চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় এসে টিউশনির জীবন, সংগ্রামের দিনগুলোর গল্প নিয়ে ওয়েব সিরিজ বানাতে চান ‘মহানগর’ নির্মাতা

আশফাক নিপুণ
ছবি: ফেসবুক

‘দুইটা কথা মনে রাখবেন’ মহানগর ওয়েব সিরিজের সংলাপটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল। নানাভাবে এই সংলাপ ব্যবহার করেন নেটিজেনরা। ‘মহানগর’ ওয়েব সিরিজের কল্যাণে এই সিরিজের চরিত্র ‘ওসি হারুণ’ দারুণ জনপ্রিয়। এই সংলাপের নেপথ্যের কারিগর আশফাক নিপুণ। এই পরিচালক সম্প্রতি ফেসবুকে ইঙ্গিত দিয়েছেন, টিউশনি করানোর অভিজ্ঞতা নিয়ে ওয়েব সিরিজ করবেন। স্ট্যাটাসে উঠে এসেছে তাঁর নির্মাতা হওয়ার অভিজ্ঞতা। মন্তব্যের ঘরে ভক্তদের জানতে চাওয়া, কবে আসছে এই সিরিজ।

নির্মাতা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসেছিলেন নিপুণ। ঢাকার শুরুর জীবনটা ছিল সংগ্রামের। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘ফিল্মমেকার হওয়ার আগে চট্রগ্রামে টিউশনি করতাম। টিউশনি শুরুই করি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে। কেজি ওয়ানের এক বাচ্চাকে দিয়ে শুরু, বাসায় গিয়ে পড়াতাম। তারপর বাড়তে থাকে টিউশনি। স্কুলের ছেলেমেয়েদের শেষ করে একসময় কলেজের ছেলেমেয়েদের ইংরেজি পড়ানো শুরু করলাম। তারপর আইবিএ, নর্থসাউর্থে ভর্তি কোচিং করাতাম। একসময় বাসায় ব্যাচ ধরে পড়ানো শুরু করি। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত তিনটা করে ব্যাচ পড়াতাম। তারপর লাঞ্চ করেই বাসায় বাসায় গিয়ে পড়ানো শেষ করে রাত ১০টায় ফিরতাম।’

আশফাক নিপুণ
ছবি: ফেসবুক

এভাবে একসময় শিক্ষক হিসেবেও ছাত্রছাত্রীদের কাছে পছন্দের হয়ে ওঠেন। সারা দিন টিউশনি করতে দেখে প্রিয়জনেরা তাঁকে বলতেন, নির্মাণটা বাদ দিয়ে কোচিং সেন্টার দিতে। সেই স্মৃতিচারণা করে নিপুণ লিখেছেন, ‘জুনিয়রদের পড়াতাম, আমার ব্যাচমেটদের পড়াতাম, সিনিয়রদেরও পড়াতাম। খুব খারাপ মনে হয় পড়াতাম না। লক্ষ করতাম, ছাত্র–ছাত্রীরা আমাকে বেশ পছন্দ করত। এভাবে শিক্ষক হয়ে যাওয়ায় আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা একসময় বলতে শুরু করে ফিল্মমেকিংয়ের চিন্তা বাদ দিতে। তারা বলত, একটা বড় কোচিং সেন্টার খুলতে। তাদের যুক্তি, এই কাজটা আমি ভালো পারতাম। তখন তাদের কথা শুনিনি।’
যিনি হতে চান নির্মাতা, তাঁকে কোনোভাবেই আটকে রাখা যায় না, এ যেন প্রকৃতির নিয়ম। নিপুণের ক্ষেত্রেও এমনটা ঘটল। নির্মাতা হতেই আসতে চান ঢাকায়। অন্যদিকে চট্রগ্রামে সব মিলিয়ে অনেক আরামে ছিলেন। অর্থকড়ি নিয়ে কোনো চিন্তা ছিল না। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সব মিলিয়ে চট্রগ্রামে খুব কমফোর্ট একটা জোনে ছিলাম। প্রচুর টাকাপয়সাও আয় হতো। দিনে পড়াতাম আর রাতে বাসায় শুয়ে শুয়ে দুনিয়ার সিনেমা দেখতাম। এভাবেই শুয়ে শুয়ে ওয়ার্ল্ড সিনেমা দেখার হাতেখড়ি। সব ছেড়ে ঝুঁকি নিয়ে ঢাকায় চলে আসি। শুধু ফিল্মমেকিং করব বলে।’

শুটিংয়ের ফাঁকে মোশাররফ করিম ও নিপুণ
ছবি: ফেসবুক

ঢাকায় এসে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন। শুরু হয় এক বন্ধুর পথে যাত্রা। সেই অভিজ্ঞতাই তাঁকে সিনেমা নির্মাতা বানিয়েছে। কিন্তু অতীতের স্মৃতিগুলো এখনো যেন প্রখরভাবে তাঁর মনে পড়ে। সেই স্মৃতি নিয়ে নির্মাণ করতে চান ওয়েব সিরিজ। নিপুণ বলেন, ‘এখন বাইরে বের হলে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের কাউকে না কাউকে পেয়ে যাই। অনেকে ফেসবুকে মেসেজ করে পরিচয় দেয়। জানতে পারি, অনেকে ভালো করছে, অনেকেই দেশের বাইরে সেটেলড। এখনো চিটাগাং গেলে মনে পড়ে, ওই বাসায় পড়াতে যেতাম, ওই বাসায় কিছুদিন পড়িয়ে ছেড়ে দিয়েছিলাম। কত স্মৃতি। অনেককে দেখে আমি হয়তো চিনতে পারি না, কখনো তারাই চিনতে পারে। আমি না চিনলেও তারা এসে পরিচয় দেয়, চিনিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। ভালোই লাগে। হয়তো পড়ানোর এই অভিজ্ঞতা নিয়ে আমি কোনো একদিন একটা সিরিজ বানাব। জীবনে কোনো অভিজ্ঞতাই বৃথা যায় না, আর এই ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা তো কর্ণফুলী নদীসম।’

‘মহানগর’ এর পোস্টারে
ছবি: ফেসবুক

এই নিয়ে এবার জানা গেল নতুন খবর। টিউশনি করানোর সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক আগে থেকেই গল্প ভাবনায় ছিল নিপুণের। সেই গল্প নিয়েই  রীতিমতো দিন কাটছে। তুলে ধরতে চান দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা। তিনি বলেন,‘আমি অনেক দিন টিউশনি করেছি। আমার অনেক অভিজ্ঞতা। আমি সেই সময় থেকেই ভাবছিলাম, এটা নিয়ে গল্প লিখব, এগিয়েছিও। কিন্তু সেটা সময় নিয়ে বলতে চেয়েছি। আগে হয়তো ফিকশনে সেই সুযোগটা কম ছিল। এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম আসায় সময় নিয়ে গল্প বলার সুযোগ হয়েছে। অন্য কোনো বাধা নেই। আমার এখন পারফেক্ট সময় মনে হওয়ায় আমার ফেলে আসা গল্পগুলো নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে।’ কবে এই সিরিজ আসবে, কী নাম—এখনো বলতে চান না এই পরিচালক। শুধু জানান, এখানে চমক থাকবে।