কেন ‘রেডরাম’ নিয়ে এত আলোচনা

চরকি প্রযোজিত এই ওয়েব ফিল্মের নাম ‘রেডরাম’

ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাত আটটায় ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পেয়েছে ওয়েব ফিল্ম ‘রেডরাম’। প্রচারের ঠিক আড়াই ঘণ্টা পর থেকে সাড়া ফেলেছে ছবিটি। অনেকে দেখা শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় সরব হন। ভোর চারটা পর্যন্ত ছবির বিভিন্ন দৃশ্য দিয়ে মন্তব্য করেন অনেক দর্শক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গত তিন দিনে পাঁচ শতাধিক রিভিউ দেখা গেছে। নাটক ও সিনেমার ফেসবুক গ্রুপ ও ব্যক্তিগত আইডিগুলো পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বেশির ভাগ দর্শক ৮–এর বেশি রেটিং দিয়েছেন। এমনকি অনেকেই ১০ দিতে কার্পণ্য করেননি। কেন ‘রেডরাম’–এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ ভক্তরা?
একটি খুনকে কেন্দ্র করেই এগিয়ে যেতে থাকে ‘রেডরাম’–এর দুঃসাহসিক গল্প। কে খুন করেছেন, এমন প্রশ্নে রহস্য দানা বাঁধতে থাকে পরতে পরতে। গল্প যতই এগিয়ে চলে, ততই আগ্রহ বেড়ে যায়। এই খুনের তদন্তে গল্পের নতুন মোড় বলে দেয়, দেশের থ্রিলার গল্প কতটা বদলে গেছে। এমন একটি ওয়েব ফিল্ম নিয়ে দেশের দর্শকেরা মাতবেন, এটাই স্বাভাবিক। ভিকি জাহেদের পরিচালনায় ২ ঘণ্টা ১২ মিনিটের থ্রিলারটি শেষ হওয়ার পরও রেশ থেকে যায়। কারণ, আপনি কল্পনা করতে গিয়েও হোঁচট খাবেন।

ফিল্মটি নিয়ে সংগ্রাম আহমেদ লিখেছেন, ‘গতকাল চরকিতে রিলিজ হওয়া “রেডরাম”-এ অভিনয়ে ছিলেন আফরান নিশো, মেহজাবীন চৌধুরী, মনোজ প্রামাণিক, নাদিয়া, আজিজুল হাকিম, নাসির উদ্দিন খানসহ অনেকেই। এই ফিল্মে সবাই যেভাবে অভিনয়ের খেলায় জ্বলে উঠেছিল, তা সত্যি অতুলনীয়।’ এম নাফিস লিখেছেন, ‘ওয়েব ফিল্ম “রেডরাম”–এর মূল শিক্ষণীয় মেসেজ হচ্ছে, ছোট একটি অন্যায় মানুষের জীবন নষ্ট করে দিতে পারে। আর এই ছোট বাক্যের ওপর ভিত্তি করেই শুরু হয়েছে খুনের রহস্য উদ্‌ঘাটন। এই রহস্য উদ্‌ঘাটন করতে গিয়ে পরতে পরতে ছিল সাসপেন্স, থ্রিলার, টুইস্ট। রেডরামে এত সুন্দর একটি শিক্ষণীয় বার্তা প্রকাশ পেয়েছে, বিষয়টা খুবই ভালো লাগল।’

‘রেডরাম’ একটি দৃশ্যে
চরকির সৌজন্যে

ফেসবুকে গ্রুপগুলোতে বেশির ভাগে দর্শক ১০-এ ৮–এর বেশি রেটিং দিয়েছেন। অনেকেই এটাকে ১০-এ ১০ দিচ্ছেন। তাঁরা মনে করেন, কিছু খুঁত থাকলেও এটা দেশের বাজেটের তুলনায় অসাধারণ একটি ওয়েব ফিল্ম। এটাকে ভালো বলতেই হবে। ভালো কাজের প্রশংসা করলেই আরও ভালো কাজ তৈরি হবে।

রেবেকা সুলতানা লিখেছেন, ‘“রেডরাম” ভালো লাগছে। গল্পটা ভালো, টুইস্ট অনেক, শেষটা এমন হবে, আশা করিনি। সবাই সবার অভিনয়ের সেরাটা দিচ্ছে। সাউন্ড সিস্টেম ভালো ছিল। এটাকে ভালো বলতেই হবে।’

