দেড় দশক পর সারা যাকের ও জাহিদ হাসান

সারা যাকের ও জাহিদ হাসান

শেষ কবে সারা যাকের ও জাহিদ হাসানকে একসঙ্গে টেলিভিশনের কোন নাটকে দেখা গেছে, তাঁরা নিজেরাও মনে করতে পারলেন না। অনুমান থেকে দুজনে শুধু এটুকুই বললেন, ১৪–১৫ বছরের কম হবে না। এই মুহূর্তে নামের একটি অ্যান্থলজি চলচ্চিত্রের জন্য দীর্ঘ বিরতির পর এক হলেন তাঁরা।
তহবিল সংগ্রহের লক্ষ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৯৭ সালে মঞ্চে একটি নাটকে অংশ নিয়েছিলেন সারা যাকের ও জাহিদ হাসান । নাম মনে করতে না পারলেও সেটিই ছিল তাঁদের দুজনের প্রথম ও শেষবারের মতো মঞ্চে অভিনয়। টেলিভিশনে হাতেগোনা ৫–৬টি নাটকে অভিনয় করেছেন তাঁরা। তাঁদের এবার এক করলেন পিপলু আর খান।

সারা যাকের

চলচ্চিত্রটিতে পৃথক তিনটি গল্প থাকবে। তার মধ্যে পিপলু আর খানের পরিচালনায় ‘কল্পনা’য় দেখা যাবে সারা যাকের ও জাহিদ হাসানকে। অন্য দুটি গল্প হচ্ছে মেজবাউর রহমানের ‘রূপবান’ ও আবরার আতহারের ‘আ নাইট টু রিমেম্বার’। ভিডিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকিতে মুক্তি পাবে ‘এই মুর্হূতে’। চরকি প্রযোজিত এই চলচ্চিত্রের শুটিংয়ে এরই মধ্যে সারা যাকের দুই দিন ও জাহিদ হাসান তিন দিন অংশ নিয়েছেন।

সারা যাকের সর্বশেষ টেলিভিশনের জন্য শুটিং করেছেন, তা–ও এক দশকের বেশি। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ‘কল্পনা’ দিয়ে এবারই প্রথম ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের জন্য কাজ করলেন সারা যাকের। টেলিভিশনে কাজ না করলেও মঞ্চের জন্য ঠিকই নিয়মিত কাজ করেছেন এই অভিনয়শিল্পী। সারা যাকের বলেন, ‘টেলিভিশনের নাটকে কাজ করতে মন টানত না। ২০১৫ সাল থেকে তাই আবার মঞ্চে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কয়েকটি মঞ্চনাটক করলাম। ২০১৭ সাল থেকে তো আলী যাকের অসুস্থ হয়ে গেল। এরপরও মঞ্চের কাজ করে গেছি। আমি মনে করি, একটা করলে আরেকটা করা যায় না।’

জাহিদ হাসান
ছবি : প্রথম আলো

কিন্তু প্রস্তাব তো পেয়েছেন? ‘হয় কি, ইফ ইউ আর নট ইন দ্য সিন, তখন ওরা (পরিচালকরা) কারও কথা মাথায়ও রাখে না। সত্যি কথা বলতে প্যাকেজ নাটকের কাজ করার আগ্রহটাও অপেক্ষাকৃত আমার কম ছিল। মানটাও বজায় রাখা সম্ভব হয় না তো। ওয়েবে নতুন একটা আকর্ষণ তৈরি হয়েছে, খুব ভালো মানের কিছু কাজ তৈরি হচ্ছে। ভালো মানের পরিচালকেরাও কাজ করছেন। আমি তো শিল্পী, ভালো কাজের প্রতি বাড়তি আকর্ষণ থাকাটাই স্বাভাবিক। পিপলু যখন বলে যে, আপা করেন—না তো করা যায় না। অমিতাভ রেজা, রবিউল আলম রবিও যদি বলে, করতে হয়। কারণ তাঁদের চিন্তাভাবনার জায়গাটা দারুণ। রবির ‘ঊনলোকিক’ দেখে তো আমি এমন চমৎকৃত, এখন আমার তো তাদের পরিচালনায় কাজ করতে ইচ্ছে করবেই। এই জায়গা তো প্যাকেজ নাটকে ছিল না।’

