বিশ্বজুড়ে কোরীয় সিনেমা-সিরিজের উত্থান, চমক নিয়ে আসছে ডিজনি
স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ডিজনি প্লাস তাদের অরিজিনাল কনটেন্টের একটি বড় তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে কোরীয় সিরিজ। বিশ্বব্যাপী তাঁদের দর্শকসংখ্যা বাড়াতে কোরীয় প্রযোজনার প্রতি তাঁরা বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে।
হংকং ডিজনিল্যান্ড রিসোর্টে অনুষ্ঠিত হয় ডিজনি প্লাস অরিজিনালস প্রিভিউ ইভেন্ট। এখানে ওয়াল্ট ডিজনির এশিয়া প্যাসিফিকের প্রেসিডেন্ট লুক ক্যাং বলেন, কোরীয় গল্প ইতিমধ্যেই এশিয়া প্যাসিফিক ও আমেরিকায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে। লাতিন আমেরিকাতেও দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, বিশেষ করে ব্রাজিল ও মেক্সিকোতে। লুক ক্যাংয়ের এ বক্তব্যে পরিষ্কার— বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান কোরীয় কনটেন্টগুলো ধরতে চায় প্ল্যাটফর্মটি।
১৪টি দেশের প্রায় ৪০০ সাংবাদিক এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এই অনুষ্ঠানে ডিজনি প্লাস শীর্ষস্থানীয় কোরীয় তারকাদের নাম অনুযায়ী নতুন সিরিজের নাম প্রকাশ করে। এ ছাড়া তাঁরা এশিয়ান গল্প বলার বিশ্বব্যাপী চাহিদার ওপর জোর দেয়।
লুক ক্যাং বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলের গল্প নিয়ে দর্শকদের উচ্ছ্বাস ও আগ্রহ দেখা সত্যিই প্রেরণাদায়ক। তবে প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করার আগে আমরা যাচাই-বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে তা নির্বাচন করি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোরীয় অরিজিনালস আমাদের প্ল্যাটফর্মের একটি বড় চালিকাশক্তি। আমাদের সৃজনশীল কাজের যে সুনাম অর্জন করেছি, সেটা “মুভিং”, “নাইন পাজলস”, “বিগ বেট” এবং “গ্যানিবল”-এর মতো পুরস্কার পাওয়া ও হিট সিরিজগুলো দিয়েই।’
নতুন অরিজিনাল সিরিজের ঘোষণা
এই অনুষ্ঠানে ডিজনি প্লাস স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে আসন্ন কোরীয় অরিজিনালসগুলোর এক্সক্লুসিভ প্রিভিউ দেখানো হয়। যেখানে অংশ নেন শীর্ষ কোরীয় তারকারা। নতুন আসার অপেক্ষায় থাকা সিরিজগুলোর মধ্যে ফ্ল্যাগশিপ রিলিজ হিসেবে স্থান পেয়েছে ‘মেড ইন কোরিয়া’। এটি হিউন বিন ও জং উ-সাং অভিনীত ১৯৭০-এর দশকের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ক্রাইম-ড্রামা সিরিজ। ‘ইনসাইড মেন’, ‘দ্য ম্যান স্ট্যান্ডিং নেক্সট’ ও ‘হারবিন’ নির্মাতা উ মিন-হো এটি পরিচালনা করেছেন। এটি হতে যাচ্ছে তাঁর পরিচালিত প্রথম সিরিজ।
প্রধান অভিনেতা জং উ-সাংয়ের ভাষ্যে, এটি এমন একটি ড্রামা সিরিজ, যার চরিত্রগুলো তাঁদের নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা দ্বারা চালিত। তিনি বলেন, এই সিরিজে বাস্তব ও ঐতিহাসিক ঘটনার কাল্পনিক রূপান্তর ঘটেছে। ‘মেড ইন কোরিয়া’য় দেখায় যে কীভাবে মানুষ তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রতি সৎ থাকার জন্য বেপরোয়া আচরণ করে।
সিরিজটির আরেক অভিনেতা হিউন বিনও বলেছেন, তিনি এই প্রকল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। কারণ, এটি সত্তরের দশকের বাস্তব পরিবেশের সঙ্গে কাল্পনিক উপাদানের মিশেলে তৈরি।
হিউন বিনের ভাষ্যে, ‘প্রতিটি চরিত্রের নিজস্ব গল্প আছে, আবার তাদের মধ্যে রয়েছে সাধারণ সূত্র। দর্শকেরা এ সিরিজ দেখার সময় যখন বুঝবেন তাদের ইচ্ছা ও আবেগের মধ্যে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয়েছে; তাঁরা তা উপভোগ করবেন।’
