি হলাম। এই ধরনের ফিল্মে আগে কাজ করিনি—পুরোটাই আমার জন্য নতুন অভিজ্ঞতা।’
মিউজিক্যাল ফিল্ম ও ঐতিহাসিক চরিত্র
‘একদিন আমি চলে যাব’–এর শুটিং অভিজ্ঞতা নিয়ে টুপুর বললেন, ‘মিউজিক্যাল ফিল্মে অভিনয়টা একটু আলাদা। আগে বুঝে নিতে হয়েছে কীভাবে অনুভূতিগুলো গানের সঙ্গে মিলিয়ে প্রকাশ করতে হয়।’ টুপুর আরও বলেন, ‘এরপর শুটিংটা আমি সত্যিই উপভোগ করেছি। বাবু আংকেল পুরো সময় আমাদের পাশে ছিলেন। তিনি তো গুণী শিল্পী—তাঁর কাছ থেকে অভিনয়ের অনেক কিছু শেখার সুযোগ হয়েছে।’ একসঙ্গে কাজের আনন্দও আলাদা করে উল্লেখ করেন টুপুর, ‘অনেক দিন পর আমরা দুই বোন একসঙ্গে দীর্ঘ সময় কাজ করেছি। সেটাই এই প্রজেক্টটির বড় প্রাপ্তি।’
এই মিউজিক্যাল ফিল্মের পাশাপাশি টুপুর ইতিমধ্যে শেষ করেছেন আরেকটি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা ‘প্রেরণায় রোকেয়া’র শুটিং। অনন্য মামুন পরিচালিত এই ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন বেগম রোকেয়ার চরিত্রে। নারীশিক্ষায় ও নারী জাগরণে বেগম রোকেয়ার অবদানকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হয়েছে ছবিটি।
এই কাজ নিয়ে টুপুরের অনুভূতি, ‘বেগম রোকেয়ার চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পাওয়া আমার জন্য সম্মানের ও গর্বের। তিনি নারী শিক্ষা ও নারীর এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে যে চিন্তা ও সংগ্রাম রেখে গেছেন, তা আমাদের জন্য এখনো প্রাসঙ্গিক।’ তিনি বলেন, ‘এই চরিত্রটি প্রস্তুত করতে গিয়ে তাঁর জীবন, চিন্তাচেতনা ও আন্দোলনের গল্প কাছ থেকে জানার সুযোগ হয়েছে, যা আমাকে ব্যক্তিগতভাবেও সমৃদ্ধ করেছে।’
সামনে পড়াশোনা, তারপর
শিল্পী পরিবারে বেড়ে ওঠা টাপুর ও টুপুরের বেড়ে ওঠা আর স্বপ্নের কেন্দ্রে বরাবরই ছিল পড়াশোনা ও অভিনয়ের সহাবস্থান। নির্মাতা বাবার (সতীর্থ রহমান) সৃজনশীল পরিবেশ আর অভিনয়শিল্পী মা (গোলাম ফরিদা ছন্দা) নিয়মিত রিহার্সাল, শুটিং ও চরিত্র অনুশীলনের আবহেই গড়ে উঠেছে তাঁদের শিল্পবোধ। তাই অভিনয় তাঁদের কাছে কখনোই হঠাৎ পাওয়া কিছু নয়; বরং ধীরে ধীরে নিজেকে প্রস্তুত করে নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া। সেই ভাবনা থেকেই সামনে পড়াশোনাকেই এখন প্রধান অগ্রাধিকার দিচ্ছেন দুই বোন।
জানুয়ারি থেকে আবার পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়বেন টাপুর ও টুপুর। স্নাতক করতে তাঁরা আবার দেশের বাইরে যাচ্ছেন। তার আগে ডিসেম্বর মাসটিকে পুরোপুরি অভিনয়ের কাজে লাগাতে চান তাঁরা। টাপুর জানান, ‘ডিসেম্বরে পড়াশোনার জন্য বাইরে চলে যাব—এটা অনেকেই জানেন। তাই এই সময়ের মধ্যেই কিছু কাজের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘“ডালিম কুমার” নামে একটি সিনেমা নিয়ে কথা চলছে। সব ঠিক থাকলে শুটিং শেষ করে তারপর পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে চাই।’
অভিনয় ছাড়ার কোনো পরিকল্পনা নেই—এ কথা স্পষ্ট করে দিলেন টুপুর, ‘দেশের বাইরে পড়তে যাচ্ছি মানে এই নয় যে অভিনয় ছেড়ে দিচ্ছি। ছুটি পেলেই দেশে আসব। তখন পড়াশোনার পাশাপাশি শুটিং করব। কারণ, অভিনয়টা দিন দিন আমার কাছে আরও ভালো লাগছে।’ পড়াশোনা ও অভিনয়—দুটির মাঝেই এখন স্বপ্ন সাজাচ্ছেন তারকা কন্যাদ্বয় টাপুর ও টুপুর। নতুন অভিজ্ঞতা, নতুন চরিত্র আর একসঙ্গে কাজের আনন্দ মিলিয়ে তাঁদের এই যাত্রা আপাতত থামার নয়।