রাত কাটাতে হোটেলে প্রেমিক যুগল, এরপর...
তারা কেবল একসঙ্গে থাকতে চেয়েছিল! কিন্তু এ অঞ্চলে প্রাপ্তবয়স্ক প্রেমিক যুগল একসঙ্গে থাকতে চাইলেই কি পারে? পিতৃতন্ত্র, শ্রেণিবৈষম্য, দুর্নীতিপরায়ণ রাজনীতিবিদ, ভাইরাল হওয়ার নেশায় পাওয়া মিডিয়া কি প্রেমিক যুগলকে মেনে নেয়? শেষ পর্বে তাই প্রেমিকের অসহায় আর্তি, ‘আমরা তো কেবল একসঙ্গেই থাকতে চেয়েছিলাম’ হাহাকারের মতো শোনায়। প্রেমের গল্প নতুন কিছু নয়। কিন্তু সেই প্রেম যখন শ্রেণি, জাত ও সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তখন তা নতুন করে দেখার সুযোগ তৈরি করে।
একনজরে
ওয়েব সিরিজ: ‘ব্ল্যাক, হোয়াইট অ্যান্ড গ্রে: লাভ কিলস’
ধরন: থ্রিলার, ড্রামা
স্ট্রিমিং: সনি লিভ
পরিচালনা: পুরস্কার সুনীল মহাবল
অভিনয়ে: ময়ূর মোরে, দেবিন ভোজানি, তিগমাংশু ধুলিয়া ও পলক জাসওয়াল
পর্ব সংখ্যা: ৬
রানটাইম: ৪৩-৪৫ মিনিট
মার্ডার মিস্ট্রি, থ্রিলার ঘরানার সিনেমা-সিরিজ ফি সপ্তাহেই ওটিটিতে মুক্তি পায়। তবে এ ধরনের এন্তার কনটেন্টের মধ্যে থেকে সনি লিভের নতুন সিরিজ ‘ব্ল্যাক, হোয়াইট অ্যান্ড গ্রে: লাভ কিলস’কে আলাদা করে মনে রাখতেই হবে। নির্মাণে অভিনবত্বের সঙ্গে ভারতীয় সমাজব্যবস্থার নানা সংকটকে পর্দায় যেভাবে হাজির করেছেন, সে জন্য নির্মাতার তারিফ করতেই হয়।
বিশদে আলোচনার আগে সিরিজের গল্প নিয়ে কিছু বলা যাক। অতি ক্ষমতাধর এক রাজনীতিবিদের মেয়ের প্রেম হয় তার ড্রাইভারের ছেলে সঙ্গে। এক রাতে ঘর থেকে পালায় দুজন। উদ্দেশ্য শহরের উপকণ্ঠে এক হোটেলে রাত্রিযাপন। কিন্তু সে রাতেই পুলিশ হানা দেয় হোটেলে। শুরু হয় প্রেমিক-প্রেমিকার ‘পলাতক জীবন’।
অন্যদিকে নাগপুর শহরে চারটি রহস্যময় খুন। অভিযুক্ত সেই পলাতক প্রেমিক। তদন্তে নামেন বিদেশি সাংবাদিক ড্যানিয়েল গ্রে। অমীমাংসিত হত্যারহস্য নিয়ে তথ্যচিত্র বানান তিনি। এই কেস নিয়ে তিনি যত সামনে এগোতে থাকেন, ততই বুঝতে পারেন এটা কোনো সাধারণ অপরাধের ঘটনা নয়। উঠে আসে পিতৃতন্ত্র, রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার আর সমাজব্যবস্থার জটিল অন্ধকার দিক—পুরোপুরি সাদা-কালো বলে কিছু নেই; আছে এক ধূসর জগৎ।
সিরিজটি শুরুতেই চমকে দেয় নির্মাণশৈলীতে। গল্প বলার দুই ভাগ, একটা তথ্যচিত্রের আদলে; অন্যটি ফিকশন। মকুমেন্টরি স্টাইলে নির্মিত সিরিজটি দেখতে দেখতে ট্রু ক্রাইম সিরিজের কথা মনে পড়ে। এখানে অভিযুক্ত, তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা, অভিযুক্তের পরিবারসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বয়ান দেখানো হয়েছে তথ্যচিত্রের মতো করে, সমান্তরালে চলে মূল ঘটনা; যেটি নির্মিত হয়েছে ফিকশনের আদলে। এই দুইয়ের মিশ্রণ বেশ ভালোভাবেই করতে পেরেছেন নির্মাতা; তাই সিরিজটি হয়ে উঠেছে বাস্তবসম্মত। বাণিজ্যিক মসলা আর চটকদার চমক ছাড়াই ‘ব্ল্যাক, হোয়াইট অ্যান্ড গ্রে: লাভ কিলস’ আপনাকে পর্দায় আটকে রাখে।
প্রায় কোনো চেনা মুখ ছাড়াই সিরিজটি বানিয়েছেন নির্মাতা। কিন্তু কাস্টিং নিখুঁত, বিশেষত তথ্যচিত্রের আদলে তৈরি অংশটিতে অভিনয়শিল্পীরা অবিশ্বাস্য অভিনয় করেছেন। বিশেষ করে পুলিশ অভিসার চৌহান চরিত্রে নির্মাতা তিগমাংশু বেশ ভালো। নারী পুলিশ কনস্টেবলের চরিত্রে যিনি ছিলেন, তিনিও যথাযথ। শেষের দিকে তাঁর বয়ানে পুলিশ বাহিনীতে নারী সদস্যদের নিয়েও বক্তব্য দিয়েছেন নির্মাতা; যেটা একেবারেই আরোপিত মনে হয়নি। ফিকশন অংশে প্রধান অভিযুক্তের চরিত্রে ময়ূর মোরে ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা পারফরম্যান্স উপহার দিয়েছেন। ‘কোটা ফ্যাক্টরি’র এই অভিনেতাকে নির্মাতারা যে এমন একটি চরিত্রে ভেবেছেন; সেটাও বড় ব্যাপার। তাঁর প্রেমিকার চরিত্রে পলক জাসওয়াল মন্দ নন।
ছয় পর্বের সিরিজটিতে গণমাধ্যমকে ব্যঙ্গ করতে গিয়ে একটু বেশিই করে ফেলেছেন নির্মাতা, এটা ছাড়া ‘ব্ল্যাক, হোয়াইট অ্যান্ড গ্রে: লাভ কিলস’ জমে যায় পুরোপুরি। তবে সিরিজটি কিন্তু একটু ধীরগতির। তারিয়ে তারিয়ে যাঁরা ভালো কাজ উপভোগ করতে চান, এই ‘নিষিদ্ধ প্রেমের গল্প’ তাঁদের জন্যই।
সিরিজের শেষটাও দারুণ। আস্তিনের তলায় লুকিয়ে রাখা চমকটাও মন্দ নয়। তবে নির্মাতা কোনো উপসংহার টানেননি। ওই যে পুরোপুরি সাদা বা পুরোপুরি কালো বলে কিছু নেই; সেই ‘ধূসর দুনিয়া’ দর্শকদের আবিষ্কারের জন্যই রেখে দিয়েছেন তিনি।