‘...এসব সুযোগ না এলে আজকে লতা মঙ্গেশকর বলে কেউ থাকত না’

গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হলেন ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর। দুই বছর আগে তাঁর একটি দীর্ঘ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলেন ভারতীয় সাংবাদিক খালিদ মোহাম্মদ। সেটি লতার শেষ সাক্ষাৎকার হিসেবে প্রয়াণের দিন প্রকাশ করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য কুইন্ট। সাক্ষাৎকারটিতে নিজের জীবনের নানা অজানা দিক খোলাখুলিভাবে তুলে ধরেছেন লতা। যাতে ওঠে এসেছে পারিবারিক সংগ্রাম, ক্যারিয়ার নিয়ে একেবারে শুরুর কথা, রাজনৈতিক চিন্তা, প্রেম ও নানা বিতর্ক। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি অনুবাদ করেছেন প্রথম আলোর সহসম্পাদক রাফসান গালিব

উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর

প্রশ্ন :

খালিদ: সাত দশক ধরে আপনার অর্জনগুলোর দিকে কখনো ফিরে তাকিয়েছেন কি না? আরও কিছু ইচ্ছা পূরণ করা বাকি রয়ে গেছে—এমন চিন্তা কি আপনাকে পীড়া দেয়? নাকি তৃপ্তি ও পরিতুষ্টি অনুভব করেন?

লতা: নিজের অর্জন মূল্যায়ন করার মতো মানুষ আমি নিজেকে মনে করি না, সেরকম গভীরভাবে ভাবার মানুষও আমি নই। এখন পর্যন্ত সবকিছুই আমার ঝাপসা লাগে। যেন শুরুটা হয়েছিল গতকালই। ফলে আজকে অনেক কিছুই করতে হবে—এমন ভাবনা কাজ করে। বয়সের কারণে বা সংগীতের রুচি এবং ট্রেন্ডে বড় ধরনের পরিবর্তন এলেও একজন সংগীতশিল্পী আসলে থামতে পারে না। অর্জনের দিকে ফিরে তাকাই কি না, এর উত্তরে আমি বলব, সেখানে অপরিসীম কৃতজ্ঞতাবোধ আমি অনুভব করি। ঈশ্বর, আমার বাবা, আমার গুরুরা এবং আমার জাতি—সবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা, অধ্যবসায় ও নিষ্ঠার সঙ্গে যা কিছু আমি করেছি, সেদিকে তাঁরাই আমাকে পথ দেখিয়েছেন। অনেক শিল্পী ঋণ ভুলে যান, কারা তাঁদের পথ দেখিয়েছেন। সাফল্যের মোহে সবকিছু বিস্মৃত হয়ে যায়। কৃতজ্ঞতাবোধ একজন শিল্পীকে ভারসাম্যপূর্ণ ও ধীরস্থির রাখে। তাঁকে আশায় অটল রাখে। অতীত নিয়ে পড়ে থাকার কিছু নেই। আত্মপ্রেমী মানুষই অতীতের অর্জন নিয়ে গড়াগড়ি খায়, আজ এবং আগামীকালকে অস্বীকার করে। আমার কণ্ঠস্বর ছেড়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমি গান চালিয়ে যেতে চাই। গানই একমাত্র বিষয়, যা আমি জানি।

প্রশ্ন :

খালিদ: তাহলে ফিল্ম বা নিজস্ব রেকর্ডিংয়ে আরও কিছু আপনার কাছ থেকে আমরা শুনি না কেন, সেটি শাস্ত্রীয়, ভক্তিমূলক বা গজল, যা–ই হোক?

লতা: ফিল্ম থেকে সংগীত একেবারে হারিয়ে গেছে। আমার প্রজন্মের ফিল্মি গান সম্পূর্ণ হারিয়ে গেছে। এখন নির্মাতা এবং সুরকারেরা আমাকে বলেন, ‘বাজার বদলে গেছে। তরুণেরা সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের সংগীত এবং বিনোদন চায়।’ প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল ইফেক্ট পারদর্শী ও অভিজ্ঞ যন্ত্রবিদদের ও অর্কেস্টাল ব্যাকআপ সাপোর্টের জায়গাগুলো দখল করে নিয়েছে। ভোকালগুলো প্রায়ই এত ঝড়গতির হয় যে গানের কথা বুঝতে পারাই কষ্টকর হয়ে যায়। মানুষের অংশগ্রহণ এখন গৌণ হয়ে গেছে। মেশিনের তৈরি শব্দ ও ভয়েস টুইকিং এখানে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। নতুন সহস্রাব্দের গান শুনে কানের ওপর অত্যাচার করার চেয়ে আমি চার্টবাস্টারগুলো শোনা বন্ধই করে দিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, আগের কালের মেলোডি গানগুলোর সব সময়ের একটা বড় শ্রোতা আছে। এটা অবাক করার কিছু নয়। মূলত অতীতের গানগুলো ছিল স্পেশাল ও মানের দিকে এগিয়ে। এমনকি আমার গানগুলো নতুন করে গাওয়া থেকেও আমি বিরত থাকি। এটা অনেকটা এ রকম বলা—সবাই দেখো, অতীতেই আমি কতটা সমৃদ্ধিশালী।

প্রশ্ন :

খালিদ: আপনি কি মোটেও গান শোনেন না?