দীর্ঘ বিরতির পর মঞ্চের বাইরে এসে কল্পনায় কাজ করতে গিয়ে মুগ্ধ সারা যাকের। তিনি বললেন, ‘গল্প থেকে শুরু করে, পর্দার লুক কী হবে তা নিয়ে অনেক প্রস্তুতি। বহুদিন পর শুটিং করে বেশ ভালো লেগেছে। অনেক যত্নের ছোঁয়া পেয়েছি।’ অভিনীত চরিত্রটি সম্পর্কে জানানো বারণ আছে, তাই এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি সারা যাকের। অ্যান্থলজি চলচ্চিত্রের ভাবনাটাও দারুণ। তিনি বলেন, ‘সেপারেট স্টোরিজ ইন দ্য সেম আমব্রেলা। এই চলচ্চিত্রের জন্য বেশ কয়েক বছর পর রাত দুইটা–আড়াইটা পর্যন্ত শুটিং করেছি। বেশ আনন্দ নিয়েই কাজটা করেছি।’

সারা যাকের

‘কল্পনা’ পরিচালকের সঙ্গে একটা সময় একই থিয়েটারে কাজ করা হয়েছিল। তবে এবারই প্রথম তাঁর পরিচালনায় কাজ করছেন জাহিদ হাসান। পিপলু বলেন, ‘শুটিংয়ে ভালোই মুড তৈরি করে দেয়। আমার মনে হয়েছে পিপুল ও তাঁর ডিওপি জানে যে তাঁরা কী চায়। যেখানে এখনকার অনেকে তো কনফিউজড।’

সারা যাকেরকে কিংবদন্তি শিল্পী উল্লেখ করে জাহিদ হাসান জানান, সারা ভাবি কাজ খুবই সিরিয়াসলি নেন। কল্পনা চলচ্চিত্রের জন্য জাহিদ হাসান সাড়ে তিন মাস ধরে দাড়ি কাটেন না। ভিন্ন ধরনের একটা লুকে তাঁকে দেখা যাবে।

তাই এই সময়টায় নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরেও বের হচ্ছেন না তিনি। হলেও যাতে লুক ফাঁস না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখছেন খুব। এই চলচ্চিত্রের জন্য বৃষ্টির মধ্যে কাকভেজা হয়ে শুটিং করেছেন। সারাদিন সারারাত শুটিং করে সকাল সাতটায় বাসায় ফিরেছেন। জাহিদ বলেন, একটা ভালো গল্পে সবাই যখন সিরিয়াস, তখন নিজেকেও সিরিয়াস হতে হয়। পরিবেশ ও টিমটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

জাহিদ হাসান
ছবি : প্রথম আলো

দেড় দশক পরে সারা যাকেরের সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করছেন, কেমন লাগছে? জানতে চাইলে জাহিদ হাসান জানান, নাইস। তিনি বলেন, ‘তাঁরা তো স্টেজের, অভিনয়ের নার্ভটা জানেন। জানা লোকের সঙ্গে কাজ করে সুবিধাও অনেক। আমি যদি একটা উদাহরণ দিই, কোরবানির সময় পেশাদার কসাই দিয়ে গরু জবাই এবং রিকশাওয়ালা কসাই দিয়ে গরু জবাই দিলে পার্থক্যটা বোঝা যায়। পেশাদার কসাই গরু কাটলে দেখা যায় ১৫ মিনিটে সুন্দরভাবে শেষ হয়। আর রিকশাওয়ালা মাংস থেঁতলে ফেলে। সময়ও লাগায় ৫–৭ ঘণ্টা। মাংসের চেহারাও ভালো থাকে না। যাঁরা পেশাদার, তাঁরা সুনিপুণভাবে দ্রুত সময়ে করে ফেলেন। অভিজ্ঞতার মুনশিয়ানা এখানেই। একজন অভিজ্ঞ অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কাজ করাটাই অন্যরকম। আরেকভাবে বললে, একজন গুড টিচার একটি কঠিন অঙ্ক খুব সহজভাবে বোঝান। যাঁরা ব্যাড টিচার, তাঁরা একটা সহজ অঙ্ককে এমনভাবে বোঝান যে ছাত্রদের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক তৈরি হয়।