আমার মন মজাইয়ারে...শুনুন ভাইরাল সেই খুদে গায়কের গল্প
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক সপ্তাহ ধরে ঘুরছে ভিডিওটা। আলো ঝলমলে মঞ্চে দোতারা নিয়ে গাইছে ১১ বা ১২ বছরের বালক। কণ্ঠ উজাড় করে ছেলেটি গাইছে, ‘আমার মন মজাইয়ারে দিল মজাইয়া মুরশিদ নিজের দেশে যাও…’ দুই বাংলায় চর্চিত বাউল গানটি বালকের কণ্ঠে শোনার মুহূর্তে মন কেড়ে নেয়।
অনুষ্ঠানে বাংলা বাউল গানটি গাইতে গাইতে একসময় বালক ধরে ‘টুটা টুটা এক পারিন্দা এইসে টুটা, ফির উড় নেহি পায়া...’ সব মিলে দারুণ সাড়া ফেলে এই পরিবেশনা।
ভারতীয় জাতীয় পর্যায়ে গানের প্রতিযোগিতা ‘সুপারস্টার সিঙ্গার’–এ অংশ নিয়ে মঞ্চে গেয়েছে গানটি। গানটি শেষ হতে না হতেই মঞ্চে থাকা প্রতিযোগিতার বিচারক অলকা ইয়াগনিক, হিমেশ রেশামিয়া আর জাভেদ আলী এত মুগ্ধ হন যে একে একে ‘সিলেক্ট’ বাটনে চাপ দেন। একসময় ছেলেটি শোনায় তাঁর গানের জগতে আসার গল্প। ভিডিওর একটি অংশে নেপথ্যে বাংলাদেশের শামসুল হক চিশতী ওরফে চিশতী বাউলের ‘যদি থাকে নসিবে আপনি আপনি আসিবে’ গানটিও শোনা যায়।
বিচারকেরা প্রশংসা করে তার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ভিডিওটি। বাংলাদেশে থেকেও অনেকে অনুষ্ঠানে ওই অংশের ভিডিও শেয়ার দিয়েছেন। অনেকেই জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশের বাউল গান গাওয়া ছেলেটির পরিচয়।
গানের পাশাপাশি আরেকটি প্রামাণ্যচিত্রে জানা যায় বালকের পরিচয়। প্রাঞ্জল বিশ্বাসের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ায়। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম। প্রাঞ্জল জানায়, তার গানের জগতে আসার গল্পটা। গল্প বটে। একটা সাইকেল ছিল তার। সাইকেলটি একদিন হারিয়ে যায়। সেই প্রিয় সাইকেল খুঁজতে খুঁজতে চলে যায় দূর গ্রামে। হাঁটতে হাঁটতে একটা গাছের নিচে দেখা হয় এক বাউল ফকিরের সঙ্গে। সেই বাউল ফকিরের কাছে প্রাঞ্জল জানতে চায়, আশপাশে কোনো সাইকেল দেখেছে কি না? বাউল জানান, সাইকেল দেখেননি। এ পর্যায়ে সেই বাউল তার হাতে তুলে দেন দোতারা। আর সেটাই এখন সব সময়ের সঙ্গী।
জীবনদর্শনের এমন পাঠ সে পেয়েছে যে বড় হয়ে ‘ফকির’ হওয়ার স্বপ্নই দেখে ছেলেটি। প্রামাণ্যচিত্রে ছেলেটির সাইকেল হারিয়ে যাওয়া আর দোতারা উপহারের গল্প শুনে মঞ্চে থাকা বিচারক হিমেশ রেশামিয়া মন্তব্য করেন, এ জন্যই তো প্রিয় কিছু হারালে মন খারাপ করতে হয় না। সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে দ্বিগুণ ফিরিয়ে দেন। প্রামাণ্যচিত্রে প্রাঞ্জলের মা–বাবারও সাক্ষাৎকার দেখানো হয়। সেখানে তাঁরা জানিয়ে দেন, বাউল জগতে গেলে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। তবে, ছেলে যেন আজীবন গানেরই সাধনা করে।
প্রায় দুই বছরের বিরতির পর ছোট পর্দায় শুরু হয়েছে ‘সুপার সিঙ্গার সিজন ২’। প্রথম সিজন জিতেছিল কলকাতার প্রীতি ভট্টাচার্য। জানা গেছে, এবারের দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রশিক্ষকেরা বাছাই করে নিয়ে এসেছেন প্রতিযোগীদের। এখান থেকেই আপাতত চলছে প্রাথমিক বাছাইপর্ব।
এই পর্বে যারা সিলেক্ট হবে, তারা পৌঁছাবে পরের সিলেকশন রাউন্ডে। আর সেখান থেকে শুরু হবে শো জয়ের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে শুরুতেই যে সাড়া মিলেছে, তাতে ‘সুপারস্টার সিঙ্গার’ নিয়ে আশাবাদী টিভির সামনে বসে থাকা দর্শকও। এর মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত প্রতিযোগী প্রাঞ্জল বিশ্বাস।
শো-তে ১৫ বছরের নিচের প্রতিযোগীদের ঘষামাজা করে নেবেন প্রশিক্ষক অরুণিতা কাঞ্জিলাল, পবনদীপ রাজন, সায়লি কাম্বলে, দানিশ আর সালমন আলী। প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্বে প্রাঞ্জলের গান শুনে তাকে কোলে তুলে নেন সালমন আর দানিশ। মঞ্চে গান শুনে আদর করে যান অলকা-হিমেশরা।