শুধু বাংলাদেশ নয়, চরকির বাজার বিশ্বব্যাপী

রেদওয়ান রনি, প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা, চরকিছবি: সাইফুল ইসলাম
যাত্রা শুরুর এক বছরে ‘ব্লেন্ডারস চয়েস-দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি অ্যান্ড ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ড’, ‘আইসিটি ডিভিশন প্রেজেন্টস চ্যানেল আই স্ন্যাককিপার ডিজিটাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২১’, ‘মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার–২০২১’, ‘ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন’ (ইনমা) আয়োজিত ‘গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০২২’-এ বিশেষ সম্মানে ভূষিত হয়েছে দেশের জনপ্রিয় ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকি। এক বছরের অর্জনসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি

প্রশ্ন :

ব্লেন্ডারস চয়েস-দ্য ডেইলি স্টার ওটিটি অ্যান্ড ডিজিটাল কনটেন্ট অ্যাওয়ার্ডসের ২১টি ক্যাটাগরির মধ্যে ১১টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছে চরকি, যাত্রা শুরুর মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এমন প্রাপ্তিকে কীভাবে দেখছেন?

এটা খুবই আনন্দের বিষয়। এক বছর কয়েক মাস আগে চরকি যাত্রা করে। অল্প সময়ের মধ্যে দর্শক ও সমালোচকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। চরকিকে বাংলা কনটেন্টের রাজধানী বানানোর স্বপ্নের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। এটা আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।

প্রশ্ন :

‘ঊনলৌকিক’, ‘সিন্ডিকেট’, ‘শাটিকাপ’, ‘পেট কাটা ষ’–সহ বেশ কিছু আলোচিত কনটেন্ট নিয়ে এসেছে চরকি। দেশের বাইরেও পশ্চিমবঙ্গের নির্মাতা সৃজিত মুখার্জিসহ অনেকেই চরকির কনটেন্টের প্রশংসা করছেন...

বাংলাদেশের ওটিটি কনটেন্টের যে বাজার আমরা চিন্তা করেছিলাম, ক্ষেত্রটা তার চেয়েও অনেক বড়। দেশের ভেতরে–বাইরে বাংলাভাষী দর্শকেরা ভালো কনটেন্ট দেখার জন্য আগ্রহী। দর্শকদের আন্তর্জাতিক মানের কনটেন্ট দেওয়ার জন্য নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলীসহ টিম চরকির সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই কনটেন্ট নিয়ে এ আলোচনা তৈরি করেছে।

রেদওয়ান রনি। ছবি: প্রথম আলো

প্রশ্ন :

বিশেষ করে ভারতে বাংলাদেশের ওয়েব কনটেন্ট বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। চরকিকে নিয়ে ভারতে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আপনাদের আছে কি না?

ভারতে চরকির কার্যক্রম খুব দ্রুত শুরু হবে। আশা করছি, শিগগিরই লোকাল পেমেন্ট গেটওয়ে দিয়ে ইন্ডিয়া থেকেও সহজে পেমেন্ট করতে পারবে। চরকি ভারতসহ সারা পৃথিবী থেকে গুগল পে, অ্যাপল পের মাধ্যমে পেমেন্ট করা যায়। বাংলাদেশ ডিজিটালি এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারকে অনুরোধ করব, বাংলাদেশে দ্রুত পেপ্যাল সার্ভিস চালু করা হোক। ২৯ কারেন্সিতে বিশ্বের ১৯৮ দেশ থেকে চরকিতে পেমেন্ট আসে। বাংলাদেশে পেপ্যাল না থাকায় পেমেন্টের ক্ষেত্রে একটু জটিলতা হয় মাঝেমধ্যে। পেপ্যাল, স্ট্রাইপ চালু হলে পেমেন্টটা আরও সহজ হবে।

প্রশ্ন :

ভারতে কী ধরনের কার্যক্রম থাকবে চরকির?

ভারতে বাংলাদেশি কনটেন্টের বিপুল দর্শক তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে যে রকম বানাচ্ছি, তেমনি ভারতেও আমরা প্রডাকশন বানাব। শুধু ভারত নয়, সারা পৃথিবীতে আমাদের প্রডাকশন হবে। আন্তর্জাতিক অনেক ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে, যারা আমাদের কনটেন্টগুলো অন্য ভাষায় লাইসেন্সিং নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। তার মানে শুধু বাংলাদেশ নয়, আমাদের বাজার বিশ্বব্যাপী। বিশ্বব্যাপী বাংলা কনটেন্টের বাজার তৈরি করতে পারলে প্রচুর রেমিট্যান্স আসবে, ইতিমধ্যে রেমিট্যান্স আসছেও। যদি সরকারি নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে পাই সহযোগিতা পাই তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে দেশি ওটিটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারবে।

রেদওয়ান রনি

প্রশ্ন :

কোন মন্ত্র নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চরকি?

