নীতিমালাকে ব্যবসাবান্ধব রাখার সুপারিশ

ওটিটির নীতিমালায় আন্তর্জাতিকতার প্রতিফলন থাকা দরকার

নিরাপত্তা ছাড়পত্রের পর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নিবন্ধনের মাধ্যমে ওটিটি (ওভার দ্য টপ) প্ল্যাটফর্ম চালাতে হবে। প্রচারিত অনুষ্ঠানগুলোকে বয়সের ভিত্তিতে উপস্থাপন করতে হবে আর এসব নিয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে, তা নিষ্পত্তি কর্মকর্তার মাধ্যমে সমাধা করতে হবে। এ রকম ১৯টি অনুচ্ছেদে ওটিটি কনটেন্টভিত্তিক পরিষেবা প্রদান এবং পরিচালনা নীতিমালা ২০২১–এর খসড়া গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে ৭ মার্চের মধ্যে এ খসড়া নীতিমালা বিষয়ে মতামত বা সংশোধনও আহ্বান জানানো হয়েছে, যার শেষ দিন আজ।

নিবন্ধিত ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ইচ্ছাকৃত বা বিদ্বেষপূর্ণভাবে কোনো কনটেন্টের মাধ্যমে জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, রাষ্ট্রীয় মূলনীতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অসম্মান হয়, এ রকম কনটেন্ট উপস্থাপন করতে পারবে না। শিশুর অংশগ্রহণে যৌনাচার বা যৌনাচারে উদ্দীপনা সৃষ্টি; জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা কোনো সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে; সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদকে উৎসাহিত করে বা রাষ্ট্র ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নষ্ট করে; সে রকম কনটেন্ট তৈরি বা সম্প্রচার করা যাবে না। রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন বা উপযুক্ত আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ কোনো উপকরণ দেখানো যাবে না। ওটিটির কনটেন্ট প্ল্যাটফর্মে অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। কনটেন্টকে অভিভাবকদের তত্ত্বাবধানে, বয়সের ভিত্তিতে, প্রাপ্তবয়স্কদের, সাধারণ দর্শকের প্রদর্শনযোগ্য—এ রকম কয়েকটি ভাগে দেখানো যাবে। অভিযোগ উঠলে নিষ্পত্তি ও আপিলের ক্ষেত্রে নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮–এর ৮ ধারার বিধানমতে ব্যবস্থা নেবে। ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজের জন্য কনটেন্ট তৈরিতেও এ নীতিমালা অনুসরণ করতে হবে।

দেশী স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকি ১৯৮টি দেশ থেকে ৩১টি মুদ্রায় সেবামূল্য আয় করে

খসড়া এ নীতিমালায় নিবন্ধন ফি উল্লেখ থাকলেও উঠতি শিল্প বা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য কর রেয়াতবিষয়ক কোনো সুযোগের উল্লেখ নেই। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এ খসড়া নীতিমালা নিয়ে মতামত দিয়েছে। তারা বলছে, এ নীতিমালা অনেক ক্ষেত্রেই সৃজনশীল শিল্পকর্ম এবং স্বাধীন মতপ্রকাশের বাধা হয়ে দাঁড়াবে। অনুচ্ছেদ ১৪–এর উল্লেখ করে তারা জানিয়েছে, নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ চাইলে যেকোনো নিষিদ্ধ কনটেন্ট অপসারণে ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে বাধ্য করতে পারবে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের পরিপন্থী। সংবিধান যেসব মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দিয়েছে, তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও ‘ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্র্যাকটিস’–এর সামঞ্জস্য রেখে এ নীতিমালা প্রণয়ন করা আবশ্যক। ১৩.৩ অনুচ্ছেদ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের ধারা ২৮–এর অনুরূপ (কোনো ওয়েবসাইট বা ইলেকট্রনিক আকারে যেকোনো তথ্য প্রকাশ বা সম্প্রচার, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধে আঘাত করে)। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের (ডিএসএ) ২৮ ধারা অনেক ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে এবং এ বিষয়ে অনেক উদ্বেগ–উত্কণ্ঠা রয়েছে। ফলে এ বিধানের অপব্যবহারের ঝুঁকি থেকেই যায়, যা ইতিমধ্যে বিভিন্ন ঘটনায় প্রকাশিত। উদাহরণ হিসেবে তারা ঝুমন দাশ এবং দীপ্তি রানী দাস, ১৭ বছর বয়সী এক কলেজ ছাত্রীর কথা উল্লেখ করেছে; যাঁদের ‘অনলাইন কনটেন্ট শেয়ার করার মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত’–এর অভিযোগে পৃথক ঘটনায় ডিএসএর অধীন গ্রেপ্তার করা হয়। উভয়ের জামিন নাকচ করা হয় এবং কয়েক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ধরনের বিষয়গুলো আইনের দৃষ্টিতে সমানভাবে এবং বৈষম্যহীনভাবে কাজ করা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এ খসড়া নীতিমালায় ডিএসএর মতো অ্যাক্ট যুক্ত হলে একই ঘটনা ঘটার সুযোগ তৈরি হয়।

দেশীয় প্ল্যাটফর্ম দেশের টাকা দেশেই রাখবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াবে

স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকির প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা রেদওয়ান রনি বলেন, ‘খসড়া নীতিমালায় কনটেন্ট স্ট্রিমিংয়ে আন্তর্জাতিক নীতি ও দেশীয় প্ল্যাটফর্মের জন্য কর রেয়াতসহ অন্যান্য ব্যবসাবান্ধব নীতি আশা করেছিলাম। কারণ, দেশীয় প্ল্যাটফর্ম দেশের টাকা দেশেই রাখবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াবে। চরকি পরিচালনার অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি, ব্যবহারকারীরা ১৯৮টি দেশ থেকে ৩১টি মুদ্রায় মূল্য পরিশোধ করেন। কনটেন্ট স্ট্রিমিং নতুন প্রযুক্তির আন্তর্জাতিক এক মাধ্যম। এর নীতিমালায় তাই সম্প্রচার নীতিমালার বদলে আন্তর্জাতিকতার প্রতিফলন থাকা দরকার। এ জন্য ওটিটি বিজনেসের সঙ্গে জড়িত পক্ষগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করে নীতিমালা চূড়ান্ত করা হবে, সেই প্রত্যাশা করছি।’

নীতিমালায় উঠতি শিল্প বা দেশীয় প্রতিষ্ঠানের জন্য কর রেয়াতবিষয়ক কোনো সুযোগের উল্লেখ নেই

ওটিটির ক্ষেত্রে আমেরিকা মহাদেশের যুক্তরাষ্ট্র বা এশিয়ার ভারত, সিঙ্গাপুরের নীতিমালা কেমন, সেসবও মাথায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন কোনো কোনো নির্মাতা। এ ছাড়া নীতিমালাকে ব্যবসাবান্ধব রাখার সুপারিশও করেছেন কেউ কেউ।

OTT_Policy_Final (Draft).pdf