‘মনে হয়েছে, এটা আমার জীবনের গল্প’

‘অটোবায়োগ্রাফি’র বিশেষ প্রদর্শনীতে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী-তিশা দম্পতির সঙ্গে অতিথিরা। এদিন নির্মাতা থেকে অভিনয়শিল্পী, সিনেমাটিতে অভিনেতা ফারুকীর প্রশংসা করেন সবাই। ছবি: ফেসবুক থেকে

মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তাঁর বেশির ভাগ গল্পে সমাজে ছড়িয়ে থাকা চেনা গল্পের অন্য রকম একটা উপস্থাপন থাকে। এবারও যেন সেই পথেই হাঁটলেন। নিজের নতুন ছবি ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’তে সেটার প্রতিফলন ঘটল। এত দিন ছবির গল্প লেখা ও পরিচালনা করার কাজে যুক্ত থাকলেও এবার তিনি এসেছেন নতুন রূপে, যা অনেকের জন্যই বড় চমক। তাই নির্মাতা ফারুকীর পাশাপাশি অভিনেতা ফারুকীও ছিলেন সবার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে।

‘অটোবায়োগ্রাফি’র বিশেষ প্রদর্শনীতে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী-তিশা দম্পতির সঙ্গে অতিথিরা। ছবি: ফেসবুক থেকে

গত বৃহস্পতিবার রাত আটটায় ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পেয়েছে ‘মিনিস্ট্রি অব লাভ’-এর প্রথম সিনেমা ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’। ফারুকী পরিচালিত ওয়েব ফিল্মটি মুক্তির আগে একটি বিশেষ প্রদর্শনী করা হয়। ঢাকার মহাখালীর স্টার সিনেপ্লেক্সে আয়োজিত এই বিশেষ প্রদর্শনীতে ছুটে এসেছিলেন বিনোদন অঙ্গনের অনেকে। পরিচালক, প্রযোজক যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন বিভিন্ন প্রজন্মের অভিনয়শিল্পীরা। আফজাল হোসেন, চঞ্চল চৌধুরীরা যেমন ছিলেন, তেমনি ছিলেন সারিকা, মেহজাবীন, তাসনিয়া ফারিণ, সাবিলা নূর প্রমুখ।

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’-এর বিশেষ প্রদর্শনী শেষে সবাই তাঁদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। জানান ভালো লাগার কথাও। সবার ভালোবাসা ও ভালো লাগার অনুভূতি নাড়া দিয়েছে পরিচালক ও অভিনয়শিল্পী ফারুকীকে। ছবিটির কেন্দ্রীয় দুটি চরিত্র আবর্তিত হয়েছে তিশা ও ফারুকীকে ঘিরে। মুক্তির আগে তিশা জানিয়েছিলেন, এটি তাঁদের কন্যাসন্তান ইলহামের জন্মের পর প্রথম কাজ। চিত্রনাট্যকার হিসেবে তাঁর অভিষেক হয়েছে। ইলহামের প্রথম মিউজিক ভিডিও, পরিচালক ফারুকীর প্রথম অভিনয়—এই ফিল্মে অনেক কিছুই প্রথমবার ঘটেছে। তাই যেকোনো প্রথম মানুষের জীবনে অনেক স্পেশাল। তাই সিনেমাটি তাঁর জন্য বিশেষ কিছু।

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’–তে তিশা ও ফারুতী। চরকির সৌজন্যে

ফারুকীর পরিচালনায় বিজ্ঞাপনচিত্র, নাটক, টেলিছবি, চলচ্চিত্রসহ নানা মাধ্যমে কাজ করেছেন অভিনয়শিল্পী চঞ্চল চৌধুরী। এই ছবির বিশেষ প্রদর্শনীতে এসেছিলেন তিনিও। ফারুকীর নতুন ছবিটি নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন তিনি। প্রদর্শনী শেষে বললেন, ‘এটা তাঁদের জীবনের গল্প। আমরা যাঁরা এই মাধ্যমে কাজ করি, তাঁদের জীবনের গল্প অনেক কিছুকে ছাপিয়ে যেতে পারে, সেই গল্প অনেক মানুষ জানে না। আমাদেরও অনেক কষ্ট, অনেক বেদনা, অনেক দুঃসময় যায় জীবনে—সেটা আমরা নিজেরা নিজেরা হজম করে মানুষের সামনে বিনোদন বিলিয়ে বেড়াই। এই গল্প দেখতে দেখতে আমার চোখ ভিজে গেছে, পানিতে। আমার মনে হয়েছে, এটা আমার জীবনের গল্প, বিশ্বাসের গল্প। কারণ, এটা সত্য গল্প।’