নতুন প্রজন্মের অনেক তরুণ নির্মাতা পাচ্ছি, যাঁরা অসাধারণ চিন্তা করেন; সঙ্গে চরকি টিমের সমন্বয় আছে। সবার প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাচ্ছে চরকি। মিডিয়াস্টার লিমিটেডের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা, আমাদের ওপর বিশ্বাস রেখেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে দর্শকদের ভালোবাসা তো আছেই।

প্রশ্ন :

ওটিটিতে বাংলা কনটেন্টের যাত্রা খুব বেশি দিনের নয়, দর্শকদের বাংলা কনটেন্টে ফেরানো কতটা চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন?

ইউটিউবে এত ফ্রি কনটেন্ট থাকার পরও টাকা দিয়ে কনটেন্ট দেখবে কি না, এটা নিয়ে সংশয় ছিল। কিন্তু চরকির যাত্রার পর নিমেষেই তা কেটে গেছে। দর্শক খুবই ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন। দর্শক প্রতি মাসে যে পরিমাণ টাকা দিয়ে সাবস্ক্রিপশন করে কনটেন্ট দেখেন, এটা আমাদের খুব বেশি অনুপ্রাণিত করে। আমি মনে করি, খুব বেশি চ্যালেঞ্জিং হয়নি। বাংলাদেশের দর্শককে ভালো কনটেন্ট দিলে এন্টারটেইনমেন্টের জন্য তাঁদের জায়গা থেকে কন্ট্রিবিউট করবেন। দর্শককে ভালো কনটেন্ট দিলে দর্শক দেখেন।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশের ওটিটি কনটেন্টের প্রশংসা করছেন সমালোচকেরা; ভারতীয় নির্মাতা, অভিনেতারা বলছেন, কলকাতার চেয়েও এগিয়ে আছে ঢাকা। ঢাকা আলাদা কোথায়?

আমরা নিরীক্ষা করতে পারি। আমাদের সামনে অনেক বড় বড় বেঞ্চমার্ক কিংবা চাপিয়ে দেওয়ার জায়গা নেই। নতুনদের অবদানে ইন্ডাস্ট্রিটা এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন মানেই সে নতুন করে ভাবতে পারে, নতুন করে এক্সপেরিমেন্ট করতে পারে। যে কনটেন্টের জোয়ারের কথা আসছে, সবই দেখবেন নির্মাণের জায়গায় নতুন, গল্প বলার জায়গায় নতুন। ভাবনার জায়গায় নতুন। দর্শকেরা সব সময় নতুন কিছুই দেখতে চান। এ নতুনের সংমিশ্রণ তৈরি হয়েছে। যাঁরাই এখন ভালো করছেন, তাঁদের একেকজনের সঙ্গে আরেক জনের কন্টেন্টের পার্থক্যটা আছে। সবাই ভালো নির্মাণ করছেন আলাদা জায়গা থেকে। আরেকটা হলো, ভাবনার আধুনিকতা। সবাই নতুনভাবে গল্প বলছে। নির্মাতারা ফ্রেশভাবে চিন্তা করতে পারেন। বাংলাদেশের নির্মাতারা যাঁরা ঢাকায় কাজ করেন, তাঁদের কেউ পাবনা থেকে এসেছেন, কেউ বরিশাল থেকে, সারা দেশের নির্মাতাদের অভিজ্ঞতা উঠে আসছে। ‘শাটিকাপ’ যিনি বানাচ্ছেন রাজশাহীতে বসে, তাঁর কাজটা আমাদের একদমই নতুন লাগবে। নতুন ভাবনা উঠে এসেছে। নির্মাতাদের অভিজ্ঞতা খুব বৈচিত্র্যময় ও গল্প বলার ধরন অনেক আধুনিক।

রেদওয়ান রনি

প্রশ্ন :

চরকি নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কী?

দ্রুতই বাংলা কনটেন্টের রাজধানী হবে চরকি। আমরা সেই পথেই এগোচ্ছি। দর্শকের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞতা। অল্প সময়ে দর্শকেরা অনেক ভালোবোসা দিয়েছেন। নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমরা আরও বড় সম্ভাবনার জায়গা দেখতে পাই। সেই সম্ভাবনার পথেই এগিয়ে যেতে চাই।

প্রশ্ন :

অনেক দিন আপনাকে পরিচালনায় পাওয়া যায়নি। আপনাকে নির্মাণে দেখা যাবে কবে?

এত দিন চেষ্টা করছিলাম, বাংলাদেশের নির্মাতারা যেন মন খুলে কাজ করতে পারেন আর আমিও যেন মন খুলে কাজ করতে পারি, সে রকম একটি প্ল্যাটফর্ম ডেভেলপ করার। চারপাশে অনেক কাজ হচ্ছে, তবে আমি বানাইনি। কারণ, আমি ফোকাসড হতে চেয়েছিলাম চরকিকে আন্তর্জাতিক মানের প্ল্যাটফর্মে পরিণত করব। আমি একটু গুছিয়ে উঠেছি, খুব অল্প সময়েই নির্মাণে নিয়মিত হব। আগে আমার একার নিরীক্ষা ছিল, এখন যেহেতু অনেক নির্মাতার সঙ্গে কাজ করি, সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে নিজেকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছি, আশা করি দর্শকেরা শিগগিরই নতুন নির্মাণ পাবেন।