‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ ঝড়ে নেটফ্লিক্স ক্র্যাশ, কী আছে বিশ্বজুড়ে আলোচিত এই সিরিজে
প্রায় কোনো প্রচার ছাড়াই এসেছিল প্রথম কিস্তি। হরর, অ্যাডভেঞ্চার, রহস্য আর একদল কিশোর-কিশোরীর গল্প নিয়ে নির্মিত সিরিজটি মুক্তির পরই ঝড় তুলেছিল সারা দুনিয়ায়। আশির দশকের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সিরিজটি যে এই সময়ের তরুণদের পর্দায় বুঁদ করে রাখবে, কে ভেবেছিল! এরপর পেরিয়ে গেছে নয় বছর, সময়ের সঙ্গে ইতিহাস তৈরি করেছে ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’; হয়ে উঠেছে গত এক দশকে পপ কালচারে সবচেয়ে চর্চিত নামগুলোর একটি। গতকাল বৃহস্পতিবার এসেছে সিরিজটির পঞ্চম ও শেষ মৌসুমের প্রথম কিস্তি। মুক্তির আগে থেকেই নতুন কিস্তি নিয়ে নানা আলোচনা, পূর্বাভাস; মুক্তির পরে তো নেটফ্লিক্সের সার্ভার পর্যন্ত ক্র্যাশ করেছে। কী আছে আলোচিত এই সিরিজে?
কী আছে ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এ
হ্যালো, পুরোনো বন্ধুরা—নতুন কিস্তিকে এভাবে স্বাগত জানানো যায়। এ যেন দীর্ঘদিন পরে পুরোনো বন্ধদের সঙ্গে পুনর্মিলন। ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ একদল কিশোর-কিশোরীর গল্প তবে কেন্দ্রে রয়েছে চার বন্ধু—মাইক (ফিন উলফহার্ড), উইল (নোয়া শ্ন্যাপ), লুকাস (কেলেব ম্যাকলখলিন) আর ডাস্টিন (গেটন ম্যাটার্যাজো)।
আশির দশকের ‘ডানজিয়নস অ্যান্ড ড্রাগনস’প্রেমী কিশোরেরা হঠাৎ করেই নিজেদের শহরের পাশে এক ভয়ংকর অন্ধকার জগতের (আপসাইড ডাউন) দরজা খুঁজে পায়। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয় রহস্যময় এক কিশোরী ইলেভেন ওরফে এল (মিলি ববি ব্রাউন), যার রয়েছে টেলিকাইনেটিক ও টেলিপ্যাথিক ক্ষমতা।
প্রথম মৌসুমে চরিত্রগুলোর বয়স ছিল আনুমানিক ১২ বছর, আর শেষ সিজনে তারা হবে প্রায় ১৬। কিন্তু বাস্তবে এসব চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতারা এখন কুড়ির কোঠায় পৌঁছে গেছেন। অনেকেই সমালোচনা করেন, প্রাপ্তবয়স্ক অভিনেতাদের দিয়ে কিশোর চরিত্রে অভিনয় করানোটা একটু অস্বাভাবিক। কিন্তু অদ্ভুতভাবে এই বেড়ে ওঠাই সিরিজটাকে আরও বিস্তৃত, আরও জীবন্ত করে তুলেছে। দীর্ঘ সময় ধরে দর্শকেরা চরিত্রগুলোর সঙ্গে মিশে গেছেন, তাদের মুখের দিকে তাকালেই সেই দীর্ঘ পথচলার কথা মনে পড়ে যায়।
২০১৬ সালে যখন ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ সবে শুরু, তখন নির্মাতা ম্যাট ডাফার বলেছিলেন, তিনি ‘হ্যারি পটার’-এর ছবিগুলোর মতো শিশুশিল্পীদের ক্যামেরার সামনে বড় হতে দেখতে চান। ‘আমি পর্দার সামনে শিশুদের বড় হতে দেখতে ভালোবাসি। এক বছর পর তাদের জীবন ও চরিত্রগুলো কোথায় দাঁড়ায়, সেটা দেখা আমার কাছে দারুণ লাগে,’ বলেছিলেন তিনি।