লতা: না, না, তেমনটা হলে তো আমার কান কেটে ফেলতে হবে। যখনই মনমেজাজ ভালো থাকে, তখন মেহেদী হাসান ও গুলাম আলীর গজল শুনি। বড়ে গুলাম আলী খান ও ওস্তাদ আমির খানের ধ্রুপদি শুনি। ফিল্মি গানের মধ্যে নিমগ্ন ছিলাম বলে শাস্ত্রীয় সংগীত আমি গাইতে পারিনি। আসলে আমার একই সঙ্গে পপুলার এবং ক্লাসিক্যাল উভয় ধারার গান করা উচিত ছিল।

সুর আর সংগীতই ছিল তাঁর জীবন
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

খালিদ: সেটি করেননি কেন তাহলে?

লতা: পরিস্থিতির কারণেই সেটি হয়নি। আমার বাবা (দীননাথ মঙ্গেশকর) একজন নাট্যসংগীত ব্যক্তিত্ব, হিন্দুস্তানি শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী এবং মারাঠি থিয়েটার অভিনেতা ছিলেন। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪২ সালে তিনি যখন মারা যান, আমার বয়স তখন ১৩ বছর। আমার চার-পাঁচ বছর বয়স থেকেই আমি তাঁর নাটকে অভিনয় করতাম।
আমি ছিলাম পরিবারের সবচেয়ে বড় সন্তান। পিতৃহীন অবস্থায় পরিবারের হাল আমাকেই ধরতে হয়েছিল। আমাদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ বন্ধু চলচ্চিত্র প্রযোজক মাস্টার বিনায়ক আমাকে তখন সিনেমায় রোল দিয়ে সহযোগিতা করতেন। নায়ক বা নায়িকার ছোট বোনের ভূমিকায় আমি অভিনয় করতাম। মঙ্গলা গৌর (১৯৪২), সুভদ্রা (১৯৪৬) এবং মন্দির (১৯৪৮) এমন কয়েকটি সিনেমায় আমি অভিনয় করেছি, কিন্তু আমার মন মোটেও অভিনয়ে ছিল না।

প্রশ্ন :

খালিদ: ক্যামেরার সামনে নিজেকে আত্মবিশ্বাসহীন মনে হতো?

লতা: আশ্চর্যের বিষয় হলো, ক্যামেরার সামনে আমি বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। এরপরও অভিনয়কে রীতিমতো আমি ঘৃণা করতে শুরু করলাম। কারণ ‘এখন তুমি হাসো, এখন চোখের পানি ফেলো’—এসবের কারণে নিজেকে আমার পুতুল মনে হতো। সুইচ দিয়ে একটি টিউবলাইট জ্বালানো আর বন্ধ করা মনে হতো। তা ছাড়া আমি মেকআপ করা অপছন্দ করতাম, বিশেষ করে লিপস্টিক। যেহেতু তখন সিনেমাগুলো ছিল সাদাকালো, বোঝা যাওয়ার জন্য ভারী লিপস্টিক ব্যবহার করতে হতো। অভিনয় ছেড়ে দেওয়ার পর আমি আর কখনো লিপস্টিক ব্যবহার করিনি।

প্রশ্ন :

খালিদ: সিনেমায় গানে আপনার প্রথম বড় ব্রেকগুলো ছিল, গুলাম হায়দারের সুর করা দিল মেরা তোড়া (মাজবুর, ১৯৪৮), খেমচান্দ প্রকাশের আয়েগা আনেওয়ালা (মহল, ১৯৪৯) এবং শঙ্কর-জয়কিশানের হাওয়া মে উড়তা জায়ে, জিয়া বেকারার হ্যায়, ছোড় গায়ে বালামসহ (বারসাত, ১৯৪৯) নয়টি গান।

