কাঁচি দিয়ে একের পর এক তরুণী খুন, কে এই ক্রমিক খুনি

গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গতে মুক্তি পেয়েছে সাইকো থ্রিলার ‘কানাগলি’; সিরিজটি পরিচালনা করেছেন তরুণ নির্মাতা আহমেদ জিহাদ।

‘কানাগলি’ সিরিজের পোস্টার থেকে। বঙ্গর ফেসবুক

শহরজুড়ে আতঙ্ক। খুন হচ্ছেন একের পর এক নারী। ক্রমিক খুনির অস্ত্র কাঁচি, খুনিকে খুঁজতে গলদঘর্ম হয়ে যায় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত মামলার তদন্তভার নেন পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজ। তদন্তে নেমে ধন্দে পড়ে যান তিনি। ঘটনার কোনো কূলকিনারা করতে পারেন না। এটা প্রতিশোধ, নাকি কোনো খুনির উন্মাদনা? খুনগুলো করছে কে? বেছে বেছে নারীকেই কেন খুন করা হচ্ছে? শেষ পর্যন্ত কি খুনির হদিস মেলে? এসব নিয়েই ওয়েব সিরিজ কানাগলি। বঙ্গতে গতকাল বৃহস্পতিবার মুক্তি পাওয়া সিরিজটি পরিচালনা করেছেন আহমেদ জিহাদ। তরুণ এই নির্মাতার এটিই প্রথম ওয়েব সিরিজ। ঋদ্ধ শরিফের গল্পে সিরিজের চিত্রনাট্যও লিখেছেন জিহাদ।

কাজের সুবাদে বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন জিহাদ। গতকাল প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, কিশোরগঞ্জে ট্রেনে যাওয়ার পথে সিরিজের গল্পকার ঋদ্ধ শরিফের সঙ্গে পরিচয়। পরে ফেসবুকে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হন। জিহাদ বলেন, ‘কয়েক বছর পর উনি আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। গল্পটা আমাকে শোনান। গল্পের মূল অংশটুকু খুব ভালো লাগে। উনি বলছিলেন, এটা নিয়ে উপন্যাস লিখবেন। আমি বললাম, গল্পটা নিয়ে ওয়েব সিরিজ করি। গল্পটার পেছনে বছর দুয়েকের মতো সময় ব্যয় করেছি। পরে প্রডিউসারের সঙ্গে আলোচনা করি।’
প্রযোজক পাওয়ার পর ২০২৩ সালে শুটিংয়ে নেমে পড়েন আহমেদ জিহাদ। পুরান ঢাকা, উত্তরা, সাভার, মানিকগঞ্জসহ নানা প্রান্তে সিরিজের শুটিং হয়েছে। সিরিজের গল্প জানতে চাইলে পরিচালক জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধীরা নানাভাবে বুলিংয়ের শিকার হন। বেশির ভাগ সময় তাঁরা নীরবে সয়ে যান। সইতে সইতে যদি কখনো তাঁরা রেগে যান, তখন কী ঘটতে পারে? সেই গল্পই তুলে ধরা হয়েছে।

কানাগলির দৃশ্য
ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

পরিচালক বলেন, শহরের সুন্দরী নারীদের খুন করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রহস্যের জাল বোনা হয়েছে। সিরিজের নাম কানাগলি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আহমেদ জিহাদ জানান, একের পর এক হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করা হলেও প্রতিটি তদন্তই হাওয়া হয়ে যায়। আবার নতুন করে তদন্ত শুরু করতে হয়। ফলে নামটা কানাগলি রাখা হয়েছে। সিরিজটি দর্শক কেন দেখবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে পরিচালক বলেন, ‘আমরা তো বাইরের মতো জমজমাট থ্রিলার বানাতে পারি না। বৈশ্বিকভাবে চিন্তা করলে আমরা পিছিয়ে আছি। তবে এতটুকু বলতে পারি যে আমাদের নিজস্ব গল্পের সিরিজ এটি। সাইকো থ্রিলারের মধ্যে আলাদা স্বাদ থাকবে। আমাদের আশপাশে এ ধরনের মানুষ আছে। দর্শক নিরাশ হবেন না।’
সিরিজের কাজ শেষ হয়েছে দুই বছর। মুক্তি দিতে বিলম্ব ঘটল কেন? পরিচালকের ভাষ্য, সিরিজটি নেটফ্লিক্সে মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। একটি এজেন্সির মাধ্যমে যোগাযোগও করেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। সেখানে কালক্ষেপণ হয়েছে। এর মধ্যে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও কিছু সময়ে চলে গেছে।

কানাগলির পোস্টার
ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

সিরিজের মূল চরিত্র পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্যামল মাওলা। তাঁকে নেওয়ার কারণও জানালেন পরিচালক, তাঁর নির্মিত প্রথম নাটকেও অভিনয় করেছেন শ্যামল মাওলা। দুজনের মধ্যে বোঝাপড়াটা দারুণ। সঙ্গে চরিত্রটির জন্য তিনি মানানসই ছিলেন। এতে আরও অভিনয় করেছেন আইশা খান, কাজী নওশাবা আহমেদ, আবু হুরায়রা তানভীর, লুৎফুর রহমান জর্জ, নাজিবা বাশার প্রমুখ।

আরও পড়ুন
কানাগলির দৃশ্য
ছবি: নির্মাতার সৌজন্যে

কাজটি নিয়ে গতকাল কাজী নওশাবা আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘থ্রিলার পছন্দ করি। আর আমার চরিত্রটা কিছুটা অতিথি চরিত্রের মতো হলেও প্রভাবশালী। চরিত্রে নেতিবাচক ও ইতিবাচক—দুইয়ের মেলবন্ধন রয়েছে।’ নওশাবার ভাষ্য, ‘আগে থ্রিলার টাইপের চরিত্র কখনো করিনি। ফলে কাজটা নিয়ে আমি ভীষণ আগ্রহী। যত্ন নিয়ে কাজটা করেছেন প্রযোজক ও পরিচালক। এখন জানার ইচ্ছা, দর্শক কাজটাকে কীভাবে নেন।’

কয়েকটা নাটক বানিয়ে নিজেকে আগে ঝালিয়ে নিয়েছেন পরিচালক জিহাদ। পাশাপাশি গল্পও লিখেছেন। তিনি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কাজ করেছেন। সিরিজটি প্রযোজনা করেছেন শরিফ আহমেদ।