মরিচঝাঁপির ধুলা সরাল ‘ফেউ’
‘ফেউ ’ নিয়ে দর্শকের আগ্রহ দেখা গেছে সপ্তাহখানেক আগে, ট্রেলার মুক্তির পরই। গত বুধবার রাতে মুক্তির পর চরকি অরিজিনালস সিরিজটি নিয়ে চলছে আলোচনা। কেউ অভিনয়ের মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন, কেউ কারিগরি দিক নিয়েও কথা বলেছেন। এদিকে দীর্ঘদিন পর ওটিটিতে চঞ্চল চৌধুরীকে পেয়ে তাঁর ভক্তরা খুশি, এমন কথাও জানিয়েছেন তাঁরা।
‘ফেউ’ সিরিজের কয়েকটি সংলাপ নিয়েও কথাবার্তা হচ্ছে। এসবের মধ্যে ‘রিফিউজি গো দ্যাশ–জাত বলে কিছু আছে নাকি?’ এমন সংলাপ যেমন আছে, তেমনি ‘অত্যাচারের কথা সারা দুনিয়ার বুঝমান সমস্ত মানুষকে জানাতি হবি,’ এ ধরনের সংলাপও রয়েছে। সিরিজের এসব সংলাপের মধ্যে গল্প সম্পর্কে ধারণাও মেলে।
গল্পটি দর্শকদের ভিন্ন দুটি সময়ের মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়, যার একটি ১৯৭৯ সালের, অন্যটি ২০০২–এর।
১৯৭৯ সালের জানুয়ারি থেকে মে মাসে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ পরগনা জেলার মরিচঝাঁপিতে ঘটে যাওয়া গণহত্যার পটভূমিতে সিরিজটি গড়ে উঠেছে। ইতিহাসের ধুলা জমে যাওয়া অধ্যায় নিয়ে সিরিজটি নির্মাণের জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন সমালোচকেরা।
তারিক আনাম খান, চঞ্চল চৌধুরী, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ছাড়াও ‘ফেউ’-এ দেখা গেছে তাহমিনা অথৈ, রিজভী রিজুকে। নির্মাতা জানিয়েছেন, সিরিজের সব চরিত্রই রাজনৈতিক; নিজের দেখা খুলনা-সুন্দরবন অঞ্চলের রাজনৈতিক গল্পটাই বলতে চেয়েছেন তিনি।
সুকর্ণ শাহেদ ধীমানের ভাষ্যে, ‘সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা একটি ফিকশনাল গল্প বলতে চেয়েছি। যেখানে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতি ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে।’
সিরিজটির ট্রেলারে দেখা গিয়েছিল, অস্তমিত সূর্যের আলোয় এক যুবক ছুটছে নৌকা নিয়ে, একা। তার এই ছুটে চলা কিসের জন্য, তা বোঝা যায় সংলাপের মধ্য দিয়ে। সংলাপে সে তার বাবা বেঁচে আছে না মারা গেছে, সেই কথা জানতে চায়। মূলত এই প্রশ্ন থেকেই গল্পের ভেতর ঢুকতে থাকে ড্যানিয়েল; অর্থাৎ নৌকায় থাকা ছেলেটি। ড্যানিয়েলের সঙ্গে সেই যাত্রায় পাওয়া যায় তার বন্ধু সোহেলকে। তাঁরা যত এগিয়ে যেতে থাকে, ততই বেরিয়ে আসতে থাকে চাপা পড়ে থাকা ইতিহাস।
ড্যানিয়েল চরিত্রে অভিনয় করেছেন তানভীর অপূর্ব ও সোহেল চরিত্রে আছেন হোসাইন জীবন। এই দুই তরুণের কাঁধে বড় দায়িত্ব দিয়েছেন পরিচালক। তাঁরা সেটা বেশ ভালোভাবেই পালন করেছেন বলে মনে করেন নির্মাতা। দুজনেই লেখাপড়া করছেন, যুক্ত আছেন অভিনয়ের সঙ্গে। পরীক্ষা–নিরীক্ষার পরই সুযোগ পেয়েছেন দুজন।