লতা: আমার ভাগ্য খুলে গিয়েছিল। এসব সুযোগ ছিল ঈশ্বরপ্রেরিত। গুলাম হায়দার সাব আমার ওপর অসম্ভব বিশ্বাস রেখেছিলেন। তিনি মজবুরের গানের জন্য আমাকে তৈরি করেছিলেন। যদিও কিছু নির্মাতা আমাকে নিয়ে কিছুটা সন্দিহান ছিলেন। লাভ ইজ ব্লাইন্ড নামে একটা সিনেমার জন্য আমি তখন দুইটা গান গেয়েছিলাম, সম্ভবত সিনেমাটি পরে আর মুক্তি পায়নি। জুনিয়র আর্টিস্ট সরবরাহকারী এক পাঠান আমাকে খেয়াল করেন তখন। তিনি নির্মাতাদের কাছে আমার নাম সুপারিশ করতে শুরু করেন। যদিও শশধর মুখার্জি আমাকে বাদ দিয়েছিলেন, আমার গলা খুবই চিকন বলে। যা–ই হোক, সংগীত পরিচালকেরা আমার প্রতি বিশ্বাস রেখেছিলেন। এসব সুযোগ না এলে আজকে লতা মঙ্গেশকর বলে কেউ থাকত না।
সে সময় দিলীপ কুমার, রাজ কাপুর ও নার্গিসকে নিয়ে ক্ল্যাসিক প্রেমের ছবি আন্দাজে (১৯৪৯) নওশাদ সাবের উঠায়ে জা উনকে সিতাম এবং কোই মেরে দিল ম্যায় গান দুইটাও করি। সেই গান দুইটা এবং আয়েগা আনেওয়ালা খুব হিট হয়ে যায়। আমার পরিচিতি তৈরি হওয়া শুরু হলো। এর আগপর্যন্ত মহারাষ্ট্রের কিছু এলাকায় মানুষ আমাকে চিনত, তাও ফিল্মি গানের জন্য না, ভক্তিমূলক ও অন্যান্য গানের জন্য।
মহল সিনেমার সময় ফিল্ম ক্রেডিট টাইটেলে বা রেকর্ডে প্লেব্যাক শিল্পীদের নাম থাকত না। গানের ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের চরিত্রের নাম থাকত। যেমন কামিনী, সেটি ছিল মধুবালার চরিত্র। রেকর্ড কোম্পানি এইচএমভি এমন রীতি চালু করেছিল। যখন আয়েগা আনেওয়ালা গাইলাম, তখন ফিল্মের দর্শক, রেডিওর শ্রোতা ও অন্যান্য নির্মাতা জানতে চাওয়া শুরু করলেন, প্লেব্যাক করা এই মেয়েটি কে? এরপর রেডিও স্টেশনগুলো থেকে আমার ডাক আসা শুরু করল।

প্রশ্ন :

খালিদ: ফিল্মের ক্রেডিট টাইটেল এবং রেকর্ড লেবেল আপনার স্বীকৃতি দাবি করতে কি কোনো ধরনের সংকোচ কাজ করত?

লতা: না। আমি রাজ কাপুরকে অনুরোধ করলাম সব প্লেব্যাক শিল্পীর ক্রেডিট দেওয়ার জন্য। আমরা যখন কোনো নায়ক বা নায়িকার জন্য গান গাই, সেখানে আমাদের বদলে তাদের চরিত্রের নাম কেন উল্লেখ করা হবে? রাজ কাপুর রাজি হলেন এবং বারাসাত সিনেমায় নার্গিস ও তার চরিত্রের জায়গায় প্লেব্যাকে প্রথমবারের মতো লতা মঙ্গেশকর ও মুকেশের নাম ক্রেডিট টাইটেলে যুক্ত হলো। এরপর নওশাদ সাব আমাদেরকে জিজ্ঞাসা না করেই আন্দাজ (১৯৪৯), জাদু (১৯৪৯) এবং দুলারি (১৯৫১) চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক শিল্পীদের নাম যুক্ত করে দেন। আমি মনে করি, এটি আমাদের ন্যায্য পাওনা ছিল।

লতা মঙ্গেশকর

প্রশ্ন :

খালিদ: শাস্ত্রীয় সংগীতের কোন ঘরানায় আপনি বিকশিত হতে পছন্দ করবেন?

লতা: আমার গুরুরা যে ঘরানায় আমাকে যুক্ত করেছিলেন তাতে তো অবশ্যই। শুরুতে আমার বাবার কাছে ক্ল্যাসিক্যাল শিখেছিলাম। কিন্তু তাঁর অকালমৃত্যুতে শাস্ত্রীয় সংগীতে আমার যাত্রা অঙ্কুরেই ছিটকে গেল। ১৯৪৫ সালে বোম্বেতে আমি আনুষ্ঠানিকভাবে বান্দি বাজার ঘরানার ওস্তাদ আমান আলী খানের শিষ্যত্ব গ্রহণ করি। আমি তাঁর কাছে প্রায় দুই বছর হিন্দুস্তানি ক্ল্যাসিকের তালিম নিই। এরপর তিনি যখন বোম্বে ছেড়ে পুনে চলে যান, মনে হয়েছিল আমি আরেকবার বাবাকে হারিয়েছি। এরপর অল্প সময়ের জন্য আমার গুরু ছিলেন দত্ত দেবজেকার।

প্রশ্ন :

খালিদ: আপনি কি একমত হবেন, নুরজাহানের গায়কি দ্বারা আপনি প্রভাবিত হয়েছিলেন?

