চিতা বাঘের মুখোশে অপহরণকারী কারা?

দ্বিতীয় এপিসোডে অঙ্গদ আর কস্তুরি মিলে অ্যামি হত্যার রহস্য উন্মোচনে নামেনছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

শীতের দুপুরে হুডি পরে সাইকেল চালিয়ে এসে দরজায় কড়া নাড়ে এক কিশোর। ছিটকিনি খুলে দিলে পরিচয় দেয়, নাম তার র‌্যাবিট। অর্ডার করা ড্রাগস হোম ডেলিভারি দিতে এসেছে।
নেটফ্লিক্সের ওয়েব সিরিজ ‘আরণ্যক’–এর দ্বিতীয় সিজনও যে নির্মিত হতে যাচ্ছে, পরিচালক বিনয় ওয়াইকুল সে ইঙ্গিত দিয়ে রাখলেন এ দৃশ্যে। কিন্তু এ দৃশ্য দেখে দ্বিতীয় সিজনের প্রতি দর্শকের যে আগ্রহ তৈরি হওয়ার কথা, তা অনেকটাই মাটিচাপা দিয়ে ফেলেছেন পরিচালক।

আট পর্বের সিরিজে বারবার সাসপেন্স তৈরির চেষ্টা করেও বারবার রোমাঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়া ওয়েব সিরিজ ‘আরণ্যক’। তাই সিরিজ শেষ হলেও মনে উত্তেজনার রেশ থাকে না। তবে শুটিং স্পট আর প্রথমবারের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আসা রাভিনা ট্যান্ডনকে সিরিজ‍জুড়েই দেখতে বেশ ভালো লাগে। বিপরীতে চেনা চেনা লাগে পরমব্রতকে।

আট পর্বের সিরিজে বারবার সাসপেন্স তৈরির চেষ্টা করেও বারবার রোমাঞ্চ থেকে বেরিয়ে যাওয়া ওয়েব সিরিজ ‘আরণ্যক’
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

ড্রাগ ডেলিভারি দিতে আসা কিশোরের যে বর্ণনা একটু আগে পড়লেন, সেখানেই শেষ সিরিজটির প্রথম সিজন। দ্বিতীয় সিজনের গল্পটা এখান থেকেই এগোবে। প্রথম সিজন কেমন ছিল, সে প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে রহস্য আর ক্রাইম থ্রিলার ঘরানার সিরিজটির সম্পর্কে একটা টোটকা দেওয়া যাক। এতে স্পয়লারের শঙ্কা নেই।

পুলিশ ইন্সপেক্টর অঙ্গদ মালিক চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

ইদানীং বইয়ের গল্পের নির্যাস নিয়ে বানানো ওয়েব সিরিজ বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ‘ম্যাকবেথ’–এর আদলে সম্প্রতি বাংলা ভাষায় বানানো ‘মন্দার’কে উদাহরণ হিসেবে দেওয়া যেতে পারে। আরণ্যকে কিছুটা নির্যাস নেওয়া হয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের একই নামের উপন্যাস থেকে। তবে সিরিজটি ‘আরণ্যক উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত’ প্রথম সিজন দেখে তা বলাটা হবে একেবারেই ভুল। শুধু সিরিজের নাম দেখে যাদের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের কথা মনে পড়ে, তাদের আগ্রহ জাগানোর জন্য এই টোটকা। তা হলো, সিরিজের একটি চরিত্রের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বকে উপন্যাসের এক চরিত্রের দ্বন্দ্বের সঙ্গে কিছুটা মেলানো যায়। তবে সিরিজের বাকি চরিত্র ও গল্প সম্পূর্ণ ভিন্ন।

পুলিশ ইন্সপেক্টর অঙ্গদ মালিক চরিত্রে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং একই পদে থাকা কস্তুরি দোঘরার চরিত্রে রাভিনা ট্যান্ডন
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

