সিরিজটি কি সালমান শাহকে নিয়ে?

‘বুকের মধ্যে আগুন’ নিয়ে আসছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচইছবি: কোলাজ

‘নব্বইয়ের দশকের এক তারকার রহস্যজনক মৃত্যু দেশের মানুষকে স্তব্ধ করে দেয়। যদিও বলা হয়, এটি আত্মহত্যা, কিন্তু অনেকের বিশ্বাস, এটি হত্যাকাণ্ড। তাঁর মৃত্যুরহস্য উদ্‌ঘাটনে নামেন এক পুলিশ কর্মকর্তা। এরপর কী ঘটবে?’ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ‘বুকের মধ্যে আগুন’ ওয়েব সিরিজের গল্প নিয়ে এমন ধারণা দিয়েছিল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম হইচই। জানুয়ারিতে সিরিজের ঘোষণা আসার পর গল্পের প্রেক্ষাপট জেনে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, সিরিজটিতে প্রয়াত চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুরহস্য তুলে আনা হয়েছে।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনে সালমান শাহর বাসা থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়
ছবি: সংগৃহীত

বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল আলোচনার মধ্যে সিরিজের নির্মাতা তানিম রহমানের ঠিকানায় আইনি নোটিশ পাঠালেন সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম। তাঁর পক্ষে গত রোববার সিলেট জজ কোর্টের আইনজীবী মইনুল ইসলামের স্বাক্ষরে নোটিশটি পাঠানো হয়। নোটিশে সিরিজের দৃশ্য ধারণ বন্ধ করতে বলা হয়েছে, অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও করেছেন কুমকুম। তবে নির্মাতা তানিম রহমান দাবি করেছেন, সিরিজটি সালমান শাহকে নিয়ে নির্মাণ করা হয়নি।

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনে সালমান শাহর বাসা থেকে তাঁর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামলা করেন সালমান শাহর বাবা কমরউদ্দিন আহমদ চৌধুরী। দুই যুগ ধরে আদালতে ঝুলে থাকা মামলার প্রথমে তদন্তভার পায় পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), এরপর নানা সংস্থা ঘুরে ২০১৬ সালের ২১ আগস্ট পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। মামলার রায় না হওয়ায় সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছে, নাকি তিনি আত্মহত্যা করেছেন, ২৭ বছরেও সেই জট এখনো খোলেনি।

এ সিরিজে গোয়েন্দা কর্মকর্তা ‘গোলাম মামুন’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব
ছবি: সংগৃহীত
‘বিচারাধীন বিষয়ে সিরিজ নির্মাণ আইনসম্মত নয়। যাঁরা সিরিজ নির্মাণের চেষ্টা করছেন, তাঁরা বিরত থাকবেন। অন্যথায় আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে ব্যধ্য হব।’
সিলেট জজ কোর্টের আইনজীবী মইনুল ইসলাম

পরিচালককে পাঠানো আইনি নোটিশে দাবি করা হয়েছে, সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যুকে একটি মহল ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রচার করছে। মামলাটি নিয়ে বিচার চলাকালেই মৃত্যুরহস্য নিয়ে সিরিজ নির্মাণের চেষ্টা চলছে। নোটিশে আইনজীবী বলেন, ‘বিচারাধীন বিষয়ে সিরিজ নির্মাণ আইনসম্মত নয়। যাঁরা সিরিজ নির্মাণের চেষ্টা করছেন, তাঁরা বিরত থাকবেন। অন্যথায় আমরা আইনি ব্যবস্থা নিতে ব্যধ্য হব।’
আলোচিত এ সিরিজে গোয়েন্দা কর্মকর্তা ‘গোলাম মামুন’ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব; নব্বইয়ের আলোচিত ওই অভিনেতার চরিত্রে কে থাকছেন, তা এখনো খোলাসা করেননি নির্মাতা। সদরঘাট, এফডিসিসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সিরিজের দৃশ্য ধারণ জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে শেষ হয়েছে; ভারতে সিরিজের সম্পাদনা ও রংবিন্যাসের কাজ চলছে। সিরিজটি ১৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তির ঘোষণা দিয়েছে হইচই। এর মধ্যেই আইনি জটিলতার মুখে পড়লেন নির্মাতা।

সালমান শাহর পরিবারের তরফ থেকে পাঠানো নোটিশ এখনো হাতে পাননি বলে জানান নির্মাতা তানিম রহমান, তবে তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তিনি প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, সালমান শাহর পরিবারের অভিযোগ ভিত্তিহীন, সালমান শাহকে নিয়ে তিনি সিরিজ নির্মাণ করেননি।

তবে আলমগীর কুমকুমের দাবি, তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জেনেছেন, সিরিজটি সালমান শাহকে নিয়েই নির্মাণ করা হয়েছে। মামলার রায় হওয়ার আগেই সালমানের শেষ সিনেমা বুকের ভেতর আগুন সিনেমার নাম ও তার সংলাপ ব্যবহার করে সিরিজটি নির্মিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সালমান শাহর পরিবারের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করেননি নির্মাতা।

