চার বন্ধুর ফিল্ম নোয়া

ওটিটির অঙ্গনে আলোচিত এক নাম ফিল্ম নোয়া। জনপ্রিয়তা পেয়েছে তাঁদের তাকদীর, ঊনলৌকিক, কারাগার, জাগো বাহেসহ একাধিক প্রোডাকশন। সৈয়দ আহমদ শাওকী, সৈয়দ সালেহ আহমেদ, রেহমান সোবহান ও হাসনাইন তসলিমের হাতে গড়ে ওঠা প্রোডাকশন হাউসটির গল্প শুনলেন মনজুরুল আলম

কৈশোর থেকেই তাঁদের সিনেমার প্রতি টানকোলাজ

তাঁরা চারজনই খুব কাছের বন্ধু। শৈশব থেকে একই সঙ্গে তাঁদের বেড়ে ওঠা। কৈশোর থেকেই তাঁদের সিনেমার প্রতি টান। পড়াশোনার পাশাপাশি তাঁরা খুঁজে বের করেন পথের পাঁচালী, বাইসাইকেল থিভস, টোকিও স্টোরিসহ বিশ্বের সেরা সিনেমাগুলো। নিয়মিত ডিভিডি ভাগাভাগি করে তাঁরা দেখতে থাকেন এমন হাজারো ছবি। দেখে নিজেদের মধ্যে তাঁরা আলোচনা করেন। একদিন তাঁদের মনে হলো, কীভাবে সিনেমা বানায়, দেখতে হবে। চার বন্ধুর একজন সৈয়দ আহমদ শাওকী বলেন, ‘সিনেমা কীভাবে বানায়, সেটা দেখার ইচ্ছা থেকেই (কাইজারখ্যাত পরিচালক) তানিম নূরের অ্যাসিস্ট হিসেবে কাজ করি। একসময় মনে হলো, আমরা নিজেরাই কিছু বানিয়ে দেখি না কেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম ক্লাব থেকে শর্ট ফিল্ম বানাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইকোনমিকসে পড়ত অনিম (সৈয়দ সালেহ আহমেদ)। তার বিভাগের জন্য শর্ট ফিল্ম বানায়। আমরা সবাই নিজেদের ক্যামেরা, মোবাইল দিয়ে একসঙ্গেই কাজগুলো করতাম। এভাবে কাজ করতে করতে হঠাৎ একটি প্রফেশনাল কাজ পাই। তারা কাজের জন্য আমাদের চেক দেবে, কিন্তু কারও নামে দেবে না। তখন এই একটা কাজের জন্য আমরা ফিল্ম নোয়া নামে কোম্পানি ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলি। প্রথম কাজ করে টাকা পাই। তখনো কিন্তু ফিল্ম মেকিং নিয়ে সিরিয়াস ছিলাম না। আমরা সবাই চাকরি করতাম। মার্কেটের কাউকেই চিনতাম না। একসময় অনেক কাজ আসতে থাকে। আমরা চাকরি ছেড়ে দিয়ে কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই নির্মাণ শুরু করি।’

২০১৩ সালে গড়ে ওঠে ফিল্ম নোয়া। চলতে থাকে সিনেমা বানানো শেখা। ২০১৭ সালে প্রজন্ম টকিজের ১০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা বানিয়ে প্রথম আলোচনায় আসে ফিল্ম নোয়া। তাদের কাজ দেখে ডেকে ঈদনাটক বানাতে বলেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী, মেজবাউর রহমান সুমন। ‘অস্থির সময়ে স্বস্তির গল্প’ শিরোনামে ঈদের বিশেষ আয়োজনে কথা হবে তো? নাটক বানিয়ে প্রশংসা পায় ফিল্ম নোয়া। বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি নিয়মিত ফিকশন বানাতে থাকে তারা। সবই করতেন চারজন এক সত্তা হয়ে। নিজেদের কখনোই আলাদা ভাবতেন না। দীর্ঘ এক যুগ ধরে চার তরুণ নির্মাতা একসঙ্গে কাজ করছেন। টিমের একজন পরিচালনা করলে অন্যরা নির্বাহী প্রযোজক, সম্পাদনা, সিনেমাটোগ্রাফি; কেউ গল্প লিখে সহযোগিতা করেন।

একসঙ্গে কাজ করার ভাবনাটা কীভাবে এল, এমন প্রশ্নে রেহমান সোবহান বলেন, ‘আমরা সবাই মেকিং করলেও আমাদের চারজনের ইন্টারেস্ট ফিল্ড (আগ্রহের জায়গা) আলাদা। আমি ক্যামেরার কাজ, নির্মাণ, টেকনিক্যালি আরও কিছু বিষয় ভালো জানি। অনিম প্রডিউসিং-এডিটিং করে। মনে চাইলে ডিরেকশন দেয়। হাসনাইন তসলিম লেখালেখি করে। সবাইকে সবকিছু জানত হবে, এমন নয়। সব বিষয়ে সবার অল্প অল্প স্কিল থাকলে একত্রে একটি প্রজেক্ট ভালো হয়। এ কারণেই একসঙ্গে কাজ করা।’

শাওকী বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে এমনভাবে বেড়ে উঠেছি যে আলাদাভাবে এখানে কেউ ডিরেক্টর ছিল না। সবাই মিলেই কাজগুলো করতাম। চারজন মিলেই প্রডিউস করতাম, ডিরেকশন দিতাম; আর্ট ডিরেকশন, সিনেমাটোগ্রাফিসহ সব কাজ করতাম। আমাদের মূল কথাই হচ্ছে একে অন্যকে সহযোগিতা করা।’

বড় পরিসরে এই টিমের টার্নিং পয়েন্ট তাকদীর। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ঊনলৌকিক, জাগো বাহে, কারাগারসহ সব কাজেই প্রশংসা পেয়েছে। এ জন্য তাদের চ্যালেঞ্জ দিন দিন বাড়ছে। তবে কাজের মানে তারা কোনো ছাড় দিতে চায় না। সৈয়দ সালেহ আহমেদ বলেন, ‘আমরা প্রতিটা কাজের চিত্রনাট্য করতে ছয় মাস থেকে এক বছর সময় নিই। আমাদের চারজনেরই যে গল্পগুলো ইন্টারেস্টিং লাগে, সেগুলোই পিচ করি। সবকিছু মিললেই আমরা কাজ করি।’