মাহফুজ রহমান লিখেছেন, ‘অভিনেতা আফরান নিশোর ক্যারিয়ারে আরেকটা সেরা কাজ হলো “রেডরাম”। এভাবে বললেও ভুল হবে না বাংলাদেশের সেরা ওয়েব ফিল্ম “রেডরাম”। কারণ, ইতিমধ্যে যে আলোচনা হচ্ছে, সেই হিসাবে ভিকি জাহেদের ওপর বিশ্বাস আরও বেড়ে গেল।’ আনিসুর রহমান বলেন, ‘অসাধারণ একটা কাজ দেখলাম। পুরোটা সময় ঘোরের মধ্যে ছিলাম। চোখ সরানো যাচ্ছিল না, মনে হচ্ছিল, একটা দৃশ্য না দেখলেই মিস। কিছু কিছু জায়গায় একটু স্লো লাগছে, এটা সত্য। আমার আশা–প্রত্যাশা পুরোপুরি মিটেছে।’

নিশো এবার সিআইডি কর্মকর্তা রাশেদ
চরকির সৌজন্যে

‘রেডরাম’ ভিকি জাহেদের প্রথম ওয়েব ফিল্ম। এর আগে নাটক বানিয়ে প্রশংসা পেয়েছেন এই নির্মাতা। এটি একই সঙ্গে মেহজাবীন অভিনীত প্রথম ওয়েব ফিল্ম। পারভেজ আমিন নামের একজন লিখেছেন, ‘“রেডরাম”-এ মেহজাবীন চৌধুরীর ক্যারেক্টারটা বেশ ভালো লাগছে। খুব শক্তিশালী একটা চরিত্র ছিল নীলা। বিশেষ করে তাঁর সবগুলো লুকই ছিল চমকপ্রদ। গর্ভাবস্থায় তাঁর দৌড়ানো দৃশ্যটা একদম বাস্তব মনে হয়েছিল। ইউনিভার্সিটিপড়ুয়া দৃশ্যগুলোতে কিউট লুক ছিল সঙ্গে এক্সপ্রেশনও। এ ছাড়া কারাবন্দী নারীর চরিত্রের সঙ্গেও মানিয়ে নিয়েছেন সুন্দরভাবে। প্রসববেদনার এক্সপ্রেশনটাও ন্যাচারাল ছিল। ওয়েব ফিল্মে হাতেখড়ি হিসেবে তিনি যথেষ্ট পাকাপোক্ত অভিনয়ই দেখিয়েছেন। সংলাপ বলার ধরনটা খুবই স্ট্রং ছিল।’

এর আগে ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে নিজের অভিনয়ের জাত চিনিয়েছেন আফরান নিশো। এবার নতুন করে গোয়েন্দা চরিত্রে আলোচনায় রয়েছেন তিনি। সিরিজটিতে তাঁর সাবলীল অভিনয় নিয়ে প্রশংসায় ভাসছেন অভিনেতা আফরান নিশো। তাঁর অভিনয় নিয়ে মোহাম্মদ জুবায়ের নামের সমালোচক লিখেছেন, ‘ছবিতে তাঁকে বলা হয় হিউম্যান লাই ডিটেক্টর। অর্থাৎ যন্ত্র যেভাবে মানুষের মিথ্যা বলার বিষয়টি জানান দেয়, তেমনি নিশোও স্থির চোখে তাকিয়ে বলে দিতে পারে সামনের লোকটি মিথ্যা বলছেন কি না। পুরো ছবিতেই বারবার আফরান নিশোর এই দক্ষতার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। কীভাবে মস্তিষ্কের একটি অংশ কথা বলাকে প্রভাবিত করছে, কীভাবে মুখের হাসির সামান্য ফাঁক বলে দিচ্ছে হাসিটা আসল হাসি কি না—এ সবকিছুরই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়। স্বাভাবিকভাবেই আফরান নিশো ক্রমেই হয়ে ওঠে দর্শকের ভেতরকার চরিত্র। তখন নিজেকে একেকটা আফরান নিশো মনে হয়।’
‘মাঝে মাঝে মনে হয়, যারা চলে যায়, তারাই বেঁচে যায়, মুক্ত হয়ে যায়। কারণ, সময়ের কারাগারে শুধু জীবিত মানুষদের বন্দী থাকতে হয়’, ‘মানুষ হয়ে জন্মানোর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, জীবনের বেশির ভাগ কাজ আপনি নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই করবেন’, ‘মিথ্যা সত্যের একটা অংশ, আলাদা কিছু নয়’ এমন নানা রকম সংলাপ এখন ফেসবুকে ঘুরছে। রহস্য-রোমাঞ্চ আর টুইস্টে ভরপুর ওয়েব ফিল্ম ‘রেডরাম’। গল্পের প্রতিটা মুহূর্তই টান টান উত্তেজনা ছিল। গল্প কোথায় থেকে কোথায় মোড় নেবে, এতটুকু আঁচ করার সুযোগ নেই। নাটক আর ওয়েব ফিল্মে ‘রেডরাম’ বাংলাদেশে নিশ্চয়ই সেরা তালিকায় থাকবে, এমনটাই মনে করেন নাজমুল লিমন।

আরও পড়ুন