যাঁরা আশির দশকের ক্ল্যাসিক সিনেমা ভালোবাসেন, তাঁরা ‘ব্যাক টু দ্য ফিউচার’, ‘দ্য টার্মিনেটর’, ‘গোস্টবাস্টার্স’-এর ছায়া খুঁজে পাবেন। তবে আশির আবহ শুধু সিনেমাতেই সীমাবদ্ধ নয়। ছোট ছোট বিষয়—যেমন লুকাসের হাতে নিউ কোকের ক্যান কিংবা স্টিভের চুলে ফারাহ ফসেটের স্প্রে ব্যবহার—সেই সময়কে আরও জীবন্ত করে তোলে।
সিরিজটি এই ‘বড় হওয়া’কে দারুণভাবে তুলে ধরেছে। যেমন বদলেছে চরিত্রদের জীবন, তেমন বদল এসেছে দর্শকদের জীবনেও। আর এত দিনে তাদের সঙ্গে একটা গভীর আবেগের সম্পর্ক তৈরি হওয়াটাই স্বাভাবিক। দীর্ঘ বিরতির পর যখন আমরা আবার তাদের দেখি, মনে হয় যেন বহুদিন পর পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা। তাদের জীবনে এই ফাঁকে কী ঘটেছে, সেটাও জানতে ইচ্ছা করে তীব্রভাবে।
কেন এত জনপ্রিয়
ফি সপ্তাহে তো অনেক সিরিজই মুক্তি পায় কিন্তু এসবের মধ্যে ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ কেন এত জনপ্রিয় হলো! একটি–দুটি মৌসুম নাহয় মানা গেল, কিন্তু প্রায় এক দশক ধরেই বিশ্বজুড়ে সিরিজটি নিয়ে কেন এই উন্মাদনা?
এর অন্যতম বড় কারণ হতে পারে আশির দশকের নস্টালজিয়া। আশির দশকের নস্টালজিয়ায় ডুবে যেতে চাইলে এটি উপযুক্ত সিরিজ। পুরো গল্পটাই আবর্তিত হয়েছে ১৯৮০-এর দশককে ঘিরে, যেখানে সময়কালের সঙ্গে মানানসই দৃশ্যভঙ্গি, রং, পোশাক, প্রযুক্তি আর পপ কালচারের অসংখ্য রেফারেন্স ভরা।
স্টিফেন কিংয়ের লেখা পড়তে কে না ভালোবাসে। আর ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর পরতে পরতে তাঁর প্রভাব স্পষ্ট। হকিন্স, ইন্ডিয়ানা—ছোট এক শান্ত শহর, যেটার বাইরে থেকে সবকিছু স্বাভাবিক, কিন্তু ভেতরে লুকিয়ে আছে অন্ধকার—এ ধারণা স্টিফেন কিংয়ের গল্পের মতোই। দানব, কিশোরদের অ্যাডভেঞ্চার, অশুভ শক্তির দ্বারা প্রভাবিত চরিত্র, ভালো-মন্দের দ্বন্দ্ব ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর এসব উপাদান স্টিফেন কিংয়ের বহু গল্পেই দেখা যায়। এটা সিরিজটিকে বিশ্বজুড়ে দর্শকের আরও কাছাকাছি নিয়ে গেছে।
যাঁরা আশির দশকের ক্ল্যাসিক সিনেমা ভালোবাসেন, তাঁরা ‘ব্যাক টু দ্য ফিউচার’, ‘দ্য টার্মিনেটর’, ‘গোস্টবাস্টার্স’-এর ছায়া খুঁজে পাবেন। তবে আশির আবহ শুধু সিনেমাতেই সীমাবদ্ধ নয়। ছোট ছোট বিষয়—যেমন লুকাসের হাতে নিউ কোকের ক্যান কিংবা স্টিভের চুলে ফারাহ ফসেটের স্প্রে ব্যবহার—সেই সময়কে আরও জীবন্ত করে তোলে। সিরিজে দেখা গেছে আশির জনপ্রিয় তারকা উইনোনা রাইডার, শন অ্যাস্টিনকে।
‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য গল্প বলার ধার। এমন বহুমাত্রিক গল্প বলার ধরন সহসা দেখা যায়। সিরিজটি একই সঙ্গে ‘কামিং অব এজ’ গল্প, অন্যদিকে হরর, থ্রিলার আর অ্যাডভেঞ্চারের মিশেল।
কোনো এক জনরায় সিরিজটি অতিরিক্ত ঝুঁকে পড়ে না। বরং প্রতিটি ধারা থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান টেনে এনে একটি ভারসাম্যপূর্ণ, টান টান গল্প তৈরি করে। এ কারণেই শুধু হরর বা থ্রিলারপ্রেমীরাই নন, এমন দর্শকেরাও এই সিরিজে আকৃষ্ট হন, যাঁরা সাধারণত এ ধরনের গল্প দেখেন না।
