নারীপ্রধান চরিত্রে তিন তরুণের বাজিমাত

বাংলাদেশের সিনেমা কিংবা টেলিভিশনে নারীপ্রধান গল্প খুব বেশি হয় না। তবে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির অ্যানথোলজি সিনেমা এই মুহূর্তে ব্যতিক্রম। সিনেমার তিন নারী চরিত্র যেন সমসাময়িক বাস্তব ঘটনা থেকে উঠে আসা তিনটি চরিত্র। ‘এই মুহূর্তে’র তিন গল্পে সারা যাকের, জাহিদ হাসান, শহীদুজ্জামান সেলিম, রোজী সিদ্দিকীদের পাশাপাশি বাজিমাত করেছেন তিন তরুণ অভিনেত্রী প্রিয়ন্তী উর্বী, তানজিম সাইয়ারা তটিনী ও তাসলিমা নদী। ক্যারিয়ারের শুরুতেই নারীকেন্দ্রিক গল্প দিয়ে আলোচনায় এসে খুশি তাঁরা।

সিরিজের ‘কোথায় পালাবে বলো রূপবান’–এ রূপবান চরিত্রে সাবলীল অভিনয় করেছেন প্রিয়ন্তী উর্বী। শুরুতেই দেখা যায়, সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানকে বাঁচানোর জন্য একটি হাসপাতাল থেকে পালাচ্ছে রূপবান। সন্তান বাঁচাতে হলে শহর থেকে পালাতে হবে তাকে। কিন্তু পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে সে। দুশ্চিন্তাগ্রস্ত, মানসিকভাবে ভেঙে পড়া এক মায়ের চরিত্র পর্দায় তুলে ধরা সহজ নয়। কিন্তু কঠিন পরীক্ষায় ভালোভাবেই উতরে গিয়েছেন উর্বী। চরিত্রটি দিয়ে প্রথম কোনো সিনেমার প্রধান চরিত্রে অভিনয় করলেন তিনি। চরিত্রটিতে সুযোগ পাওয়ার পর থেকে নার্ভাস ছিলেন উর্বী। কারণ, তাঁর কাছে ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিল চরিত্রটি। এ জন্য তিন মাস কাজটির পেছনে সময় দিয়েছেন।

এই তরুণ অভিনেত্রী বলেন, ‘পরিচালক মেজবাউর রহমান সুমন ভাই চরিত্রটি নিয়ে অনেকবার গ্রুমিং করিয়েছেন। আমি খুবই সিরিয়াস ছিলাম। দেখার পর হয়তো সবাই বুঝতে পেরেছেন, আমি অভিনয়টা করতে চাই। নারীপ্রধান চরিত্র দিয়ে আলোচনায় থাকতে পারা জন্য অন্য রকম অনুভূতি।’

ঊর্বি

‘এই মুহূর্তে’র দ্বিতীয় গল্প ‘ওয়ান পিস মেড কারিগর ইজ ডেড’ শহরের এক গায়িকাকে ঘিরে। কে সেই গায়িকা, সেটা কেউ জানে না। কিন্তু তাকে ঘিরেই এক পরিবারে ঘটতে থাকে মজার সব ঘটনা। কারণ, এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সেই গায়িকার একটি নাচের ভিডিও রয়েছে এই বাসায়। সেই ভিডিওর খোঁজে প্রভাবশালী সেই ব্যবসায়ীর বাসায় তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। এরপর শুরু হয় উদ্ভট সব কাণ্ড। আবরার আতহার পরিচালিত এই ছবিতে অভিনয় করে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন তাসলিমা নদী। কথার শুরুতেই তিনি বলেন, ‘বহুমাত্রিক চরিত্রটিতে অভিনয়ের সুযোগ ছিল। সে কারণেই দর্শকদের কাছে পৌঁছাতে পেরেছি। সংলাপের গাঁথুনির কারণে এই গল্প মঞ্চনাটকের মতো মনে হয়েছে। যা আমার কিছুটা হলেও সুবিধা করে দিয়েছে।’ চরকিতে প্রচারের পর থেকে দর্শকদের কাছ থেকে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন তিনি। কেউ বলেছেন, ‘নদীকে দেখে মনে হচ্ছিল পুরো ঘরটা একটা রঙ্গমঞ্চের মতো ব্যবহার করছে সে।’

যদিও শুরুতে অভিনেত্রী চিন্তায় ছিলেন সিনিয়রদের পাশে কীভাবে অভিনয় করবেন। নদী বলেন, ‘অভিজ্ঞদের পাশে সমানতালে কীভাবে অভিনয় করব, সেটা নিয়ে ভয়ের মধ্যে ছিলাম। পরে তাঁদের সঙ্গে রিহার্সেল, কথা বলার মাধ্যমে নার্ভাসনেস কমানোর চেষ্টা করেছি। সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার নারীর সংখ্যা কম নয়। সেই জায়গা থেকে এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্র আমার জন্য দরকার ছিল।’

নদী

‘এই মুহূর্তে’র শেষ গল্পটি ছিল বিনা অনুমতিতে এক প্রেমিক দম্পতির ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করা নিয়ে। যা মেয়েটির জীবনে বড় দুর্ভোগ নিয়ে আসে। একপর্যায়ে সে মুখোমুখি হয় সেই আলোকচিত্রীর।
সিনেমাটির তিনটি ঘটনাই এই শহরের তিন নারীকে ঘিরে। যে ঘটনাগুলো শহরে বিভিন্ন সময় ঘটতে দেখা গেছে। ‘এই মুহূর্তে’ মূলত পর্দায় সেই ঘটনাগুলোর মনস্তাত্ত্বিক রূপায়ণ। সিরিজটি প্রচারের পর অনেকটাই বদলে গেছে তিন অভিনেত্রীর জীবন।

তটিনী

এই যেমন তটিনীর কথাই ধরা যাক। হঠাৎ যেন তাঁর নামটা বদলে গেছে। এখন শুধু পরিবারের সদস্য বা বন্ধুরাই নন, শুটিং গেলেও তাঁকে ডাকা হচ্ছে কল্পনা নামে। এই কল্পনা এই মুহূর্তের তৃতীয় গল্প কল্পনার প্রধান চরিত্র। চরিত্রটি তাঁকে এতটা জনপ্রিয়তা দেবে, ভাবেননি এই অভিনেত্রী। ভাবেননি পিপলু আর খানের পরিচালনায় এত বড় সুযোগ পাওয়ার কথাও। অডিশন আগে দিলেও শুটিংয়ের ঠিক আগের দিন তাঁর ডাক পড়ে। সারা যাকের, জাহিদ হাসানদের মতো শিল্পীদের সঙ্গে সমানতালে অভিনয় করেছেন তিনি। তটিনী বলেন, ‘নারীকেন্দ্রিক চরিত্র দিয়ে দর্শকদের কাছে এতটা সাড়া পেয়েছি, এটা অবশ্যই ভালো অনুভূতি। একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের সংগ্রাম যতটুকু সম্ভব ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি। এটা আমার জন্য বড় একটা সুযোগ ছিল। এমন শক্তিশালী একটা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়।’