সিনেমা হলের স্বল্পতা ও চলচ্চিত্র নির্মাণ কমে আসায় দেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র নিয়ে আজ বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সেমিনার হলে ‘ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের প্রভাষক ও গবেষক শুভ কর্মকার। প্রবন্ধের ওপর আলোচনায় অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী বলেন, ‘ওটিটি বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। ভবিষ্যতে ওটিটির মাধ্যমে বাংলাদেশে চলচ্চিত্র নেতৃত্ব দেবে। ওটিটির চলচ্চিত্রের সেন্সরশিপের বিষয়টি আলোচনা করা বা পরিষ্কার করা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ওটিটিকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে, যাতে আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে বাংলাদেশের কনটেন্ট বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে।’ তাঁর মতে, সেন্সর বিষয়টি এই গবেষণায় যুক্ত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া বাংলাদেশের পরিবার, মানুষ ও সামাজিক বাস্তবতাকেও এই গবেষণায় নিয়ে আসা দরকার। গবেষণাটি সমৃদ্ধ করার জন্য বিদেশি গবেষণার বিভিন্ন বিষয় এতে যুক্ত করার আহ্বান জানান তিনি।

গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘ওটিটি কেবলই একটি মাধ্যম। মূল বিষয় হচ্ছে চলচ্চিত্র, সেটি কোথায় দেখানো হলো এটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। চরকি শুধু একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নয়, প্রযোজক হিসেবেও বাংলা চলচ্চিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গত ১২ মাসে ১২টি চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শন করে দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণে এগিয়ে রয়েছে এই প্ল্যাটফর্মটি। এমনকি আন্তর্জাতিক বেশ কিছু স্বীকৃতিও ইতিমধ্যে পেয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা এই প্ল্যাটফর্মের জন্য নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারকে সজাগ থাকতে হবে। নীতিমালাটি যেন বৈশ্বিক বিবেচনায় করা হয়, সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে। কারণ, এই প্ল্যাটফর্মে শুধু বাংলাদেশের মানুষ নয়, সারা পৃথিবীর মানুষ কনটেক্ট উপভোগ করবেন।

ওটিটির নীতিমালা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে রনি বলেন, ওটিটির কনটেন্টের জন্য আগে সেন্সর করার প্রয়োজন হতো না। নতুন নীতিমালায় ওটিটির চলচ্চিত্রকে সেন্সরের আওতায় আনার কথা শোনা যাচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বরং বয়সভিত্তিক রেটিং করে দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। ওটিটিতে বাংলাদেশি সিনেমাবিষয়ক গবেষণায় এ বিষয়গুলোও আসা প্রয়োজন।

সময়ের আলোচিত চলচ্চিত্র পরিচালক রায়হান রাফী বলেন, ‘কোভিডের সময় ওটিটির মাধ্যমে দর্শক তৈরি হয়েছে। বর্তমানে সিনেমা হলে এত দর্শক আসছেন, তাঁরা সবাই ওটিটি কনটেন্ট দেখা মানুষ। ওটিটি ঘিরে নতুন নতুন নির্মাতা তৈরি হচ্ছে। সেন্সরশিপ দিয়ে বা নীতিমালা দিয়ে এটাকে যেন বাধাগ্রস্ত না করা হয়।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যখন সিনেমার দর্শক ছিলাম, তখন বাংলা সিনেমায় ছিল অশ্লীলতার যুগ। তবে সে সময় আমরা বেশ কিছু ভালো নাটক দেখেছিলাম। সেসব নাটক দেখে আমরা নির্মাতা হয়েছি। চলচ্চিত্রের অবস্থা যখন ক্রমশ খারাপ হয়ে যাচ্ছিল, কী করবেন ভেবে আমাদের নির্মাতারা হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন। এ সময়ে ওটিটি প্ল্যাটফর্মগুলো চলচ্চিত্রের দর্শক ধরে রাখা এবং নতুন দর্শক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এ কারণেই কোভিডের পর দল বেধে মানুষ ‘হাওয়া’ এবং ‘পরাণ’–এর মতো সিনেমা দেখতে গেছেন।’

ওটিটি প্ল্যাটফর্মের অগ্রগতির জন্য সব প্রক্রিয়াকে সহজ করার দাবি জানিয়ে এই নির্মাতা বলেন, টেলিভিশনের নাটক প্রচারের ক্ষেত্রে সেন্সর নীতি নেই। কারণ, টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ পিভিউ কমিটির মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই নাটকগুলো দেখানোর ব্যবস্থা করেন। ওটিটির ক্ষেত্রেও কর্তৃপক্ষ সে রকম ব্যবস্থা রাখবে, সেটাই স্বাভাবিক। সরকারিভাবে কোনে কঠোর নীতিমালা ওটিটির ওপর চাপিয়ে দিলে নতুন এই মাধ্যম, এমনকি চলচ্চিত্র হুমকির মুখে পড়বে।’

সেমিনার অনুষ্ঠানের স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের পরিচালক মো. মোফাকখারুল ইকবাল।  সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক মো. নিজামুল কবীর। এ ছাড়া আলোচনায় অংশ নেন অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ, চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট পরিচালক ও গবেষকেরা।