এ সময়ের সিরিজ দেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় ধারা হলো ‘বিঞ্জ-ওয়াচিং’। তবে অনেক সিরিজ আছে, যেগুলোতে অতিরিক্ত পর্ব থাকায় টানা দেখা কঠিন হয়ে যায়। ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ ঠিক তার বিপরীত। এখানে সাধারণত একটি মৌসুমে আট থেকে নয়টি পর্ব থাকে; একটি মৌসুম শেষ করতে খুব বেশি সময় লাগে না। প্রতিটি পর্বেই গল্পকে আঁটসাঁট রাখতে হয়, অপ্রয়োজনীয় দৃশ্যের জায়গা থাকে না।
এ ছাড়া আছে ক্লিফহ্যাঙারের জাদু। প্রায় প্রতিটি পর্বই শেষ হয় এমন এক টান টান রোমাঞ্চ রেখে, যা দেখার পর পরবর্তী পর্ব না দেখে থাকা প্রায় অসম্ভব। প্রথম মৌসুমে যেমন ম্যাকের বোন ন্যান্সির (নাটালিয়া ডায়ার) প্রথমবার ডেমোগরগ্যান দেখার দৃশ্যটি ছিল দুর্দান্ত। ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ যত এগিয়েছে, ক্লিফহ্যাঙারও তত তীব্র হয়েছে। দ্বিতীয় মৌসুমে যেমন মাইক আবিষ্কার করে যে উইল আসলে ‘স্পাই’।
সিরিজটির এত জনপ্রিয়তার পেছনে বড় একটি ভূমিকা রেখেছে মিম সংস্কৃতি। এক মৌসুম থেকে আরেক মৌসুমের মাঝের সময়ে ভক্তরা বিভিন্ন মিম তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দিয়েছেন, যা সিরিজটিকে সতেজ রেখেছে।
এই সিরিজের ছবি ও সংলাপ দিয়ে অসংখ্য জনপ্রিয় মিম তৈরি হয়েছে। জয়েস বায়ার্সের মুখের অভিব্যক্তি কিংবা ‘ড্যাড’ হিসেবে স্টিভের (জো কিরি) আচরণ—এসব নিয়মিতই মিমে দেখা যায়।
‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর জনপ্রিয়তার আরেকটি বড় কারণ চরিত্রগুলোর বিকাশ। স্টিভ হারিংটন এর অন্যতম বড় উদাহরণ। সে শুরুতে ছিল অহংকারী; ধীরে ধীরে সে বদলে যায়, ডাস্টিন ও তার বন্ধুদের জন্য হয়ে ওঠে রক্ষাকবচ। এই পরিবর্তন দর্শকদের স্টিভের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত করে।
ন্যান্সি হুইলারও তেমনই একটি চরিত্র। সে যখন শুরু করে, তখন সে এক সাধারণ স্কুলছাত্রী, যে বন্ধুদের স্বীকৃতি পেতে মরিয়া। ধীরে ধীরে সে হয়ে ওঠে সাহসী, বুদ্ধিমান এক তরুণী, যে হকিন্সের সবচেয়ে বড় রহস্যগুলো উন্মোচন করে।
আমাদের এ ধরনের জীবন–অভিজ্ঞতা আর কারও নেই কিন্তু “হ্যারি পটার” ছবির অভিনেতাদের ছাড়া। তারা যেভাবে সেটে বড় হয়েছে, আমাদের অভিজ্ঞতা ঠিক তেমনই। একদিন তাদের সঙ্গে বসে গল্প করতে চাই।
‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ যেন এক উথালপাতাল আবেগের নাম। একটি চরিত্রের মৃত্যু দর্শকদের হৃদয় ভেঙে দেয়। প্রথম মৌসুমের শেষে ইলেভেনের আত্মত্যাগ এবং তৃতীয় মৌসুমে হপারের আত্মত্যাগের দৃশ্যগুলো দর্শকদের প্রবল আবেগে ভাসিয়েছে। তবে কেবল দুঃখ নয়, আনন্দের মুহূর্তও আছে। যেমন দ্বিতীয় মৌসুমে ইলেভেনের ফিরে আসা এবং মাইক ও অন্যদের সঙ্গে পুনর্মিলনের দৃশ্য কি ভোলা সম্ভব!
