এবার আর ‘দৃশ্যম’ হলো না
‘দৃশ্যম’ বানিয়ে চমকে দিয়েছিলেন জিতু যোসেফ। এরপর তিনি প্রচুর থ্রিলার বানিয়েছেন। যেগুলোর মধ্যে অল্প কয়েকটি হয়েছে ‘দৃশ্যম’-এর কাছাকাছি মানের, বাকিগুলো ঠিক পাতে দেওয়ার মতো নয়। আলোচিত এই দক্ষিণি নির্মাতা এবার হাজির ‘মিরাজ’ নিয়ে, টুইস্টে ভরা এক থ্রিলার সিনেমা। তবে মালয়ালম সিনেমাটি দিয়ে কি আদৌ নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন জিতু?
একনজরে
সিনেমা: ‘মিরাজ’
ধরন: ক্রাইম-থ্রিলার
পরিচালনা: জিতু যোসেফ
অভিনয়: আসিফ আলী, অপর্ণা বালামুরালি
স্ট্রিমিং: সনি লিভ
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৫০ মিনিট
গল্প শুরু হয় আবিরামিকে (অপর্ণা বালামুরালি) দিয়ে, যিনি একটি ফাইন্যান্সিয়াল কনসালটেন্সিতে কাজ করেন। তাঁর বাগ্দত্তা কিরণ (হাকিম শাহজাহান) হঠাৎ নিখোঁজ হওয়ার পর আবিরামি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। জানা যায়, এক ট্রেন দুর্ঘটনায় কিরণ মারা গেছেন। মৃত্যুর পর পুলিশ থেকে মাস্তান সবাই হাজির আবিরামির কাছে। কারণ, কিরণের কাছে একটি হার্ডডিস্ক আছে, সেটা তাদের চাই। দৃশ্যপটে হাজির হন অনুসন্ধানী সাংবাদিক আশ্বিন কুমার (আসিফ আলী)। কিন্তু কিরণ কীভাবে মারা গেলেন? তাঁর হার্ডডিস্কে কী লুকানো আছে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে যায় গল্প।
সিনেমার কেবল আসিফ আলী ও অপর্ণার পারফরম্যান্সই মনে থাকে। পর্দায় তাঁদের রসায়ন দেখতে দারুণ। সিনেমার আবহসংগীত ও ভিজ্যুয়ালও চোখের আরাম দেয়। বিষ্ণু শ্যামের সংগীত ও সতীশ কুরুপের সিনেমাটোগ্রাফি দেশগুলোকে স্টাইলিশ ও রহস্যময় করে তুলেছে।
অভিনয় ঠিকঠাক হলেও গল্প ও পরিচালনায় একেবারের ডাহা ফেল ‘মিরাজ’। নির্মাতা যেন ধরেই নিয়েছেন, একের এর এক টুইস্ট দিলেই দারুণ থ্রিলার হবে। গল্পে কোনো ধারাবাহিকতা নেই; সবই এলোমেলো। কিছু দৃশ্য তো রীতিমতো হাস্যকর হয়ে উঠেছে অপ্রয়োজনীয় টুইস্ট ঢোকাতে গিয়ে। সমস্যা আরও আছে—গল্পের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো হঠাৎ করে দেখা দেয়। টুইস্টগুলো যেন পেঁয়াজের স্তর—প্রতি স্তর খুললে আরেকটি ঘটনা, কিন্তু কোনো ইঙ্গিত বা যৌক্তিকতা ছাড়া। শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রে কিছুই থাকে না।
প্রথমার্ধ চলনসই হলেও দ্বিতীয়ার্ধ থেকে দীর্ঘ সিনেমাটি প্রচণ্ড ক্লান্তিকর হয়ে পড়ে। আসিফ ও অপর্ণা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন, কিন্তু গল্পে দম না থাকলে তাঁরা আর কী করবেন।
চিত্রনাট্যকার জিতু ও শ্রীনিবাসন আব্রোল এমন এক থ্রিলার বানাতে চেয়েছেন, যা দর্শকেরা আগে থেকে অনুমান করতে পারবেন না। তবে সেই প্রচেষ্টা বেশি বেশি করতে গিয়েই ‘মিরাজ’ ব্যর্থ হয়েছে। জটিল গল্প ও অপ্রাসঙ্গিক ঘটনা একে অপরের সঙ্গে জোড়া দেওয়া হয়েছে কেবল দর্শককে বিভ্রান্ত করার জন্য।
কখনো কখনো কোনো নির্মাতার প্রথম কাজ দেখে চমকে যেতে হয়—প্রথম সিনেমাই এত দারুণ! আবার উল্টোটাও হয়—জিতু যোসেফের মতো অভিজ্ঞ নির্মাতার কাজ দেখে মনে হয়—সত্যিই কি এটা তিনি বানিয়েছেন?
সিনেমার একটি দৃশ্যে আবিরামি পুলিশের কাছে গিয়ে তাঁর বিয়ের গল্প শোনান। পুলিশ কর্মকর্তা সরাসরি বলে, ‘আপনার গল্প যেন কোনো ক্লিশে সিনেমার মতো।’ সত্যি বলে ওই পুলিশ কর্মকর্তা যেন এক লাইনে ‘মিরাজ’ সিনেমার রিভিউই দিয়ে দিয়েছেন।