নিলেশ–বিধির তুমুল প্রেম, সমাজ কি মেনে নেবে
নিলেশ (সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী) ও বিধি (তৃপ্তি দিমরি) আইনের ছাত্রছাত্রী, পড়ে একই কলেজে। বিধি উচ্চ বর্ণের মেয়ে, নিলেশ উঠে এসেছে দলিত পরিবার থেকে। বন্ধুত্ব থেকে তাদের সম্পর্ক প্রেমে গড়ায়। আগ্রহটা প্রথম বিধিই দেখায়, নিলেশের মধ্যে একধরনের দ্বিধা কাজ করে; এই প্রেমের পরিণতি যে ভালো হবে না, সেটা তার ভালোই জানা আছে। এরপর কী হয়? নিলেশ-বিধির কি শুভ পরিণয় হয় নাকি ‘ধড়ক’-এ প্রথম কিস্তির মতো বিয়োগান্ত পরিণতি মেনে নিতে হয়? জানতে হলে দেখতে হবে ‘ধড়ক ২’, ১ আগস্ট প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির পর গত ২৬ সেপ্টেম্বর ছবিটি এসেছে নেটফ্লিক্সে।
একনজরে
সিনেমা: ‘ধড়ক ২’
ধরন: রোমান্টিক ড্রামা
পরিচালক: শাজিয়া ইকবাল
অভিনয়ে: সিদ্ধান্ত চতুর্বেদী, তৃপ্তি দিমরি, জাকির হুসেইন, সৌরভ সচদেবা
স্ট্রিমিং: নেটফ্লিক্স
দৈর্ঘ্য: ২ ঘণ্টা ৪৩ মিনিট
শাজিয়া ইকবালের সিনেমাটি আদতে ২০১৮ সালে মুক্তি পাওয়া মারি সেলভারাজের আলোচিত তামিল সিনেমা ‘পারিয়েরাম পেরুমাল’-এর হিন্দি রিমেক। ইদানীং হিন্দি রিমেকের খুব একটা বাজার নেই, আলোচিত দক্ষিণি সিনেমাগুলোতে বলিউডি মসলা মিশিয়ে প্রায়ই হিন্দি রিমেকের বারোটা বাজান নির্মাতারা। যার সবচেয়ে ভালো উদাহরণ ‘ধড়ক’-এর প্রথম কিস্তি। কিন্তু মারাঠি সিনেমা ‘সাইরাত’-এর হিন্দি রিমেক বানাতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিলেন নির্মাতারা। তবে ‘ধড়ক ২’ উজ্জ্বল ব্যতিক্রম। নির্মাতা শাজিয়া বলিউডি সিনেমা বানালেও মূল সিনেমার আত্মাকে বিসর্জন দেননি।
‘পারিয়েরাম পেরুমাল’-এ সেলভারাজ এক নিম্নবর্গের যুবক কলেজ বৈষম্যের মুখোমুখি হয়। সেখান থেকে ‘ধড়ক ২’ সিনেমায় শাজিয়া ইকবাল কিছু যোগ-বিয়োগ করেছেন। তবে গল্পের মূলে সংবেদনশীল ভাব ছিল, সেটা আছে হিন্দি রিমেকেও। তাই ‘ধড়ক ২’-কে স্রেফ রোমান্টিক সিনেমা ভাবলে ভুল করবেন। এটি মূলত এমন একটি সিনেমা, যেটা প্রেমের গল্পের মোড়কে ভারতের জাত বৈষম্য নিয়ে কড়া বার্তা দিতে চেয়েছে।
সিনেমায় দলিত ছাত্রনেতা নিলেশের চরিত্রের মাধ্যমে বৈষম্যের বিরুদ্ধে নীরব প্রতিবাদকে তুলে ধরে। বিধি চরিত্রটি মূল সিনেমার তুলনায় অনেক বেশি মুক্তমনা। সে পরিবার ও সমাজের প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নিলেশের জীবনে জড়িয়ে যায়।
বিধি ও নিলেশের প্রথম দেখার দৃশ্যটি দিয়েই অনেক কিছু বুঝিয়েছেন নির্মাতা। বিধি দেখে নিলেশ তাদের বাড়ির এক অনুষ্ঠানে ড্রাম বাজাচ্ছে। দলিত সমাজের এক তরুণ এসেছে তাদের বাড়িতে ভাঁড়ার কাজ করতে; মুহূর্তেই দুই পরিবারের আর্থিক ব্যবধান স্পষ্ট হয়ে যায়।
নিলেশ আর বিধির কথোপকথনের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে যে জাতবৈষম্য কেবল একটি ধারণা নয়, এটি কতটা বাস্তব। বিধি বলে, ‘আমি ভাবতাম জাতবৈষম্য কেবল গ্রাম পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।’ নিলেশ উত্তর দেয়, ‘যা কখনো বৈষম্যের শিকার হয়নি, তাদের পক্ষেই কেবল এমন কথা বলা সম্ভব।’
‘ধড়ক ২’-এ নিলেশের সংগ্রাম, ক্রোধ ও সহানুভূতি অত্যন্ত সততা ও শক্তিশালীভাবে দেখানো হয়েছে। এই চরিত্রে দারুণ করেছেন সিদ্ধান্ত। সমাজের নিপীড়িত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে তাঁর রাগ, ক্ষোভ, পরিশোধপরায়ণতা ছিল খুবই বিশ্বাসযোগ্য। হালে বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনেমার নায়িকা তৃপ্তি দিমরিও তুলনামূলক জটিল চরিত্রে যথাযথ। জাকির হুসেইন কলেজ প্রিন্সিপালের ভূমিকায় নজর কেড়েছেন। আর ভাড়াটে খুনির চরিত্রে সৌরভ সচদেবা যখনই পর্দায় হাজির হয়েছেন, ক্রুর চাউনি দিয়ে ভয় পাইয়ে দিয়েছেন।
তবে চাইলেই সিনেমার দৈর্ঘ্য অনেকটা কমানো যেত। দ্বিতীয়ার্ধের পর থেকে কখনো কখনো গল্প আর এগোয় না। ক্লাইম্যাক্সের বক্তৃতাও এগিয়ে গেলে ভালো হতো। ছোটখাট কিছু ত্রুটি থাকলেও ছাত্ররাজনীতি, জাত-বৈষম্য, অনার কিলিং নিয়ে বার্তা দিতে পেরেছেন নির্মাতা। হালের বিনোদন-নির্ভর বলিউডি সিনেমায় যা উজ্জ্বল ব্যতিক্রম।