আরণ্যক উপন্যাসের চরিত্র সত্যচরণ এস্টেট ম্যানেজারের চাকরি নিয়ে পোস্টিং পান বিহারের এক ছোট্ট শহরের বনে। সেখানে থাকতে থাকতে তিনি বনের সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েন। কিন্তু বনের গাছ কেটে জনসাধারণের মধ্যে জমি বণ্টনের পর তা থেকে অর্থ আদায়ের দায়িত্ব ছিল তার (সিরিজের বেলায় পছন্দের মানুষের ভালোর জন্য অন্যায় কাজ করা)। গাছ কাটার কাজটি সত্যচরণের জন্য বনের প্রতি ভালোবাসার সম্পূর্ণ বিপরীত। উপন্যাসের এই চরিত্রের নির্যাস সিরিজে খুঁজে পাবেন এক পার্শ্বচরিত্রের মধ্যে।

এবার সিরিজের কাহিনিতে ফেরা যাক। প্রথম এপিসোডে পাহাড়ি এক ছোট শহরে স্টেশন হাউস অফিসার (এসএইচও) পদে বদলি হয়ে আসেন পুলিশ ইন্সপেক্টর অঙ্গদ মালিক (পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়)। একই পদে থাকা কস্তুরি দোঘরার (রাভিনা ট্যান্ডন) এর পরদিন থেকে লম্বা ছুটিতে যাওয়ার কথা। দুজনের পরিচয় পর্বের মধ্যেই থানায় আসেন ফরাসি নারী জুলি। জানান, মেয়ে অ্যামি ও তার বয়ফ্রেন্ড গত রাত থেকে নিখোঁজ। তবে থানার ভেতরেই জুলির সঙ্গে মাদক মেলায় সন্দেহ হয় পুলিশের। থানায় জুলিকে যখন অঙ্গদ মালিক জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন, তখন নিজ বাড়িতে ফিরে যান কস্তুরি। ঘটনাক্রমে তার বাড়ির পাশের বনে ঝুলন্ত অবস্থায় মেলে অ্যামির লাশ। গলায় ধারালো নখের চিহ্ন।

অঙ্গদ আর কস্তুরি মিলে অ্যামি হত্যার রহস্য উন্মোচনে নামেন
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

টেলিভিশনে সেই খবর প্রচারের পর স্থানীয়দের কাছে থেকে ইন্সপেক্টর অঙ্গদ মালিক জানতে পারেন, একই কায়দায় এই শহরে আরও কয়েকটি হত্যার ঘটনা ঘটেছে। প্রতি অমাবস্যার রাতে চিতা বাঘরূপী কেউ মানুষ হত্যা করে বনের গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। বিজ্ঞানমনস্ক পুলিশ কর্মকর্তা হলেও স্থানীয়দের এমন ধারণা উৎসাহী করে তোলে অঙ্গদকে।

এরপরে কী ঘটে, তা দেখার জন্য যখন আগ্রহ তৈরি হয়, তখনই মনে পড়ে সিরিজের প্রথম অ্যাপিসোডের শুরুর দৃশ্য। অ্যামি হত্যার সাত বছর আগে স্কুলের এক অনুষ্ঠানে নাটকে অভিনয় করার সময় মঞ্চ থেকে অপহরণের শিকার হয় অঙ্গদের ছেলে মারুত। সেখানেও অপহরণকারী ছিল চিতা বাঘের মুখোশ পড়া।
দ্বিতীয় এপিসোডে অঙ্গদ আর কস্তুরি মিলে অ্যামি হত্যার রহস্য উন্মোচনে নামেন। তখন বেরিয়ে আসে বেশ কিছু প্রসঙ্গ। মাদকের ব্যবসা, ধর্ষণ, স্থানীয় রাজনীতির বিষয়েও খোঁজ করতে হয় তাদের। তবে তাদের এসব খোঁজ করতে যাওয়ার দৃশ্য দেখে দর্শকের যখন রোমাঞ্চের ভাব তৈরি হতে যাচ্ছে, তখনই সাসপেন্সটা বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে।

রাভিনা ট্যান্ডন
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে

অ্যামি হত্যার রহস্য উন্মোচনের পর এই সিরিজের রেশ বলতে আর তেমন কিছু থাকে না। তবে অঙ্গদ মালিকের ছেলে মারুত কেন অপহরণের শিকার হয়েছিল এবং সাত বছর পর মারুতই ড্রাগ ডেলিভারি ম্যান র‌্যাবিট হয়ে ওঠে কি না, সে উত্তর নিশ্চিত হতেই হয়তো দ্বিতীয় সিজন দেখতে বসতে হবে।