স্টিফেন কিংয়ের লেখা পড়তে কে না ভালোবাসে। আর ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর পরতে পরতে তাঁর প্রভাব স্পষ্ট। হকিন্স, ইন্ডিয়ানা—ছোট এক শান্ত শহর, যেটার বাইরে থেকে সবকিছু স্বাভাবিক, কিন্তু ভেতরে লুকিয়ে আছে অন্ধকার—এ ধারণা স্টিফেন কিংয়ের গল্পের মতোই। দানব, কিশোরদের অ্যাডভেঞ্চার, অশুভ শক্তির দ্বারা প্রভাবিত চরিত্র, ভালো-মন্দের দ্বন্দ্ব ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর এসব উপাদান স্টিফেন কিংয়ের বহু গল্পেই দেখা যায়। এটা সিরিজটিকে বিশ্বজুড়ে দর্শকের আরও কাছাকাছি নিয়ে গেছে।
একসঙ্গে বড় হওয়া
দর্শকদের মতো সিরিজটির অভিনয়শিল্পীরাও কার্যত বড় হয়েছে ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর সেটে। একসঙ্গে ১০ বছর কাটানো, খুব কম সিরিজের শিল্পীদের পক্ষেই সম্ভব হয়। মাইক চরিত্রে অভিনয় করা ফিন উলফহার্ড যেমন বলছিলেন, ‘আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমরা শেষ পর্বের শুটিং করে ফেলেছি। মনে হচ্ছে, এই তো কবে যেন শুরু করলাম।’
উইল চরিত্রের নোয়া শ্নাপ যোগ করেন, ‘আমাদের এ ধরনের জীবন–অভিজ্ঞতা আর কারও নেই কিন্তু “হ্যারি পটার” ছবির অভিনেতাদের ছাড়া। তারা যেভাবে সেটে বড় হয়েছে, আমাদের অভিজ্ঞতা ঠিক তেমনই। একদিন তাদের সঙ্গে বসে গল্প করতে চাই।’
শো-রানার মাট ও রস ডাফারকে কেউ চিনত না। স্রেফ একটি সিরিজ দিয়েই বাজিমাত করেছেন দুই ভাই। স্টিভেন স্পিলবার্গ ও স্টিফেন কিংয়ের প্রেরণা নিয়ে, তারা বলতে চেয়েছিলেন এমন এক গল্প, যেখানে শিশুরাই কেন্দ্রীয় চরিত্র। শুরুতে অভিনেতারা কল্পনাও করতে পারেননি যে লাখ লাখ মানুষের নজর তাঁদের দিকে থাকবে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার ঝড় উঠবে।
উলফহার্ড বলেন, ১৩ বছর বয়সে হঠাৎ সবাই চিনে ফেলবে, এটা ছিল অবিশ্বাস্য আর ভয়াবহ এক অভিজ্ঞতা। ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর শিশুরা আর আর কেউ শিশু নেই। এল চরিত্রে অভিনয় করা মিলি ববি ব্রাউনের বয়স এখন ২১; বিয়েও সেরে নিয়েছেন। শ্নাপও ২১; কিছুদিনের মধ্যেই কলেজ শেষ করবেন, গেটন ম্যাটার্যাজো ও স্যাডি সিঙ্ক ২৩, উলফহার্ড ২২ আর ম্যাকলাফলিনের বয়স ২৪। উইল (নোয়া শ্ন্যাপ), লুকাস (কেলেব ম্যাকলখলিন) আর ডাস্টিন (গেটন ম্যাটার্যাজো) চরিত্রের বয়সের তুলনায় অভিনেতাদের বয়স বেশি, এই সমালোচনায় পাত্তা দিতে চান না ডাফার ভ্রাতৃদ্বয়। তাঁরা মনে করেন, অভিনয়শিল্পীদের বদল করলে সিরিজটির সঙ্গে দর্শকের একাত্মতা কমে যেতে পারে।