‘যুগে যুগে অনেক গল্প দেখেছি আমরা, তথ্য কিংবা প্রেক্ষাপট অনেক সময় মিলে যায়। তার মানে এই নয় যে এটি তার গল্প হয়ে যায়। আমরা একটি গল্প বলেছি, এটি শুধু নব্বইয়ের দশকের গল্প নয়, এখানে ২০১৯ সালের গল্পও আছে।’
তানিম রহমান

তানিম রহমান বলেন, ‘যুগে যুগে অনেক গল্প দেখেছি আমরা, তথ্য কিংবা প্রেক্ষাপট অনেক সময় মিলে যায়। তার মানে এই নয় যে এটি তার গল্প হয়ে যায়। আমরা একটি গল্প বলেছি, এটি শুধু নব্বইয়ের দশকের গল্প নয়, এখানে ২০১৯ সালের গল্পও আছে।’
সালমান শাহর সিনেমার নাম থেকে সিরিজের নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন করলে তানিম রহমান বলেন, ‘সিরিজটি সময়মতো মুক্তি পেলে আপনারা দেখতে পাবেন, নামের যৌক্তিকতা কতটুকু রয়েছে। এখানে দুটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে গল্প বলা হয়েছে। তাদের চারপাশ, জীবনের সংকটের কথা তুলে আনা হয়েছে। এটার সঙ্গে অন্য কিছুর মিল কেন খোঁজা হচ্ছে?’

তানিম রহমান বলেন, ‘যুগে যুগে অনেক গল্প দেখেছি আমরা, তথ্য কিংবা প্রেক্ষাপট অনেক সময় মিলে যায়। তার মানে এই নয় যে এটি তার গল্প হয়ে যায়। আমরা একটি গল্প বলেছি, এটি শুধু নব্বইয়ের দশকের গল্প নয়। এখানে ২০১৯ সালের গল্পও আছে।’

সালমান শাহর সিনেমার নাম থেকে সিরিজের নামকরণ নিয়ে প্রশ্ন করলে তানিম রহমান বলেন, ‘সিরিজটি সময়মতো মুক্তি পেলে আপনারা দেখতে পাবেন, নামের যৌক্তিকতা কতটুকু রয়েছে।’

পরিচালককে পাঠানো আইনি নোটিশে দাবি করা হয়েছে, সালমান শাহর রহস্যজনক মৃত্যুকে একটি মহল ‘আত্মহত্যা’ বলে প্রচার করছে
ছবি: সংগৃহীত

গত ডিসেম্বরেই সিনেমা কিংবা দৃশ্যশিল্পের নীতিমালা ‘সংস্কার’, বাংলা কনটেন্টের সম্ভাবনার এ সময়কে ‘নতুন করে সংজ্ঞায়িত’ করার লক্ষ্যে ভাবনা বিনিময়ের জন্য প্রথমবারের মতো ফ্যাব ফেস্টের আয়োজন করেছিল ফিল্ম অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ (ফ্যাব)। সালমান শাহর পরিবারের তরফ থেকে পাঠানো নোটিশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফ্যাবের সদস্য নির্মাতা পিপলু আর খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো মানুষের আইনি নোটিশ পাঠানোর অধিকার রয়েছে। আমার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ঘটনা নিয়ে কিছু নির্মাণ করতে চাইলে পরিবারের অনুমতি নিতে হবে। এখন কথা হচ্ছে, তারা (সালমান শাহর পরিবার) অনুমানের ওপর ভিত্তি করে, নাকি বাস্তবতার নিরিখে নোটিশটি পাঠিয়েছে! সালমান শাহকে নিয়ে নির্মাণ করতে চাইলে তাঁর পরিবারকে জানানো উচিত।’

যেকোনো মানুষের আইনি নোটিশ পাঠানোর অধিকার রয়েছে। আমার জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো ঘটনা নিয়ে কিছু নির্মাণ করতে চাইলে পরিবারের অনুমতি নিতে হবে। এখন কথা হচ্ছে, তারা (সালমান শাহর পরিবার) অনুমানের ওপর ভিত্তি করে, নাকি বাস্তবতার নিরিখে নোটিশটি পাঠিয়েছে! সালমান শাহকে নিয়ে নির্মাণ করতে চাইলে তাঁর পরিবারকে জানানো উচিত।
পিপলু আর খান

সিরিজের সঙ্গে সালমান শাহর কোনো সম্পর্ক নেই, নির্মাতার এমন দাবির প্রসঙ্গে পিপলু আর খান আরও বলেন, ‘নির্মাতার যদি কোনো দুর্বলতা না থাকে, তাহলে আইনজীবীর মাধ্যমে আইনিভাবে নোটিশের উত্তর দেবেন। উত্তর আইনিভাবে দেওয়ার মানে, আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হলো, সিরিজের সঙ্গে সেই ব্যক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। এর মধ্য দিয়ে নির্মাতা তাঁর দায়িত্ব পালন করলেন, সেই ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হতে পারতেন, তিনিও উত্তর পেলেন। বিশ্বজুড়ে এমন প্রক্রিয়ায় কাজ হয়।’
সালমান শাহর শেষ সিনেমা ‘বুকের ভেতর আগুন’ মুক্তি পায় তাঁর মৃত্যুর পরের বছর ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর।

আরও পড়ুন
আরও পড়ুন