ফারুকীর অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন মেহজাবীন, সাবিলা নূর ও তাসনিয়া ফারিণের মতো তরুণ অভিনয়শিল্পীরা। সাবিলা নূর বললেন, ‘আমি সব সময় তিশা আপুকে অসাধারণ অভিনেত্রী হিসেবে দেখে আসছি। ছোটবেলা থেকে তাঁর অনেক বড় ভক্ত। সেই সঙ্গে ফারুকী ভাই যে এত ভালো অ্যাক্টিং করবেন, এত স্বতঃস্ফূর্ত হবে, অপ্রত্যাশিত ছিল। খুবই ভালো লেগেছে। অনেকগুলো ইস্যু এই ছবিতে এসেছে, এটা খুবই ইন্টারেস্টিং লেগেছে।’ একই কথা বললেন মেহজাবীনও। তিনি বললেন, ‘ছবিটি খুবই সুন্দর হয়েছে। তিশা আপু তো সব সময় সুন্দর অভিনয় করেন, পাশাপাশি ফারুকী ভাই যে অভিনয়ে এত ন্যাচারাল হবেন, এটা তো বুঝিনি।’

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’–তে তিশা। চরকির সৌজন্যে

‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ ছবিটিকে সব সন্তানের প্রতি তাঁর মা-বাবার অনুভূতির উপহার হিসেবে দেখছেন তিশা। প্রায় ৮২ মিনিটের দৈর্ঘ্যের এই ছবিতে অভিনয় করতে গিয়ে তিশার মতো সহশিল্পীকে কৃতিত্ব দিতে ভোলেননি ফারুকী।

প্রদর্শনী শেষে বলেন, ‘অভিনয় করতে গিয়ে মনে হচ্ছে, সহশিল্পী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কো-আর্টিস্ট তার ম্যাজিক দিয়ে প্রভাবিত করে। অভিনয়টা যদি আমার ক্ষেত্রে সহজ হয়ে থাকে, এটার সব কৃতিত্ব তিশার। ওর সঙ্গে অভিনয় করতে গেলে অভিনয়টা সহজ হয়। আমি নই, অন্য অভিনেতারা যাঁরা ওর সঙ্গে কাজ করেন, অনেকে স্বীকার করেন, আমাকে বলেছেনও। ওর কারণে আসলে আমার কাছে সবকিছু সহজ হয়ে গেছে।’

এদিকে সবার কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পেয়ে চমকে গেছেন ফারুকী। সেই অনুভূতিও প্রকাশ করলেন তিনি।

গতকাল শুক্রবার নিজের ফেসবুকে দেওয়া পেস্টে লিখেছেন, ‘“সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি” নিয়ে আপনাদের প্রতিক্রিয়া আমাকে কিছুটা হলেও চমকে দিছে। আশ্বস্তও করছে যদিও! আমি এই রকম প্রতিক্রিয়া সর্বশেষ পেয়েছিলাম টেলিভিশন ছবি মুক্তির পর। ভুলেই গেছিলাম এই প্রতিক্রিয়া পাইলে কী অনুভূতি হয়। অনেকে এ রকমও লিখেছেন, “আপনার ওপর আমাদের অনেক অভিমান হয়েছে, কেন আপনি আমাদের জন্য এ রকম গল্প করছিলেন না ইদানীং।” শুধু এইটুকু বলতে চাই, মোর নাম এই বলে খ্যাত হোক, আমি আপনাদেরই লোক! ভালো থাকবেন সবাই।’

ফারুকী ও তিশার সঙ্গে এই সিনেমায় অভিনয় করেছেন ইরেশ যাকের, ডলি জহুর, শরাফ আহমেদ জীবনসহ আরও অনেকে।