সিরিজটি প্রিমিয়ারের সময় প্রায় তিন মিনিটের জন্য বন্ধ ছিল সেবা, এখনো কিছু ব্যবহারকারী নানা ধরনের প্রযুক্তিগত ত্রুটির মুখোমুখি হচ্ছেন। সিরিজটি দেখতে গেলেই পর্দায় লেখা উঠছে, ‘কিছু একটা ভুল হয়েছে। দুঃখিত।’ তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।
অভিনয়শিল্পীরা জানান, প্রতি মৌসুমের শুটিং করতে একসঙ্গে অনেকটা সময় থাকতে হয়েছে। কোনো কোনো মৌসুমের শুটিং হয়েছে ৪৮ সপ্তাহ ধরে। একসঙ্গে জন্মদিন, থ্যাঙ্কসগিভিং ও অন্যান্য উৎসব উদ্যাপন করেছেন তাঁরা।
স্যাডি সিঙ্ক বলেন, ‘আমরা ভিডিও গেম খেলতাম, ফিন একবার কানাডিয়ান থ্যাঙ্কসগিভিং সঞ্চালনা করেছিল। সপ্তাহের ছুটিতে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো দুর্দান্ত ছিল।’ ম্যাকলাফলিন যোগ করেন, ‘আমরা একসঙ্গে থাকলে আবার ছোটবেলার মতো মজা করি। আমরা একসঙ্গে বড় হয়েছি।’
তবে সবার জন্য সবচেয়ে কঠিন ছিল শেষ দিনের শুটিং। ম্যাকলাফলিন বলেন, ‘আমি অনেক কেঁদেছি, কিন্তু তা আনন্দের অশ্রু।’ স্যাডি বলেন, ‘এই ঘোর থেকে বের হতে অনেক সময় লেগেছে, কিন্তু পরে মানিয়ে নিয়েছি। কারণ, এই সিরিজ থেকে যা কিছু পেয়েছি, দুর্দান্ত। তবে সবকিছুরই শেষ আছে, আমাদেরও সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’
কোন পর্ব কবে
‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর পঞ্চম মৌসুম মুক্তি পাচ্ছে তিন কিস্তিতে। বাংলাদেশ সময় গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে এসেছে প্রথম চার পর্ব। বাকি তিন পর্ব আসবে বড়দিনে, ২৫ ডিসেম্বর। শেষ মৌসুমের শেষ পর্ব মুক্তি পাবে ৩১ ডিসেম্বর।
সার্ভার ক্র্যাশ
যে সিরিজ নিয়ে এত আগ্রহ, সেটা মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বজুড়ে দর্শকেরা যে মুখিয়ে থাকবেন, সে আর আশ্চর্য কী। বাড়তি দর্শকের চাপে নেটফ্লিক্সের সার্ভার পর্যন্ত ক্র্যাশ করেছে! যা নিয়ে অনেকে মজা করে বলছেন, নেটফ্লিক্সকেই এবার টেনে নিয়ে গেল ‘আপসাইড ডাউন’।
ভ্যারাইটি জানায়, সিরিজটি প্রিমিয়ারের সময় প্রায় তিন মিনিটের জন্য বন্ধ ছিল সেবা, এখনো কিছু ব্যবহারকারী নানা ধরনের প্রযুক্তিগত ত্রুটির মুখোমুখি হচ্ছেন। সিরিজটি দেখতে গেলেই পর্দায় লেখা উঠছে, ‘কিছু একটা ভুল হয়েছে। দুঃখিত।’ তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। এর আগে ২০২২ সালের জুলাইয়ে চতুর্থ মৌসুমের শেষ দুটি পর্ব যখন একসঙ্গে মুক্তি পায়, তখনো নেটফ্লিক্স কিছু সময়ের জন্য অকার্যকর হয়ে পড়ে।
কেমন হলো পঞ্চম মৌসুম
‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’-এর পঞ্চম মৌসুমের প্রথম কিস্তি মুক্তির পরই প্রথম চার পর্বের রিভিউ প্রকাশ করেছে ভ্যারাইটি, বিবিসিসহ অন্যান্য গণমাধ্যম। এবার গল্প শুরু হচ্ছে চতুর্থ মৌসুমের ঘটনার ১৮ মাস পর। সেই মৌসুমের শেষে খলনায়ক ভেকনা (জেমি ক্যাম্পবেল বাওয়ার) বাস্তব জগৎ আর ‘আপসাইড ডাউন’-এর অতিপ্রাকৃত সীমারেখা ভেঙে দিয়েছিল। আর সবকিছুর শুরু হয়েছিল তারও চার বছর আগে, ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে, প্রথম মৌসুমে।
ভ্যারাইটি এবারের মৌসুম নিয়ে লিখেছেন, ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ তারকাদের পরিণত হয়ে ওঠাকে গল্পের গভীরতায় রূপান্তর করতে পারেনি। পুরো সিরিজটাই নস্টালজিয়ার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। পঞ্চম সিজনে এসে মনে হয়, শোটি শুধু যে ১৯৮০-এর নিয়ন রং আর পপ সংগীতের সময়কে মনে করাচ্ছে। পঞ্চম মৌসুম আগের তুলনায় ভৌগোলিকভাবে বেশি কেন্দ্রীভূত। ফলে চতুর্থ মৌসুমের মতো অকারণ লম্বা পর্ব নেই। কিন্তু হকিন্সে ফিরে আসায় সেটআপগুলোর পরিচিত ছক আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ভ্যারাইটি এবারের মৌসুম নিয়ে আরও লিখেছে, ‘আগের মৌসুমে আমরা জেনে গিয়েছিলাম, ভেকনাই ‘আপসাইড ডাউন’কে নিয়ন্ত্রণ করে এবং হাইভ-মাইন্ডের মতো করে তার বাসিন্দাদের নিয়ন্ত্রণ করে। পঞ্চম মৌসুম এখনো এই জগতের নিয়মকানুন বা তাৎপর্য নিয়ে নতুন কিছু যোগ করেনি। শুধু স্কেল বড় হয়েছে, দৃষ্টিভঙ্গি নয়।
বিবিসি এবারের মৌসুম নিয়ে লিখেছে, শেষ মৌসুমের প্রথম চারটি পর্ব দেখে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলছে যে দর্শকদের জন্য অপেক্ষা করছে এক ‘অল-টাইম গ্রেট’ সমাপ্তি। আজ মুক্তি পাওয়া প্রথম চার পর্বে তাদের লক্ষ্য পরিষ্কার; সেই পচে যাওয়া দানবকে সম্পূর্ণ মেরে ফেলে চিরতরে শেষ করে দেওয়া।
কথাটা যত সহজ, বাস্তবতা তত কঠিন। এবার নতুন এক মানব শত্রু হাজির হয়েছে—ডক্টর কে (লিন্ডা হ্যামিল্টন), যে সামরিক বিজ্ঞানী আর ইলেভেনকে ধরার জন্য মরিয়া। এই সবকিছুই ঘটছে এমন এক সময়ে, যখন আগের মৌসুম শেষে আপসাইড ডাউন পুরোপুরি ফেটে যাওয়ার পর শহরটি সামরিক নিয়ন্ত্রণে ও কোয়ারেন্টিনে রয়েছে।
বিবিসি আরও লিখেছে, প্রথম চারটি পর্বে বহু পুরোনো রহস্যের উত্তরও পাওয়া শুরু হয়। ভক্তরা নিশ্চয়ই খুশি হবেন, কারণ ডাফার ব্রাদার্স আবার ফিরে গেছেন প্রথম মৌসুমের দৃশ্যে; গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে শুরু করেছেন—বিশেষ করে কে প্রথম উইলকে অপহরণ করেছিল, কেন করেছিল। আর যদি এটিই ডাফার ব্রাদার্সের পরিকল্পিত সমাপ্তির পূর্বাভাস হয়, তাহলে দর্শকেরা নিশ্চিতভাবেই পাচ্ছেন টেলিভিশনের ইতিহাসে অন্যতম সেরা সমাপ্তি।
বিবিসি, ভ্যারাইটি, স্ক্রিন র্যান্ট, আইএমডিবি ও টাইম অবলম্বনে