করোনায় ঘরবন্দী এক অভিনেত্রী, এরপর...

‘জয়া আর শারমিন’–এর দৃশ। চরকির সৌজন্যে

করোনাভাইরাসের কথা উঠলেই আমাদের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। গৃহবন্দী জীবন, কেউ কারও পাশে নেই। এদিকে একের পর এক দুঃসংবাদ ভেসে আসছে টিভির পর্দায়। জীবন যেন থমকে দাঁড়িয়েছিল সে সময়। প্রকৃতির কাছে মানুষ কতটা অসহায়, প্রতিটি দিন যেন সেটাই জানান দিচ্ছিল। দুনিয়ার নানা প্রান্তে কঠিন সেই সময়ের দিনলিপি পর্দায় উঠে এলেও দেশের সিনেমা-সিরিজে সেভাবে কোভিডের গল্প উঠে আসেনি। এর মধ্যে ব্যতিক্রম পিপলু আর খানের ‘জয়া ও শারমিন’। চলতি বছরের ১৬ মে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর সিনেমাটি গত ২৬ সেপ্টেম্বর এসেছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকিতে।

একনজরে
সিনেমা: ‘জয়া আর শারমিন’
ধরন: ড্রামা
পরিচালক: পিপলু আর খান
চিত্রনাট্যকার: পিপলু আর খান, নুসরাত ইসলাম
অভিনয়: জয়া আহসান, মহসিনা আক্তার, তানজিম সাইয়ারা তটিনী
দৈর্ঘ্য: ১ ঘণ্টা ২৬ মিনিট

করোনাকালে গৃহবন্দী হয়ে পড়েন অভিনেত্রী জয়া (জয়া আহসান)। তাঁর সঙ্গে থাকে শুধুই তাঁর গৃহকর্মী শারমিন (মহসিনা আক্তার)। একসঙ্গে থাকতে থাকতে দুজন হয়ে ওঠেন একে অন্যের হাতিয়ার। জয়ার হাতে এ সময় আসে এমন একটি চিত্রনাট্য, যার গল্পও খুব বিষণ্ন। সদ্য মারা যাওয়া এক ব্যক্তির স্ত্রীর চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে হয় থাকে। জয়া যত গল্পের চরিত্রের ভেতর ঢুকতে থাকেন, তত যেন তাঁর জীবনটা হয়ে উঠতে শুরু করে সেই গল্পের মতো। করোনার বিভীষিকা, একাকিত্ব, অপরাধবোধ আর মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে দেখার অনুভূতি—এসবই একে একে ফুটে উঠেছে ‘জয়া আর শারমিন’ সিনেমায়।

‘জয়া আর শারমিন’ সিনেমায় জয়া আহসানই ছিলেন পর্দার অভিনেত্রী জয়া হিসেবে। আর তাঁর বাসার গৃহকর্মী হিসেবে অভিনয় করেছেন মহসিনা আক্তার। দুজনই পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছেন। পর্দায় তাঁদের গল্প, লুডু খেলা, মজার মজার রান্না করা দেখতে ভালোই লাগে। কিন্তু শারমিনের একাকিত্ব মহসিনা যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তা অনবদ্য। বিশেষত তাঁর ছেলে তানজুর সঙ্গে তাঁর কথোপকথন এবং শেষ দিকে অকপটে বলে ওঠা তাঁর জীবনের গল্পে মহসিনা বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি কতটা ভালো অভিনয়শিল্পী। উদ্যোক্তার ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন তানজিম সাইয়ারা তটিনী। তাঁর অভিনয়ও যথাযথ।

‘জয়া আর শারমিন’–এর দৃশ। চরকির সৌজন্যে

‘জয়া আর শারমিন’ সিনেমার গতি ধীর। এই ধীর গতি যেন আমাদের করোনার সময়ের সেই স্থবির জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। একটি বাসায় দু-চারটি লোকেশনে সিনেমার চরিত্ররা ঘোরাফেরা করেছে, কথা বলছে। সিনেমা দেখতে গিয়ে তাই মনে হবে, আপনিও যেন সত্যি যেন করোনার সময়ের সেই দিনগুলোতে ফিরে গেছেন। যখন একবেলা কেটে গেলে অন্য বেলা কাটত না। কারও বিপদের দিনে কেউ এগিয়ে আসত না। সিনেমার মধ্যে যে নির্জনতা রাখা হয়েছে, তা দর্শকের ওপর একধরনের মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করে। কারণ কম হোক কিংবা বেশি, লকডাউনের সময়ের সেই দিনগুলোর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে প্রতিটি পরিবারকে।

এ সিনেমায় দুটি ভিন্ন সামাজিক অবস্থার দুই নারীকে দেখানো হয়েছে। দুজনের খুব সুন্দর বোঝাপড়া থাকলেও কখনো এ সম্পর্কে এসেছে ভাঙন। মৃত্যুভয় তাদের কাছাকাছি নিয়ে এলেও এই মৃত্যুই আবার তৈরি করেছে দূরত্ব। দুই নারীর একাকিত্ব, তাদের মনস্তত্ত্ব দেখানোর পাশাপাশি ভঙ্গুরতাও দেখানো হয়েছে।

আরও পড়ুন

‘জয়া আর শারমিন’ মূলত দুই চরিত্র জয়া আর শারমিনের গল্প। এর বাইরে দু-একটা অন্য চরিত্রের উপস্থিতি আছে বোঝালেও তা টেনে বড় করা হয়নি। গল্পের মূল থিম বজায় থাকে পুরো সময়টাতেই। তাই এ সিনেমার সঙ্গে একাত্ম হওয়া যায় খুব সহজে।

‘জয়া আর শারমিন’–এর দৃশ। চরকির সৌজন্যে

নিঃসঙ্গ, স্থবির জীবনের মধ্যেও জয়া ও শারমিনের অভিনয় এ সিনেমায় প্রাণ দিয়েছে। সিনেমাটি যতটা দেখার, তাঁর চেয়ে বেশি অনুভবের। তবে মাঝেমধ্যেই কিছুটা গতি মন্থরতায় ভুগেছে ‘জয়া আর শারমিন’, দৈর্ঘ্য খুব বেশি না হওয়ায় সেটা বড় কোনো ব্যাপার নয়।

‘জয়া আর শারমিন’–এর দৃশ। চরকির সৌজন্যে

সিনেমার শেষ দিকে মুগ্ধ করেছে অন্বেষা দত্ত গুপ্তর গান ‘বেলগাছে পাতা কেন আসে না, তানজু মিয়া আমার সঙ্গে থাকে না’; দেবজ্যোতি মিশ্রর সুরে গানটি সিনেমা শেষ হওয়ার পরেও হয়তো আপনিও আনমনে গেয়ে উঠবেন।