লুকিয়ে রাখতে পারলেন না নাসির উদ্দিন খান...

অভিনেতা নাসির উদ্দিন খানপ্রথম আলো

‘নিজেকে আর লুকিয়ে রাখতে পারলাম না,’ সিন্ডিকেট সিরিজে তুমুল জনপ্রিয় হয়েছিল তাঁর এই সংলাপ। আসলেই নিজেকে আর পার্শ্ব বা সহযোগী চরিত্রে লুকিয়ে রাখতে পারলেন না নাসির উদ্দিন খান। ঈদে চরকির স্পিন–অফ সিরিজ ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’-এ হয়ে উঠলেন প্রধান নায়ক।
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো স্পিন–অফ সিরিজ নির্মাণ করেন শিহাব শাহীন। কোনো সিনেমা বা সিরিজের কোনো চরিত্র জনপ্রিয় হয়ে উঠলে তাকে নিয়ে সিনেমা বা নাটক বানানোটা নতুন কিছু নয়। তবে আমাদের এখানে এই ধারা এত দিন চালু ছিল না। ‘সিন্ডিকেট’-এ ভিলেন অ্যালেন স্বপন (নাসির উদ্দিন খান) এতটাই জনপ্রিয়তা পায় যে চরিত্রটি নিয়ে একটা স্পিন–অফ সিরিজ বানানোর সিদ্ধান্ত নেন পরিচালক শিহাব শাহীন। গত ২১ এপ্রিল চরকিতে মুক্তি পায় ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। এর পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয় নাসির উদ্দিন খানের বন্দনা।

‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’–এ নাসির উদ্দিন খান
ছবি : চরকি
আরও পড়ুন

শিহাব শাহীনের সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না, প্রমাণ আট দিনে দুই কোটি মিনিট স্ট্রিমিং। নাসির উদ্দিনও দর্শককে হতাশ করেননি, নিজেকে আরও নতুনভাবে চিনিয়েছেন। প্রথমবার অভিনয় করেছেন রোমান্টিক দৃশ্যে। শুধু অভিনয় নয়, এই সিরিজের জন্য প্রথমবার গানও গেয়েছেন তিনি।

প্রথম প্রধান চরিত্র, প্রথম রোমান্টিক দৃশ্য, প্রথম গান
সহযোগী চরিত্রে অভিনয় দিয়েই দর্শকের দৃষ্টি নিজের দিকে আনতে পেরেছেন নাসির উদ্দিন খান। পেশাদার অভিনয়ের মাঠে একটু দেরিতে এলেও নিজেকে সাফল্যের শীর্ষে নিয়ে যেতে খুব বেশি দেরি করেননি। হয়ে উঠেছেন প্রধান চরিত্র। তাই তো পরিচালকেরাও তাঁকে নিয়ে ভিন্নভাবে ভাবতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে তাঁকে ঘিরেই নির্মিত হয়েছে ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’। তিনিও অভিনয় দিয়ে বুঝিয়েছেন, দর্শক কেন পছন্দ করছেন। দ্বৈত চরিত্রেও তিনি আলাদাভাবে বুঝিয়েছেন, কে সিদ্দিকুর রহমান আর কে শামসুর রহমান।

আরও পড়ুন
নাসির উদ্দিন খান
প্রথম আলো

এত দিন চোর, ডোম, মাফিয়াসহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করলেও রোমান্টিক দৃশ্যে তাঁকে দেখা যায়নি। ‘মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন’ সিরিজে শায়লার (রাফিয়াত রশিদ মিথিলা) সঙ্গে রোমান্সে জড়িয়েছিলেন শামসুর রহমান স্বপন ওরফে অ্যালেন স্বপন। পরীক্ষায় উতরেও গেছেন। বুঝিয়েছেন, নাসির উদ্দিন খান একজন পেশাদার অভিনেতা, তাঁর কাজই অভিনয়, যেকোনো ধরনের দৃশ্যে অভিনয় করার সক্ষমতা ও দক্ষতা তাঁর আছে।
শামসুর রহমান স্বপন কীভাবে অ্যালেন স্বপন হলেন, কীভাবে তিনি পুলিশের অভিযান থেকে বেঁচে নিজেকে লুকিয়ে রাখলেন। পরিচালক সেই গল্প তুলে ধরতে গিয়ে দেখালেন, কেমন নির্মমতার মধ্যেও অ্যালেন স্বপন নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন। নিজেকে বাঁচাতে ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।