লতা: হ্যাঁ। আমি স্বীকার করব যে তাঁর গান শোনার পর আমি তাঁর গায়কি অনুসরণ করার চেষ্টা করেছিলাম। নায়িকা নুরজাহান ফিল্মে নিজেই গাইতেন। মাস্টার বিনায়কের ফিল্মের শুটিংয়ের জন্য এলে তাঁর সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম, তখন আমার বয়স ছিল ১৪। সেখানে আমি তাঁকে গান শুনিয়েছিলাম। তিনি পছন্দ করেছিলেন এবং আমাকে আরও রেওয়াজ করতে বললেন। পরে তাঁর সঙ্গে বোম্বেতে আমার দেখা হয়নি। কারণ দেশভাগের কারণে তিনি লাহোরে চলে গিয়েছিলেন। তবে বছরের পর বছর ফোনে তাঁর সঙ্গে আমি যোগাযোগ রেখেছি। যখনই ফিল্মে আমার কোনো গান তিনি পছন্দ করতেন আমাকে ফোন দিতেন।

এস ডি বর্মণ

প্রশ্ন :

খালিদ: আপনি ভারতের প্রায় সব ভাষায় এবং প্রতিটি ধারায় গান করেছেন। আপনি তো চাইলে পশ্চিমা জনপ্রিয় ধারাতেও নিজেকে মেলে ধরতে পারতেন।

লতা: আমি পারতাম। কিন্তু সুরকারেরা বিশেষ করে মদন মোহন, অনিল বিশ্বাস, সলিল চৌধুরী, এস ডি বর্মন এবং জয়দেবের গানে স্বাচ্ছন্দ্যময় একটা ব্যাপার ছিল। জনপ্রিয় কিছু পশ্চিমা শিল্পী ও দলের প্রতি আমার সফট কর্নার ছিল। যেমন বিটলসের গান আমার প্লেলিস্টের শীর্ষে থাকে। আমি ন্যাট কিং কোল, দ্য সাউন্ড অব মিউজিকে জুলি অ্যান্ড্রুসের ট্র্যাক এবং বারবারা স্ট্রাইস্যান্ডের প্রতি আমার ভালো লাগা ছিল।

জনপ্রিয় কিছু পশ্চিমা শিল্পী ও দলের প্রতি আমার সফট কর্নার ছিল। যেমন বিটলসের গান আমার প্লেলিস্টের শীর্ষে থাকে। আমি ন্যাট কিং কোল, দ্য সাউন্ড অব মিউজিকে জুলি অ্যান্ড্রুসের ট্র্যাক এবং বারবারা স্ট্রাইস্যান্ডের প্রতি আমার ভালো লাগা ছিল
লতা মঙ্গেশকর
টুইটার

প্রশ্ন :

খালিদ: মাইকেল জ্যাকসন না?

লতা: আমার ধারণা মাইকেল জ্যাকসনের ভক্ত হলে আপনাকে তরুণ এবং নাচের প্রতি অনুরক্ত হতে হবে। যদিও তার দুটি গান আছে— দে ডোন্ট কেয়ার অ্যাবাউট আস এনিমোর এবং ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট, যেগুলো শুধু শুধু আকর্ষণীয় বিটই নয়, সামাজিক কুসংস্কারের বিরুদ্ধেও বার্তা দেয়।

প্রশ্ন :

খালিদ: গানের জনপ্রিয়তা এখন ভিডিও প্রেজেন্টেশন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রমোশনের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে আপনার মত কী?

লতা: ভিজ্যুয়াল বিষয় এখন অডিওর মতোই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আমাদের সময়ের বড় রেকর্ড কোম্পানিগুলো উঠে গিয়েছে। সারেগামা এবং সনির মতো এখনো কিছু টিকে আছে, তবে তাদের আয় কেবল অনলাইন সেল থেকে। কেউ চাইলে এখন অনলাইন থেকে একটি গানই কিনতে পারছে, গোটা অ্যালবাম নয়। আর বেআইনিভাবে ডাউনলোডও হচ্ছে ব্যাপক। ফলে গানের বাজার এই যাচ্ছে তো যাচ্ছে, চলেই গেছে।

প্রশ্ন :

খালিদ: আপনি কি আপনার গানের সংগ্রহ ডিজিটালাইজ করে সংরক্ষণ করেছেন?

লতা: আমি আমার সব ভিনাইল রেকর্ড, ক্যাসেট আর সিডি সংরক্ষণ করেছি, সংগীত কোম্পানিগুলো আমাদের কাছে যেগুলো পাঠায়। বাড়িতে কিছু রাখার মতো আর এক ইঞ্চি জায়গাও বাকি নেই। আমার ভাগনে-ভাগনির ছেলেমেয়েরা আমার সংগ্রহশালাটি ডিজিটালাইজ করে থাকতে পারে। আমি অবশ্য ওদের কিছু বলিনি।

প্রশ্ন :

খালিদ: আপনি ঠিক কী নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হন?

লতা: ওহ্, একেবারে ছোটখাটো জিনিস নিয়ে, যার ফলাফল তেমন কিছুই না।

প্রশ্ন :

খালিদ: ১৯৭০-এর দশকে লতা মঙ্গেশকরের একচেটিয়া প্রভাব নিয়ে একটি বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করা হয়েছিল। বিষয়টি কি আপনার জন্য বেদনাদায়ক ছিল?

লতা: আমি সহজে আহত হই না। দেখুন, এ ব্যাপারে আমার যথেষ্ট বিবেচনাবোধ আছে যে একটি ইন্ডাস্ট্রি, যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ফিল্ম তৈরি করে, তার সব গানই আমাকে দেওয়া উচিত বলে বোধ হয় আমি জবরদস্তি করতে পারি না। তখন একজন সাংবাদিক (রাজু ভারাতন) যাকে হাই-হ্যালোর বাইরে আমি চিনতামই না, সেই এই বিতর্কটা তৈরি করেছিল। তিনি শুনেছিলেন কেউ একজন আমাকে নিয়ে বই লিখছেন, যেটি তিনি নিজেই করতে চেয়েছিলেন, তখন ১৫ দিনের মাথায় আমার বিরুদ্ধে এমন গালভরা বক্তব্য হাজির করেন। আমি নিজেকে শান্ত রেখেছিলাম। সর্বদাই আমি সেটি করি।

প্রশ্ন :

খালিদ: কিন্তু কয়েক দশক ধরে লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোসলের মধ্যে অনুচ্চারিত একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে কথাবার্তা চাউর আছে।

লতা: দেখুন, কিছু লোক আছে তাদের স্বভাবই হচ্ছে বিতর্ককে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা। তারা বলে, অমুক অমুক গান আশা থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে লতা। ঘটনা হলো, ক্যাবার গানগুলো আমি না করে দিতাম, পরে সেগুলো স্বাভাবিকভাবে আশার কাছেই যেত।

লতা মঙ্গেশকর আর কিশোর কুমারের অনেক দ্বৈত গান জনপ্রিয়তা পেয়েছিল

প্রশ্ন :

খালিদ: ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি গান রেকর্ডের শিল্পী হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে আপনি ঠাঁই করে নেন। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৪ সালের মধ্যে সলো, ডুয়েট এবং কোরাসে ২৫ হাজারের কম নয়। এ বিষয়ে আপনার মত কী?

লতা: তখন টাইম ম্যাগাজিনের একজন প্রতিবেদক আমার বাড়িতে এসেছিলেন। ছবি তুলেছিলেন এবং ভক্তদের কাছ থেকে প্রতিদিন কেমন চিঠি পাই—এমন হালকা প্রশ্ন করেছিলেন। অল্প কিছুদিন পরেই ছাপা হওয়া সেই সাক্ষাৎকারটি পশ্চিমা দুনিয়ায় আমাকে নিয়ে কিছুটা মনোযোগ তৈরি করে। ১৯৭৪ সালে লন্ডনে আমি প্রথম বিদেশে কনসার্টে যাই, রবার্ট অ্যালবার্ট হলে। সেখানে তারাবাবু নামের একজন জানালেন, আমি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নিয়েছি। আমি তখন অজ্ঞতা স্বীকার করে জানতে চাইলাম, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কী? পরে তো এই নিয়ে বেশ হইচই হলো। বলা হলো, গানের রেকর্ড সংখ্যা নিয়ে আমি বাড়িয়ে বলেছি। অথচ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস সম্পর্কেই আমি জানতাম না।
আমাকে নিয়ে এমন অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস থেকে আমাকে আমন্ত্রণ করে সংবর্ধনা দিল। সেখানে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আমি যুক্তরাজ্যে থেকে যাওয়ার কথা ভাবছি কি না? আমি উত্তর দিয়েছিলাম, কখনোই না। আমি ভারতীয়, ভারতই আমার সব সময়ের জন্য ঘর। সেই বক্তব্য পত্রিকায় প্রকাশ করা হয়েছিল। ইন্দিরা গান্ধী সেটি পড়ে শুভকামনা জানিয়ে আমাকে একটি প্রশংসাপত্র পাঠিয়েছিলেন।
সত্যি বলতে আমি কয়টি গান করেছি, কোন গান কোথায় করেছি, সেগুলোর ফাইল আমি রাখিনি। কিন্তু ২৫ হাজারের বেশি গানের বিষয়টি গবেষণা করে বের করেছিল মিউজিক কোম্পানি ইএমই।

