আমার রাইট কোথায়

সাইদুল হাসান স্বপন
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
পুরোনো নামে যাত্রা করল নতুন ব্যান্ড এলআরবি (লিটল রিভার ব্যান্ড)। দলনেতা পুরোনো এলআরবির সাইদুল হাসান স্বপন। নিজের সংগীতগুরু আইয়ুব বাচ্চুর তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে ব্যান্ড করার পেছনের ঘটনা, অভিমান আর আগামীর স্বপ্ন নিয়ে কথা বললেন তিনি।

প্রশ্ন :

অভিনন্দন। আবার এলআরবি করলেন?

কী করব? তিন বছর বেকার বসে ছিলাম। সে জন্য ব্যন্ড মিউজিকে ফিরলাম। আমি আর বাচ্চু ভাই যেটা করেছিলাম, লিটল রিভার ব্যান্ড, সেটাই শুরু করলাম নতুন লাইনআপ নিয়ে। যেহেতু বাচ্চু ভাইয়ের পরিবার আমাকে এলআরবি করতে দেবে না। ৩০ বছর পর জানতে পারলাম, এলআরবি নামটি নাকি আমি ব্যবহার করতে পারব না।

প্রশ্ন :

কী ঘটেছিল?

আমার কাছে একটা উকিল নোটিশ এসেছিল। সেখানে বলা হয়েছে, এলআরবি নামটা আর ব্যবহার করা যাবে না। আমারও তো কিছু করে খেতে হবে। আমার পরিবার আছে। আর দেখলাম, বাংলাদেশের কপিরাইট আইন সারা পৃথিবীর কপিরাইট আইনের থেকে আলাদা। এলআরবির প্রতিটি অ্যালবামে আমি বাজিয়েছি। প্রতিটি অ্যালবামে আমার ছবি আছে। তাহলে আমার রাইট কোথায়? এলআরবিতে টুটুল, আমি, রিয়াদ ছিলাম; আমাদেরও তো ছোট একটা অংশ থাকার কথা। সরকারিভাবে যদি এলআরবির গানের কপিরাইটের অর্থ বণ্টন করা হয়, সেটা সুষ্ঠুভাবে হওয়া উচিত ছিল। সেটা কি হলো? এটা সরকারের কাছে আমার প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক কপিরাইট আইন আর বাংলাদেশের কপিরাইট আইন কি আলাদা? একটা গানে গীতিকার, সুরকার, গায়ক, বাদ্যযন্ত্রী—সবার অধিকার থাকার কথা।

পুরাতন এলআরবির বাঁ থেকে বাচ্চু, টুটুল, মিল্টন, স্বপন
ছবি: সংগৃহীত

প্রশ্ন :

আপনাদের নতুন গানটা ভালো হয়েছে।

ধন্যবাদ। এটা কেবল বাচ্চু ভাইকে স্মরণ করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে করা।

প্রশ্ন :

আপনাদের প্ল্যান কী?

নতুন গান কম্পোজ শুরু করেছি। পরের মাস থেকে একটা করে গান ছাড়ব। বাচ্চু ভাই যেমন একটা একটা করে গান ছাড়তেন। আগে তো আজকের মতো অবস্থা ছিল না। এখন অনেক প্ল্যাটফর্ম আছে, আমরা সেসব ব্যবহার করে গান ছাড়ব।

প্রশ্ন :

গত তিন বছর কী করলেন?

গত তিন বছর চেষ্টা করেছিলাম বাচ্চু ভাইয়ের লিগ্যাসি ধরে রাখার। অন্য সদস্যরা যেভাবে বলেছে, সবার মত নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি, তবু যাতে ব্যান্ড টিকে থাকে। একপর্যায়ে দেখলাম, যে যার নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে। একজন চট্টগ্রাম গিয়ে প্রোগ্রাম করা শুরু করেছে। ‘বাচ্চু ভাই নেই, এই ব্যান্ড আর দাঁড়াবে না,’ এই বলে একজন সরে পড়ল। বাধ্য হয়ে আমাকে এ উদ্যোগ নিতে হলো।

নতুন লিটল রিভার ব্যান্ড (এলআরবি)

প্রশ্ন :

নতুন লিটল রিভার ব্যান্ডে এখন কে কে আছেন?

