সাজানো ভাবমূর্তির পেছনে লুকিয়ে থাকা সত্য
১৫ মে মুক্তি পাচ্ছে চরকি অরিজিনাল সিরিজ ‘গুলমোহর’। সৈয়দ আহমেদ শাওকী পরিচালিত সিরিজটির ট্রেলার প্রকাশ পেয়েছে ৮ মে রাতে। যা দেখে ধারণা করা যাচ্ছে, পিতার মৃত্যুর পর নানা রকম দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে উত্তরাধিকারেরা। অপহরণের ঘটনাও আঁচ করা যায়। আর কিছু সংলাপে রাজনীতির বিষয়টি স্পষ্টই। এমন নানা কিছুর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে উঠে আসতে থাকে সেই পরিবারের সাজানো ভাবমূর্তির পেছনে লুকিয়ে থাকা বিস্ময়কর সব সত্য।
‘তাকদীর’ ও ‘কারাগার’–এর পর শাওকী তাঁর তৃতীয় সিরিজে একটি পারিবারের গল্প নিয়ে এগিয়েছেন ঠিকই, কিন্তু তাতে রেখেছেন সংঘাত ও রহস্য। ‘গুলমোহর’–এর গল্প, সংলাপ, চিত্রনাট্য লেখায় নির্মাতার সঙ্গে আছেন মারুফ প্রতীক। দুজন মিলে পরিবারের যে গল্প লিখেছেন, তা কেন অন্য পারিবারিক গল্পের চেয়ে আলাদা?
সেই ব্যাখ্যায় শাওকী বলেন, ‘পরিবারের ক্রাইসিস মানে সম্পত্তি ভাগাভাগি, নিজেদের মধ্যে ঝগড়া, অবিশ্বাস। আমার গল্পে এগুলো আছে। কিন্তু বেশি যা আছে বা যা এ গল্পকে আলাদা করেছে বলে আমার মনে হয়, সেটা হলো পূর্বপুরুষের অন্ধকার দিকটাও যে উত্তরাধিকারীদের বয়ে বেড়াতে হয়, সে বিষয়ের বর্ণনা।’
‘তাকদীর’ ও ‘কারাগার’ সিরিজের উদাহরণ টেনে শাওকী জানান, তিনি সমাজচ্যুত মানুষের চোখ দিয়ে গল্প বলতে ভালোবাসেন। ‘গুলমোহর’–এর ট্রেলারেও তার ইঙ্গিত রয়েছে। একটি চরিত্রের ফিরে আসা এবং তার চোখ দিয়ে সমাজ–বাস্তবতাকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস রয়েছে সিরিজে।
‘গুলমোহর’ সিরিজ এবং সৈয়দ আহমেদ শাওকীকে নিয়ে একটি কথা বেশ ঘুরছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ‘গুলমোহর’ নাকি এখন পর্যন্ত নির্মাতা হিসেবে শাওকীর সবচেয়ে বড় স্কেলের কাজ। নির্মাতা এ কথার সত্যতা স্বীকার করেছেন। কিন্তু কীভাবে বোঝা যাবে এটি বড় স্কেলের কাজ? ব্যাখ্যা দিয়ে শাওকী বলেন, ‘ফিকশনের ক্ষেত্রে বড় স্কেলের কাজ নির্ভর করতে পারে প্রোডাকশন ডিজাইনের ওপর। এটি সে রকম একটা ফিকশন। তবে বড় স্কেল বলতে আমি সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি চরিত্র বিন্যাসের ওপর।’
বিষয়টি বুঝিয়ে বলতে গিয়ে শাওকী বলেন, ‘আমি এর আগে সিঙ্গেল প্রোটাগনিস্টের গল্প বলেছি। কিন্তু “গুলমোহর” সিরিজে অনেক চরিত্র। প্রত্যেকটি চরিত্রের ভিন্ন বৈশিষ্ট্য, ভিন্ন সংকট, ভিন্ন লেয়ার, ভিন্ন মাত্রা। এটা লিখতেও অনেক সময় লেগেছে, প্রোডাকশন ডিজাইনও করতে হয়েছে অনেক বড় করে। তাই এটা আমার সবচেয়ে বড় স্কেলের কাজ।’
আগেই জানা গেছে, সিরিজে অভিনয় করেছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, সারা যাকের, ইন্তেখাব দিনার, মোস্তাফিজুর নূর ইমরান, সুষমা সরকার, মীর নওফেল আশরাফী জিসান, সারিকা সাবাহ, তৌফিকুল ইসলাম ইমন, মোস্তফা মনওয়ারসহ অনেকে।
সিরিজে মায়ের চরিত্রে সারা যাকের আর ভাই–বোনের চরিত্রে আছেন ইন্তেখাব দিনার, সুষমা সরকার এবং মীর নওফেল আশরাফী জিসান। বড় ভাইয়ের ভূমিকায় আছেন ইন্তেখাব দিনার। যিনি বিদেশ থেকে ফিরেছেন সম্প্রতি। স্বাভাবিকভাবেই পারিবারিক এই ব্যক্তিগত সংকটের মধ্য দিয়ে যায় ইন্তেখাব দিনারের চরিত্রটি।
বোনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুষমা সরকার, তাঁর চরিত্রের নাম রেহনুমা। তিনি বলেন, ‘এ সিরিজটির চরিত্র আমার অভিনয়জীবনের অনন্য সংযোজন। রিহার্সাল থেকে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়াটা ছিল দুর্দান্ত। রেহনুমা বা রেণু এমন একটা চরিত্র, যাকে দেখলে মনে হবে এ তো খুবই পরিচিত একটা চরিত্র আবার কোথায় গিয়ে যেন সে একটু অপরিচিত হয়ে ওঠে। যে বারবার খোঁজে তার পারিবারিক সম্পর্কের সুর।’
রবি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মীর নওফেল আশরাফী জিসান। তাঁর ভাষ্যে, ‘এখানে অন্য সবার সঙ্গে আমাকে যেন পরিবারের সদস্য বলেই মনে হয়, অভিনয়ে–উপস্থিতিতে সেই চেষ্টাই ছিল আমার।’
নীরবতাও যে একটি ভাষা, সেটাই সিরিজে ফুটিয়ে তুলেছে শান্তা চরিত্রটি। এই চরিত্রে অভিনয় করেছেন সারিকা সাবাহ। তিনি তাঁর চরিত্র নিয়ে বলেন, ‘এ চরিত্রটির কাছে যেন কষ্টটাই সাবলীল আর ভালোবাসাটাই বোঝা। আমার মনে হয় অনেকেই তাদের নিজেকে শান্তা চরিত্রের মধ্যে দেখতে পাবেন।’
বাবা, স্বামী, সন্তান, ভাই এবং রাজনৈতিক নেতা—নানা মাত্রার চরিত্র রানার। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন মোস্তাফিজুর নূর ইমরান। অভিনেতা বলেন, ‘এ চরিত্রটির কাছে উত্তরাধিকার এবং এর পরম্পরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খুবই চাপা স্বভাবের, নিজের ভাবনা বা পরিকল্পনা অন্যদের জানায় না এবং নিজের মধ্যেই তিলে তিলে শেষ হয়।’ চরিত্রটি ভালো না খারাপ—তা জানতে সিরিজটি দেখতে হবে বলে জানিয়েছেন মোস্তাফিজুর নূর ইমরান।