১৯৭৪ সালে লন্ডনে আমি প্রথম বিদেশ কনসার্টে যাই, রবার্ট অ্যালবার্ট হলে। সেখানে তারাবাবু নামের একজন জানালেন, আমি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে স্থান করে নিয়েছি। আমি তখন অজ্ঞতা স্বীকার করে জানতে চাইলাম, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কী? পরে তো এই নিয়ে বেশ হইচই হলো। বলা হলো, গানের রেকর্ড সংখ্যা নিয়ে আমি বাড়িয়ে বলেছি। অথচ গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস সম্পর্কেই আমি জানতাম না।

প্রশ্ন :

খালিদ: আপনি ইন্দিরা গান্ধীর কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ভারতের প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীই তো আপনাকে লিখেছেন।

লতা: হ্যাঁ, তাঁরা প্রত্যেকে সেটি করেছেন।

ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে লতা মঙ্গেশকর।
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

খালিদ: আপনি কি কখনো রাজনীতির দিকে ঝুঁকেছেন?

লতা: কখনোই না। রাজনীতি নিয়ে আগে–পরে আমার আগ্রহ নেই। আমি ১৯৯৯ সাল থেকে ছয় বছরের জন্য রাজ্যসভায় সাংসদ ছিলাম, কিন্তু সংসদে একটি কথাও বলিনি। আমি সব সময় চুপ ছিলাম। রাজনীতি এবং সংগীতের মধ্যে দূরত্ব আকাশ ও মাটির সমান। সংগীত নির্গত হয় কোমল হৃদয় থেকে। কিন্তু রাজনীতির জন্য প্রয়োজন সম্পূর্ণ ভিন্ন মানসিকতা।
আমাকে প্রায়ই নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে বলা হতো, আমি বিনয়ের সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করেছি। রাজ্যসভার সদস্য হওয়ার সম্মান গ্রহণ করাটা আমার ব্যক্তিগত আগ্রহের বিষয় ছিল না, বারবার বোঝানোর পর আমি আর প্রত্যাখ্যান করতে পারিনি।
অধিবেশনে নিয়মিত উপস্থিত না থাকা এবং চুপ থাকার কারণে শাবানা আজমি আমার কড়া সমালোচনা করেছিলেন। আমি কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাইনি। তিনি বিষয়টি তাঁর দিক থেকে দেখেছেন, আমি আমার দিক থেকে। কিন্তু এখন শাবানা ও আমার দেখা হলে আমরা পরস্পরের সঙ্গে খুবই আন্তরিক থাকি।

প্রশ্ন :

খালিদ: অধিবেশনগুলোতে কি আপনি বিনোদিত হতেন?

লতা: আমি সোজাসাপ্টা চেহারা নিয়ে থাকতাম। বিতর্ক এবং আলোচনা, মত এবং পাল্টামত সবকিছুকেই সম্মান করতে হবে।

প্রশ্ন :

খালিদ: আপনি টুইটার বেছে নিয়েছিলেন। আপনার কি ট্রলের মুখে পড়ার ঝুঁকি নেই?

লতা: আমি বেশ সতর্ক। আমি এমন কোনো বিষয়ে মতামত দিই না, যা আমার জানাবোঝার বাইরে। আমি যা করি, তা হলো জন্মদিনে শুভেচ্ছা এবং মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানানো, যেমন বড়ে গুলাম আলী খানের ক্ষেত্রে আমি করি।

লতা মঙ্গেশকর শুধু কণ্ঠে গান তুলে নিয়েছিলেন, তা ভাববেন না। হাতে ক্যামেরাও তুলে নিয়েছিলেন তিনি
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

খালিদ: আপনার কি কোনো শত্রু আছে?

লতা: মানে?

প্রশ্ন :

খালিদ: যাঁরা আপনার প্রতি ক্ষুব্ধ?

লতা: আমি নিশ্চিত কেউ কেউ নিশ্চয়ই আছে, কিন্তু তারা কেউ প্রকাশ্যে আসে না। হয়তো তারা তাদের ক্ষোভের পেছনে যুক্তি দিতে পারে না।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

খালিদ: গত সাত দশকে ১৯৫০–এর দশক এবং কিছুটা ৬০–এর দশককে কি আপনি ফিল্মি গানের সোনালি সময় বলবেন?

লতা: আমি বলব এটি ১৯৫০ থেকে ৭০–এর দশক পর্যন্ত। সত্যিই সেটি উৎকর্ষের যুগ ছিল।

প্রশ্ন :

খালিদ: কিন্তু সত্তরে এসে ফিল্মগুলো কি সহিংসতানির্ভর হয়ে গেল না? তখন তো ফিল্ম থেকে রোমান্স জানালার বাইরে চলে গেল।

লতা: ফিল্মি দৃশ্যে সহিংসতা ও ক্ষোভের ঢেউ তীব্র হয়ে উঠল মূলত ১৯৭৫–এর পর। তখন গানের সংখ্যা কমে গেল। তবুও সেসময় যে গানগুলো আমার কাছে এসেছে, সেগুলোতে পরিমিতিবোধ ও সংবেদনশীলতা ছিল। এখন হিন্দুস্তানি জবান যেখানে উর্দু আর হিন্দি সংমিশ্রণ হয়ে গেছে, সেখানে এর মূল্য নেই। কিছু গীতিকারকে মনে হয়, তারা গানের মিটার ও আদবের সঙ্গে পরিচিত নয়, অথচ কাব্যের জন্য সেটিই হচ্ছে মূলভিত্তি।

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর
ছবি: এএফপি

প্রশ্ন :

খালিদ: আপনার বিবেচনায় কোনটি আপনার সবচেয়ে আন্ডাররেটেড গান?

লতা: আপনি হয়তো বলতে চাইছেন কোনো গান যতটা জনপ্রিয় হতে পারত, ততটা হতে পারেনি। এ রকম বেশ কয়েকটা গান আছে। আমি মায়া মেমসাবের (১৯৯৩) জন্য হৃদয়নাথের সুর করা এক হাসিনা নিগাহ কা গানটার কথা বলব। গানটার দুটি সংস্করণ ছিল। একটি কুমার শানুর, আরেকটা আমার। হৃদয়নাথের কম্পোজিশনগুলো প্রায় লেকিন (১৯৯০) সিনেমার গানের মতো বেশ জটিল। ইয়ারা সিলি সিলি জনপ্রিয় হয়েছে, অথচ একই ছবির সুনিয়ো জি আরজ মারিয়ো জনপ্রিয় করাও চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল।

প্রশ্ন :

খালিদ: ফিল্পের কোনো গান গাইতে গিয়ে কি আপনার চোখে কখনো পানি চলে এসেছিল?

লতা: না। রেকর্ডিংয়ে আমি সব সময় গানের আবেগপ্রবণ বিষয় ও নিজের মধ্যে দূরত্ব মেনে চলতাম। তবে হ্যাঁ, ফিল্মের বাইরে অ্যালবামের জন্য ভজন গাওয়ার সময় চোখের পানি চলে আসত। যখনই আমি কান্না থামাতে পারতাম না, তখন একটি ছোট বিরতি চাইতাম এবং স্বাভাবিক হয়ে আবার ফিরে আসতাম।

রয়্যালটি পাওয়ার বিষয়ে মোহাম্মদ রফি ও লতার মধ্যে বিবাদ হয়েছিল
সে সময় রফি সাবের সঙ্গে আমার উত্তপ্ত বাক্য চালাচালি হয়। তিনি বলে দিলেন, কখনো আমার সঙ্গে গান গাইবেন না। আমিও বলে দিলাম, তাঁর সঙ্গেও আমি কখনো গাইব না। তিন বছর পর শঙ্কর-জয়কিষানের উদ্যোগে এর অবসান ঘটে।

প্রশ্ন :

খালিদ: কোন কোন নায়িকার জন্য প্লেব্যাক করতে গিয়ে আপনি বিশেষভাবে উপভোগ করেছেন?

লতা: আমি মনে করি আমার কণ্ঠ বিশেষ করে মীনা কুমারীর সঙ্গে খাপ খেত... সেই সঙ্গে মধুবালা, নূতন এবং সাধনা। নার্গিসের কণ্ঠে একটি শক্তিশালী খাদ ছিল, তবুও পর্দায় তিনি এত সুন্দরভাবে আবেগপ্রবণ করেছিলেন যে গানগুলো দারুণভাবে ক্লিক করেছিল। পরবর্তী বছরগুলোতে কাজল আমার করা প্লেব্যাক গানগুলোতে একটি বিশেষ জাদু যুক্ত করেছে।

আরও পড়ুন

প্রশ্ন :

খালিদ: ১৯৭৩ সালের দিকে মিউজিক কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে রয়্যালটি পাওয়ার বিষয়ে মোহাম্মদ রফি ও আপনার মধ্যে বিবাদ হয়েছিল।

লতা: প্লেব্যাক শিল্পীদের রয়্যালটি নিয়ে আমিই আলোচনা শুরু করি। মুকেশ, তালাত মাহমুদ ও মুবারক বেগম ছিলেন আমার পক্ষে আর অন্যদিকে মোহাম্মদ রফি, মহেন্দ্র কাপুরসহ আরও কয়েকজন। সে সময় রফি সাবের সঙ্গে আমার উত্তপ্ত বাক্য চালাচালি হয়। তিনি বলে দিলেন, কখনো আমার সঙ্গে গান গাইবেন না। আমিও বলে দিলাম, তাঁর সঙ্গেও আমি কখনো গাইব না। তিন বছর পর শঙ্কর-জয়কিষানের উদ্যোগে এর অবসান ঘটে। আমি এবং রাফি আবার একসঙ্গে ফিল্মে গান গাইলাম। এরপর একসঙ্গে অনেক অনেক গান করেছি। আমাদের মধ্যে মতচিন্তায় নানা পার্থক্য আমরা হেসে উড়িয়ে দিতাম।

লতা মঙ্গেশকর, ১৯৯৯ সালের ২৮ এপ্রিল ভারতের মুম্বাইয়ে এক অনুষ্ঠানে
ছবি: এএফপি

প্রশ্ন :

খালিদ: এটি কি পদচিহ্ন অনুসরণ বলব নাকি হ্যাংওভার বলব, তখন থেকে এখন পর্যন্ত প্রত্যেক প্লেব্যাক শিল্পীর মধ্যেই লতা ও রফিকে পাওয়া যায়

লতা: আপনি ঠিক বলেছেন। এমন প্রচেষ্টা দেখা গেছে।

শুধু মা-ই আমাকে বিয়ের জন্য জ্বালাতন করতেন। অবশেষে আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমার পরিবার মানে বিয়ের চেয়ে অনেক বেশি কিছু। যাই বলেন, মাঝেমধ্যে একাকী বোধ না করলে আমি মানুষ হতে পারতাম না। বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত, আমরা সবাই একাকিত্বে ভুগি। একা থাকা ক্ষতিকর হতে পারে।

প্রশ্ন :

খালিদ: নানা সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করা প্রিয় গানগুলোর মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে কোনগুলো আপনার পছন্দ?

লতা: সাক্ষাৎকারগুলোতে তাৎক্ষণিকভাবে উত্তর দিতে গিয়ে অনেক প্রিয় গান এড়িয়ে যায়। এখন মানুষের সঙ্গে যেসব গান সংযোগ করে এবং লাইভ কনসার্টে শ্রোতারা যেসব গান শুনতে চান, সেগুলোই আমার জনপ্রিয় গান হিসেবে লিস্টেড হয়েছে। কনসার্টে যদি আমি আয়েগা আনেওয়ালা, কাঁহি দীপ জ্বলে কাঁহি দিল (বিশ সাল বাদ, ১৯৬২), নাইনা বারসে রিমঝিম এবং লাগ জা গালে (উও কৌন থি, ১৯৬৪), পিয়ার কিয়্যা তো ডারনা কেয়া (মুঘল-ই-আজম, ১৯৬০) এসব গান না করতাম মানুষ মন খারাপ করে ঘরে ফিরে যেত।

প্রশ্ন :

খালিদ: আপনি কি এখনো রোজ সকালে রেওয়াজ করেন?

লতা: করা উচিত, কিন্তু পারি না। দুই বছর আগে অসুস্থ হয়ে পড়ে আমি গতি হারিয়ে ফেলি। এখন আমি ঠিক আছি। গজলের একটি অ্যালবাম করার চিন্তা করছি। আমি মির্জা গালিবের বেশ কিছু গজল গেয়েছি। আমি মীর ও ইকবালের আরও গজল গাইতে চাই।

প্রশ্ন :

খালিদ: অবিবাহিত থাকার জীবনই আপনি বেছে নিয়েছেন। কখনো কি একাকী বোধ করেন?

লতা: শুধু মা-ই আমাকে বিয়ের জন্য জ্বালাতন করতেন। অবশেষে আমাকে ছেড়ে দিলেন। আমার পরিবার মানে বিয়ের চেয়ে অনেক বেশি কিছু। যাই বলেন, মাঝেমধ্যে একাকী বোধ না করলে আমি মানুষ হতে পারতাম না। বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত, আমরা সবাই একাকিত্বে ভুগি। একা থাকা ক্ষতিকর হতে পারে। ভাগ্যক্রমে আমার প্রিয়জনেরা সব সময় আমাকে ঘিরে রাখে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রয়াত হলেন ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর

প্রশ্ন :

খালিদ: আপনি কি কখনো প্রেমে পড়েছেন?

লতা: শুধু আমার কাজের সঙ্গে। আমি আমার একান্ত আপনজন, আমার পরিবারকে ভালোবাসি। এ ছাড়া আর কিছুকে নয়, কাউকে নয়।

প্রশ্ন :

খালিদ: যদি আপনাকে একটি ইচ্ছা করতে বলা হয়, আপনি কী চাইবেন?

লতা: আমি পুনর্জন্মে বিশ্বাস করি। তবু আমি মারা গেলে, সত্যিই আবার জন্ম নিতে চাই না। স্রষ্টা আমাকে পুনর্জন্ম না দিলেই ভালো। এক জীবনই যথেষ্ট।

আরও পড়ুন