এত দিন কথাটা চেপে রাখল কী করে সে

রাইশা ফাইরোজ ইপা
ছবি: সংগৃহীত

‘আমি একটা ফাঁকিবাজ!’ নিজের সমালোচনা করল ইপা। তারপর প্রশংসা করল নিজের ছোট বোনের। বলল, ‘পড়াশোনায় ইশা অনেক সিরিয়াস। ওকে দেখলে আমার মনে হয়, আমাকেও পড়তে হবে।’ ফেসবুক বায়োতে লেখা আছে—অ্যান অ্যাসপায়ারিং এয়ারফোর্স অফিসার। যদিও বিমানবাহিনীতে সুযোগ পাচ্ছে না সে। এখন তাঁর দ্বিতীয় লক্ষ্য সেনাবাহিনী! সৈনিক হতে চায় রিয়েলিটি শো ইয়াং স্টার চ্যাম্পিয়ন রাইশা ফাইরোজ ইপা।

মঞ্চে গাইছে রাইশা ফাইরোজ
ছবি: সংগৃহীত

তিন মাস নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়েছিল রাইশা। নানা রকম গানের অনুশীলন আর গ্রুমিং করে কেটেছে তাঁর। কীভাবে হাঁটতে হবে, কোন গানে কোন কথায় কেমন অভিব্যক্তি, সব শেখানো হয়েছে তাঁকে। শুরু থেকেই মা উম্মে কুলসুম লুনা ছিলেন মেয়ের ছায়াসঙ্গী। এই প্রতিযোগিতায় জোর করে মা-ই পাঠিয়েছেন তাঁকে। সেই ঘটনা জানিয়ে ইপা বলে, ‘আমি তো হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কত রিয়েলিটি শোতে গেলাম, কোথাও কিছু হলো না। যেখানেই গেছি, বাদ পড়েছি। কনফিডেন্স একদম শেষ হয়ে গিয়েছিল। মা ধরে-বেঁধে একটা গান ভিডিও করে পাঠালেন। ব্যস, সবার দোয়ায় আমি চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলাম।’ মনে করিয়ে দেওয়া যাক, আরটিভির সংগীতবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘ইয়াং স্টার’-এ চ্যাম্পিয়ান হয়েছে রাইশা ফাইরোজ ইপা। ৯ ফেব্রুয়ারি টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয় প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত অনুষ্ঠান। যদিও এর আগেই সবকিছু শেষ, কিন্তু কাউকে কিচ্ছু বলেনি সে। অনুষ্ঠান প্রচারের পর বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনেরা অবাক হয়ে সবাই বলেছেন, এত দিন কথাটা চেপে রাখল কী করে সে!

আরটিভির সংগীতবিষয়ক রিয়েলিটি শো ‘ইয়াং স্টার’-এ চ্যাম্পিয়ান হয়েছে রাইশা ফাইরোজ ইপা
ছবি: সংগৃহীত

সিলেটের হবিগঞ্জের মেয়ে ইপা থাকে ঢাকায়। এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা দেবে। চার বছর বয়স থেকে গান শেখা শুরু করে আবু মোতালেব খানের কাছে। সপরিবার ঢাকায় চলে আসার কারণে শেখায় ছেদ পড়েছিল। পরিবারের অনুপ্রেরণায় ‘গাইতে গাইতে গায়েন’ হয়ে ওঠা ইপা চ্যানেল আই গানের রাজা রিয়েলিটি শোতেও অংশ নেয়। বয়স দুই বছর বেশি ছিল বলে মেগা অডিশন থেকে বাদ পড়ে যায়। তারপর ইয়াং স্টার-এ পাঠায় নিজের গানের নমুনা। ইপার কাছ থেকে জানা গেল—‘এই প্রতিযোগিতার স্টুডিও রাউন্ডে যখন টিকে গেলাম, তখন আমার কনফিডেন্স ফিরে এল। পিয়ানো রাউন্ড থেকে টপ থার্টি সিক্স কনটেস্টটেন্টকে নিয়ে শুরু হয় মূল প্রতিযোগিতা।’ টেলিভিশনে প্রতিযোগিতাটি যাঁরা দেখেছেন, তার পরের ঘটনা সবারই জানা। সেই ৩৬ প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে এগিয়ে এল ইপা। সে না হলে কে হতো চ্যাম্পিয়ন? এই প্রশ্নে সে বলল, ‘টপ টেনে আমরা যারা ছিলাম, তারা সবাই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতো। যেকোনো কারণে কেউ হয়তো কম নম্বর পেয়েছিল, কিন্তু সবাই ভালো গায়।’

পরীক্ষার পর আবারও গান শিখতে শুরু করবে ইপা
ছবি: সংগৃহীত

ইপার কণ্ঠে ‘আজ ফিরে না গেলেই কি নয়’ শুনে প্রশংসা করেছেন ফেরদৌস ওয়াহিদ আর রবীন্দ্রসংগীত ‘আমার মন মানে না’ শুনে খুশি হয়েছিলেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। এভাবে প্রতিযোগিতার বিভিন্ন পর্বে ‘কেন এই নিঃসঙ্গতা’, ‘আমার এ দুটি চোখ’, ‘আমি তোমাকেই বলে দেব’ গানগুলো গেয়ে প্রশংসা পেয়েছে ইপা। এই অনুপ্রেরণাকে সঙ্গী করে পরীক্ষার পর আবারও গান শিখতে শুরু করবে সে। তবে এইচএসসির পর সেনাবাহিনীতে ঢোকার জন্য আইএসএসবিতে যোগ দেবে। এখন পর্যন্ত এটাই তাঁর ইচ্ছা। তবে মা-বাবার ইচ্ছা তাঁকে ডাক্তারি পড়ানো।