আরও কী আসছে
ডিজনি প্লাসের আসন্ন সিরিজগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে ‘গোল্ড ল্যান্ড’, ‘আ শপ ফর কিলার্স ২’, ‘দ্য রিম্যারেড এমপ্রেস’, আইইউ ও বিয়ন উ-সোক অভিনীত ‘পারফেক্ট ক্রাউন’ এবং সুজি ও কিম সিওন-হো অভিনীত ‘ডিলিউশন’।
অনুষ্ঠানে ছিলেন এই সময়ে আলোচিত কোরীয় তারকারা। জং ও হিউন বিন ছাড়াও ছিলেন স্ট্রিমিং হিট ‘দ্য ম্যানিপুলেটেড’-এর জি চ্যাং-উক ও দোহ কিউং। জি চ্যাং ভক্তদের তার পরবর্তী ডিজনি প্লাস প্রকল্প ‘মেরি বেরি লাভ’-এর প্রথম ঝলক দেখান।
বহুল প্রতীক্ষিত ‘দ্য রিম্যারিড এমপ্রেস’ সিরিজের প্রচার করেছেন শিন মিন-আ, জু জি-হুন ও লি সে-ইয়ং। এটি একটি জনপ্রিয় ওয়েবটুনের থেকে নির্মিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে শিন বলেন, ‘এটি এমন একটি গল্প যা সবাই খুব ভালোবাসে। আমিও এর বড় ভক্ত ছিলাম; পর্দায় দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছি।’
জু জি-হুন ফ্যান্টাসি নিয়ে তাঁর আগ্রহের কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি এই সিরিজের প্রতি আকৃষ্ট হই কারণ এটি পূর্ব ও পশ্চিমের সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটিয়ে সাংস্কৃতিক বাধাকে অতিক্রম করে। সিরিজটিকে দর্শক কীভাবে আপন করে নেন তা দেখার জন্য আমি উদ্গ্রীব।’
অভিনেতা লি ডং-উক ও কিম হাই-জুন ‘আ শপ ফর কিলার্স ২’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, যা আগামী বছর মুক্তি পাবে। লি সিরিজটির প্রথম কিস্তির সাফল্যের কথা তুলে ধরেন।
লি বলেন, ‘প্রথম মৌসুমটি এত ভালো করেছে, ফলে আমরা দ্বিতীয়টি তৈরি করতে পেরেছি। এটা সম্ভব হয়েছে দর্শকের ভালোবাসার কারণেই আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন মৌসুম নিয়ে প্রত্যাশার চাপ বেশি হলেও আশা করি এটিও একই রকম ভালোবাসা পাবে।’
পার্ক বো-ইয়ং ও কিম সুং-চিওল ‘গোল্ড ল্যান্ড’ সিরিজের প্রচার অনুষ্ঠানের জন্য অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন। সিরিজটির প্রচার শুরু হবে ২০২৬ সালে।
সিরিজটি বিমানবন্দরের এক নিরাপত্তা তল্লাশি কর্মকর্তাকে কেন্দ্র করে তৈরি। যার হাতে অপ্রত্যাশিতভাবে স্বর্ণের বারের একটি বিশাল ভান্ডার ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে তিনি একটি চোরাচালান চক্রের ফাঁদে আটকে যান।
পার্ক বো-ইয়ং বলেন, ‘প্রথমে সেই কর্মকর্তা মনে করেন স্বর্ণের বারটি হয়তো অন্য কারও; কিন্তু ধীরে ধীরে সে এটাকে নিজের কাছে রাখার ব্যাখ্যা তৈরি করে।’ পার্ক আরও বলেন, একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে মানুষের চরিত্র ও সিদ্ধান্ত যেভাবে পরিবর্তিত হয়, দর্শকেরা তা দেখে আনন্দ পাবেন।
ডিজনির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ডিজনির সম্প্রতি সিজে ইএনএমের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ শুরু করেছে, যা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম টিভিংয়ের কোরীয় কনটেন্টকে জাপানের ডিজনি প্লাসে নিয়ে এসেছে।
লুক ক্যাং বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো এশিয়া প্যাসিফিক থেকে মূল কনটেন্টগুলোকে বিশ্বব্যাপী ফ্র্যাঞ্চাইজিতে রূপান্তর করা। এ ক্ষেত্রে আমরা প্রতিভাবান নির্মাতা এবং আমাদের প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগাতে চাই।’
দ্য কোরিয়া টাইমস অবলম্বনে