তানভীর অপূর্ব বলেন, ‘জীবনের শুরুতে এ রকম একটা কাজের অভিজ্ঞতা দরকার ছিল। একজন অভিনেতা নয়, বরং ইউনিটের একজন হয়ে কাজটি করেছি। দুর্গম লোকেশনে গিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এমন অনেক কিছু করেছি, যা ছিল আমার জন্য প্রথমবার।’
হোসাইন জীবন বলেন, ‘সিরিজে অভিনয়ের প্রস্তুতি হিসেবে আমাদের সেলসম্যানের কাজ করতে হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। বিক্রেতা হিসেবে কাজ করে আমরা নিজেদের নানা রকম সীমাবদ্ধতা উতরে গেছি। খুলনা অঞ্চলের কথা বলার ঢং শিখেছি আমরা। সব মিলিয়ে এই কাজের অভিজ্ঞতা আমার সব সময়ের জন্য কাজে লাগবে।’
সিরিজে কাজি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তারিক আনাম খান, যিনি এলাকায় প্রভাবশালী একজন মানুষ। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
কথা প্রসঙ্গে তারিক আনাম খান জানান, খুলনা অঞ্চলে তাঁর জন্ম–বেড়ে ওঠা হলেও কখনো সুন্দরবন দেখেননি। এবারই প্রথম তিনি সুন্দরবনের একদম ভেতরে গিয়ে শুটিং করেছেন। অভিনেতা বলেন, ‘শুটিংয়ের সময় আমাকে দেখে সেখানকার অনেকে দেখতে এসেছেন। কেউ ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছেন। শুটিংয়ের ফাঁকে জন্মস্থানের সাধারণ মানুষদের সঙ্গে কয়েকটা দিন কাটাতে পেরে খুব ভালো লেগেছে।’
চঞ্চল চৌধুরী অভিনয় করেছেন সুনীল চরিত্রে, যিনি একজন ফটোগ্রাফার। চঞ্চল তাঁর শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা যখন শুটিং করেছি, তখন ছিল প্রচণ্ড ঠান্ডা। মাসখানেক সুন্দরবনে শুটিং হয়েছে, এর মধ্যে আমি ছিলাম ২০ দিনের বেশি। রাতে যখন লঞ্চে ঘুমাতাম, খুব ঠান্ডা লাগত। আমি শীতের জামাকাপড় পরেই ঘুমাতাম। তবে ঠান্ডার চেয়ে ভয়ের বিষয় ছিল কুমির। আমাদের লঞ্চ যেখানে নোঙর করা ছিল, সেখানে ছিল কুমির। সকালে জানালা দিয়ে মুখ বের করলেই কুমিরসহ বিভিন্ন পশুপাখি দেখা যেত। আমরা লঞ্চ থেকে শুটিং স্পটে যেতাম ছোট ছোট ট্রলারে। রাতেও শুটিং করতে হতো। খুব কঠিন পরিস্থিতি ছিল।’
মার্শাল চরিত্রে অন্য রকম লুকে দেখা গেছে মোস্তাফিজুর নূর ইমরানকে। চরিত্রটি ও সিরিজের জন্য দেড় বছর সময় নিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গল্প ও মার্শাল চরিত্র নিয়ে এতটাই উচ্ছ্বসিত ছিলাম, তৈরি হতে কত সময় লাগবে বা কী হবে, সেসব মাথায় আনিনি বা ভাবিনি। আমাদের শুটিং সুন্দরবনে হয়েছে। সেখানকার একজন মানুষের শারীরিক ভাষা, দর্শন আরও ডিটেইল কীভাবে করা যায়, সেগুলোর প্রস্তুতি নিয়েছি। চুল-দাড়ি বড় করতে হয়েছিল। এটা তো দেখা যায়, কিন্তু ভেতরে একরকম প্রস্তুতি নিতে হয়, যেটা দেখা যায় না।’
দেখার পর অনেক দর্শক মনে করছেন, সিরিজটির হয়তো দ্বিতীয় মৌসুম আসবে। তবে প্ল্যাটফর্মটি থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি।