তুলা বিক্রি করতে গিয়ে অভিনয়! ‘পঞ্চায়েত’-এর বিনোদের গল্পটা জানেন কি

অশোক পাঠকঅভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে

তুলা বিক্রি করতে গিয়ে অভিনয়ে হাতেখড়ি! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হলেও ঘটনা সত্যি। অনন্ত অশোক পাঠকের ক্ষেত্রে তো এমনটা হয়েছিল। অশোক পাঠককে চিনতে পারছেন তো? ওই যে ‘পঞ্চায়েত’ সিরিজে ‘বিনোদ’ চরিত্রে অভিনয় করে যিনি সবার প্রিয়পাত্র হয়ে উঠেছেন। তুলো বিক্রি করতে গিয়ে কীভাবে পাল্টে গেল অশোকের জীবন, এক সাক্ষাৎকারে সে গল্পই জানিয়েছেন অভিনেতা নিজে। খবর হিন্দুস্তান টাইমসের

অভিনেতা জানান, অভাবের সংসার, তাই ক্লাস নাইন থেকেই চাচার দেখাদেখি তুলার ব্যবসা শুরু করতে হয়েছিল তাঁকে। মে-জুন মাসের প্রখর রোদে সাইকেল চালিয়ে তিনি ফরিদাবাদ থেকে নানা জায়গায় তুলো বিক্রি করতে যেতেন। আর সেখানে গিয়ে কাঁদো কাঁদো মুখে ওষুধ বিক্রেতাদের কাছে তুলো কেনার কথা বলতেন।

পঞ্চায়েত ৩-এর দৃশ্য। ছবি: অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও

অশোক বলেন, ‘আমার অসহায় মুখ দেখে অনেকেই তুলা কিনে নিতেন। এমনকি যাদের প্রয়োজন নেই, সে রকম লোকজনও মাঝেমধ্যে আমার থেকে তুলা কিনতেন! ভাবতেন, একটা বাচ্চা ছেলে রোদে ঘুরে তুলা বিক্রি করছে। আর আমিও সেটাকে কাজে লাগাতাম, আমার মনে হয় সেখান থেকেই আমার অভিনয়ের হাতেখড়ি।’

আরও পড়ুন

অশোক জানান, স্নাতকের সময় থেকে তাঁর জীবন নেয় নতুন মোড়। ছোট থেকে গানবাজনা, অভিনয়ের শখ ছিল। চোখে ছিল একরাশ স্বপ্ন, বিশ্বাস ছিল একদিন তিনি বড় কিছু করবেন। একদিন ঠিক তাঁকে সবাই চিনবে। তারপর কলেজজীবনেই এল প্রথম সুযোগ।

অশোক পাঠক
অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে

কলেজের শিক্ষকেরা তাঁকে একটি নাটকের নির্দেশনার দায়িত্ব দেন। তারপর ধীরে ধীরে নাটকে নির্দেশকের কাজ করে তিনি ৪০ হাজার রুপি জমান। সেই টাকা নিয়ে পা রাখেন মুম্বাইয়ে। সে সময় অবশ্য তাঁর বন্ধুরা তাঁকে নিয়ে মজা করতেন। অভিনেতার ভাষ্যে, ‘আমার বন্ধুরা আমাকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে বলত, “ও নায়ক হবে মুম্বাই গিয়ে!” কটাক্ষ করতেও ছাড়ত না। তারা বলেছিল, “তোকে দেখতে ভালো না, কে সিনেমায় কাজ দেবে তোকে?”’

কিন্তু সবার কথাকে ছাপিয়ে প্রথম অডিশনেই বাজিমাত করেন তিনি। অল্প পারিশ্রমিক হলেও প্রথম কাজের সুযোগ পান। তারপর আরও নানা জায়গায় অডিশন দিতে থাকেন। এক মাসের মধ্যেই একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজের সুযোগ আসে। দুই দিনের কাজ। এক এক দিনের কাজের জন্য তিনি পেয়েছিলেন ৭০ হাজার রুপি।

অশোক পাঠক
অভিনেতার ইনস্টাগ্রাম থেকে

এই প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, ‘প্রথমে আমার নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। ভেবেছিলাম আমার বন্ধু মনে হয় আমার সঙ্গে মজা করছে, তাই বারবার তার থেকে জানতে চাইছিলাম, কত টাকা, ৭০ হাজার নাকি ১৭ হাজার? আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে এক মাসেই প্রায় ১ লাখ রুপি জমেছিল। টাকার অঙ্কটা দেখে আমার বাবাও অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। কারণ, তিনিও তাঁর কর্মজীবনে একসঙ্গে এত টাকা কখনো রোজগার করে উঠতে পারেননি।’

‘পঞ্চায়েত’ প্রসঙ্গে অশোক বলেন, ‘আমার কাছে “পঞ্চায়েত”-এর কাজটাও আর পাঁচটা কাজের মতোই ছিল। আমি কেবল সততার সঙ্গে আমার কাজটুকু করেছিলাম। কিন্তু তারপর যখন সিরিজ মুক্তি পেল; সবাই চরিত্রটাকে এত ভালোবাসা দিল, সেটা আমাকে খুব অবাক করেছিল। কারণ, চরিত্রটা থেকে আমি সেই প্রত্যাশাই করিনি। ১২ বছর আমি এই ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছি, কিন্তু যে চরিত্রকে নিয়ে সেভাবে ভাবনাচিন্তাই করিনি, সেটা যখন সবার কাছে এতটা প্রশংসিত হলো, তখন আমার উপলব্ধি হয়, ছোটবড় যে রকমই সুযোগ আসুক না কেন, সেটাতে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার মধ্যেই সার্থকতা। চরিত্রটা দেখে সেই সময় আমাকে অনেকেই বার্তা পাঠিয়েছেন। সেসব পড়ে পড়ে আমি কাঁদতাম।’