হঠাৎ সামনে এমন একটা দৃশ্য আসতে পারে, তার জন্য মনে হয় দর্শকও প্রস্তুত ছিলেন না। তাঁকে মেরে মেরে যে বিবস্ত্র করে দিয়েছে। তবু তিনি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছেন। এই দৃশ্যে হয়তো অনেকে শকডও হয়েছেন। এমন একটা দৃশ্য হয়তো দর্শক আশাও করেননি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গল্পের প্রয়োজনে এমনটা দরকার ছিল বলেই রাজি হয়েছি।’

মিথিলা ও নাসির উদ্দিন খান
ছবি : চরকি

অভিনয়ের পাশাপাশি এবার গানও গেয়েছেন নাসির উদ্দিন খান। এই সিরিজে নাসিরের কণ্ঠে দর্শক-শ্রোতা শুনেছেন ‘তৈ তৈ তৈ আমার বৈয়াম ফাকি খৈ’। শায়লার সঙ্গে রোমান্টিক দৃশ্যগুলোয় বারবার গানটি গেয়েছেন তিনি। গানটি এখন শ্রোতাদেরও মুখে মুখে। পরিচালক শিহাব শাহীনই প্রথম তাঁকে গানটি গাওয়ার অনুরোধ করেন। আগে টুকটাক গান যেহেতু গাইতেন, তাই রাজি হয়ে যান। নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আসলে জায়গাটা আমার ভালো লাগার। মঞ্চে কাজ করার সময় গান করেছি,আড্ডায়ও প্রচুর গান গেয়েছি।’

‘বদ্দা, অঁনর শিডিউলের কী অবস্থা’
শুধু সাধারণ দর্শকই নন, অভিনয় দিয়ে নির্মাতাদের প্রশংসাও অর্জন করছেন নাসির উদ্দিন খান। তাঁকে নিয়ে পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, ‘মোশাররফ করিম, চঞ্চল চৌধুরীদের পর নাসির উদ্দিন খানই আমার বিবেচনায় আমাদের ফিল্ম ওয়ার্ল্ডে একটা মেজর ইন্ট্রোডাকশন, যিনি যেকোনো মুহূর্তে সত্যের মতো বিভ্রম তৈরি করতে পারেন তাঁর সহজ-সাবলীল অভিনয় দিয়ে। অথবা বলতে গেলে, ভানহীনতা দিয়ে।’ তাঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছাও পোষণ করেন ফারুকী। চট্টগ্রামের মানুষ নাসির উদ্দিন খানকে তাঁর আঞ্চলিক ভাষায় সেই প্রস্তাব দিয়েও রেখেছেন ফারুকী, ‘বদ্দা, অনর লগে খাম খঁত্তে গইজ্যুম? অঁনর শিডিউলের কী অবস্থা? ’

নাসির উদ্দিন খানের সঙ্গে প্রথমবারের মতো অভিনয় করেছেন মিথিলা। সহশিল্পী নাসির সম্পর্কে বলেন, ‘প্রচণ্ড সিরিয়াস অভিনেতা নাসির। ক্লাসের ফার্স্ট বয় টাইপের। সারাক্ষণ পড়াশোনা করবে, তার মধ্যে থাকবে। তার মতো ভালো অভিনেতা থাকায় শায়লা চরিত্রের রিঅ্যাকশন দর্শকের কাছে অনেক গ্রহণযোগ্য হয়েছে।’

নাসির উদ্দিন খান
সংগৃহীত

নাসির উদ্দিন খানকে নিয়ে পরিচালক শিহাব শাহীন বলেন, ‘প্রধান চরিত্রে নাসির উদ্দিন খান। এটি ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমার বিশ্বাস ছিল, নাসির উদ্দিন খানের অভিনয়ের যে সহজাত ক্ষমতা, প্রকৃতিপ্রদত্ত প্রতিভা, সেটার যদি ৭০ ভাগও পাওয়া যায়, তাহলে চরিত্রটা উতরে যাবে। কিন্তু দেখলাম, নাসির উদ্দিন খান ১১০ ভাগ দিয়েছেন।’

আরও পড়ুন