পুষ্প, আনান, রিয়াদ, রনি আর আমি। এর আগে ওয়ারফেজের সাবেক ভোকাল মিজান, কি–বোর্ডিস্ট ও ভোকাল রনি, ড্রামার রিয়াদ আর আমি মিলে চেষ্টা করেছিলাম। পাঁচটি শো করেছিলাম। কারমাইকেল কলেজের ১০০ বছর পূর্তি, চট্টগ্রাম মেডিকেলের শো, গ্রামীণফোনের শো, সিলেটের শো। বেশ ভালোই যাচ্ছিল। তারপর করোনা এসে সব থামিয়ে দিল। তারপর বাচ্চু ভাইয়ের পরিবারের কাছ থেকে নোটিশ এল। অথচ তাঁর ছেলে-মেয়েরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল, আমার বাবার কলিগরা চাইলে এলআরবি নাম নিয়ে ব্যান্ডকে এগিয়ে নিতে পারেন। আমি সেভাবেই করছিলাম। যাহোক, আমি বাচ্চু ভাইয়ের সম্মানে ওটা বন্ধ করে দিয়েছি।

প্রশ্ন :

আইয়ুব বাচ্চু আপনার কাছে কেমন ছিলেন?

মানুষের জীবনের কয়েকটা ভাগ। একেকটা ভাগে অনেকগুলো মানুষ থাকে। শৈশব-কৈশোরে মা–বাবা, তারুণ্যে বন্ধুবান্ধব, যৌবনে স্ত্রী-সংসার। একসময় বার্ধক্য। আমার জীবনের দুই–তৃতীয়াংশ আমি বাচ্চু ভাইয়ের সঙ্গে পার করেছি। আমরা দুজন ব্যাচেলর জীবন কাটিয়েছি একসঙ্গে। আমি তাঁর কাছে গিটার শিখতে গিয়েছিলাম। অসাধারণ একজন মানুষ ছিলেন তিনি, অসাধারণ একজন বড় ভাই ছিলেন। আমার মা–বাবা তাঁর হাতে আমাকে তুলে দিয়েছিলেন। আমার বড় ভাই, গার্ডিয়ান, ওস্তাদ, মেন্টর—সবই তিনি। তাঁকে হারিয়ে তাঁর পরিবার হয়তো রক্তের সম্পর্কের একজন স্বজন হারিয়েছে, কিন্তু আমি আমার সবকিছু হারিয়েছি। তিনি আমার সবকিছু। আমাকে বিয়ে দিয়েছেন তিনি, আমার বাচ্চাকে তিনি জন্মাতে দেখেছেন। সব বিষয়ে তিনি আমার পরিবারের অভিভাবক ছিলেন। তাঁকে ছাড়া আমি ভাবতেই পারি না। গত তিন বছর আমি কাজ করতে পারিনি। এক বছর কাজ করার চেষ্টা করেছিলাম, তাঁর লিগ্যাসি ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। নানা কারণে সেটা আর হলো না। যেহেতু আমার কিছু করার নেই, চেষ্টা করছি নতুন করে গানবাজনা শুরু করার।

আইয়ুব বাচ্চুর সেলফিতে স্বপন

প্রশ্ন :

নতুন দল গড়লেন। তাঁদের সঙ্গে অধিকার নিয়ে দ্বন্দ্ব যাতে না হয়, সে জন্য কী উদ্যোগ নেবেন?

শুরুতেই সবাইকে বলে দিয়েছি, যার কাজ সে করবে। দলে সবাই সমান। যদি ১০ টাকাও আসে, সেটা সমান ভাগে সবাই পাবে। আমি বয়সে বড় বলে বেশি নেব, সে রকম হবে না।