আবার রকস্ট্রাটা

রকস্ট্রাটার ব্যান্ডের সদস্যরা। ছবি: প্রথম আলো
রকস্ট্রাটার ব্যান্ডের সদস্যরা। ছবি: প্রথম আলো

২ জানুয়ারি, দুপুরবেলা। কারওয়ান বাজারের সিএ ভবনের পাশের রাস্তা। পেছনে প্রধান সড়কে ছুটে যাচ্ছে ব্যস্ত মানুষ আর যানবাহন। শীতের মেঘলা আকাশে সূর্য নিরুদ্দেশ। হঠাৎ করেই গলির মুখে চারটি মুখের আবির্ভাব। চকিতেই যেন কারওয়ান বাজারের ওই অংশটুকু ফিরে গেল ৩০ বছর আগে। লম্বা লম্বা পা ফেলে হেঁটে আসছেন মইনুল ইসলাম, ইমরান হোসেইন, মাহবুবুর রশীদ ও আরশাদ আমিন। বাংলা হেভি মেটাল ব্যান্ডের সঙ্গে যাঁদের পুরোনো পরিচয়, তাঁদের নিশ্চয়ই ব্যাখ্যার প্রয়োজন নেই। নতুন প্রজন্মের জন্য বলে রাখা ভালো, এই চারজন বাংলাদেশের হেভি মেটাল ব্যান্ডের অন্যতম পথিকৃৎ রকস্ট্রাটা ব্যান্ডের সদস্য। কাল শুক্রবার লাইভ স্কয়ারের আয়োজনে ফার্মগেট খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ মিলনায়তনে গাইবেন তাঁরা ‘নির্বাসন’, ‘কালো রাত’, ‘মুক্তি চাই’ ও ‘নতুন স্বাদের খোঁজে’র মতো গানগুলো। 
কারওয়ান বাজারে সেদিন তাঁদের দেখে এগিয়ে যাই আমরা। ‘আমরা রকস্ট্রাটার ভক্ত!’ বলতেই চারজনের মুখে বিস্ময় ও আনন্দের ককটেল, ‘তোমরা এখনো আমাদের গান শোনো!’
রকস্ট্রাটার বাস্তব জগতের টাইমলাইন স্ক্রল করতে করতে আমরা চলুন ঘুরে আসি ১৯৮৪ সাল থেকে। সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলের দুই বন্ধু মইনুল ইসলাম ও ইমরান হোসেইন তত দিনে একটা হেভি মেটাল ব্যান্ড দাঁড় করার চেষ্টা করছেন। সঙ্গে যোগ দিলেন আসিফ ইকবাল, আসিফ আলম ও শাফকাত জান চৌধুরী। দরজায় কড়া নাড়ছে এসএসসি পরীক্ষা। অগত্যা দল থেকে সড়ে দাঁড়ালেন ড্রামার আসিফ ইকবাল। যোগ দিলেন মাহবুবুর রশীদ। ভূগোল বইয়ের একটা শব্দ মাথায় গেঁথে গেল তাঁর, রকস্ট্রাটা। ব্যস, ১৯৮৫ সালে বাংলা হেভি মেটাল ব্যান্ডে যোগ হলো নতুন এক নাম, রকস্ট্রাটা। পরের বছরই ব্যান্ডের সদস্যরা ভর্তি হলেন নটর ডেম কলেজে। দলে যোগ দিলেন আরশাদ আমীন।
রকস্ট্রাটার প্রথম অ্যালবামটি বেরিয়েছিল দলের নামে ১৯৯২ সালে। এরপর পড়াশোনা, কর্মজীবনের সুবাদে দলের সদস্যরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলেন ওই ভূগোল বইয়ের মানচিত্রের নানা প্রান্তে। দীর্ঘ ২২ বছর পর, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বেরোয় ব্যান্ডটির দ্বিতীয় অ্যালবাম, নতুন স্বাদের খোঁজে। কাল শুক্রবার এই দুই অ্যালবামের প্রায় সব কটি গান নিয়ে হাজির হচ্ছে রকস্ট্রাটা। কেমন লাগছে? উত্তর দিলেন মইনুল, ‘আমরা অনেক দিন গানের মধ্যে ছিলাম না। ফলে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। এখনকার তরুণেরা নানা স্বাদের গান শোনে, অনেক জানে, বোঝে। ফলে বিষয়টা বেশ চ্যালেঞ্জিং!’
চ্যালেঞ্জিং হলেও নতুন-পুরোনো মিলিয়ে ভক্তদের সাড়া পেয়ে আশাবাদী ইমরান হোসেইন, ‘আমরা অবাক হই, এখনো অনেকে আমাদের দেখলেই চিনতে পারে! বিশেষ করে এখনকার তরুণ ব্যান্ডশিল্পীরা আমাদের গানগুলো এত চমৎকারভাবে বাজায়, দেখে-শুনে অবাক হই!’
মাঝে যোগ দিলেন আরশাদ, ‘এ কারণেই মনে হয়, আমরা যা করেছি, তাতে সফল। শুরুর দিকে হেভি মেটাল ঘরানার গান সবাই নিতে পারত না। তার পরও আমরা ঠিক করেছিলাম, আমরা যা ভালোবাসি তা-ই করব।’
তবে ব্যান্ডের সবাই যখন ছুটিছাটা জোগাড় করে দেশে এসেছেন কনসার্টের জন্য, তখন বর্তমান ভোকাল মুশফিক আহমেদ শারীরিকভাবে অসুস্থ। ফলে কালকের কনসার্টে ভোকালে থাকবেন পাঁচ তরুণ-ক্রিপটিক ফেইটের শাকিব, রেডিও অ্যাকটিভের পলাশ, পাওয়ারসার্জের জামশেদ, আর্টসেলের লিঙ্কন ও আরবো ভাইরাসের সুফি। ‘কনসার্টের পর কী করবেন? নতুন অ্যালবাম, নতুন গান?’ শেষ প্রশ্নে রকস্ট্রাটার ব্যান্ডের সবার উত্তর একই, ‘এখন কেবল কনসার্ট নিয়েই ভাবছি, পরে কী হবে ভাবিনি।’