কতটা লাকি আমি, লতাজির সঙ্গে দেখা হয়েছে
উপমহাদেশীয় সংগীতে লতা মঙ্গেশকর এক বিস্ময় নাম। তাঁর গান শোনাটাই যেখানে তালিমের মতো, সেখানে তাঁর সান্নিধ্য পাওয়াটা তো অবর্ণনীয় এক অনুভূতির নাম। সেই অনুভূতি একবার ধরা দিয়েছিল সংগীতশিল্পী আলিফ আলাউদ্দিনের জীবনেও। তাও আবার মাত্র ৯ বছর বয়সে। বাবা দেশবরেণ্য সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী এবং সংগীতশিল্পী মা সালমা সুলতানার সঙ্গে কলকাতার একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গিয়ে জীবনের এই সেরা মুহূর্তের সাক্ষী হয়ে রইলেন।
আজ রোববার লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়লে আলিফ আলাউদ্দিন একটি স্থিরচিত্র তাঁর ফেসবুকে পোস্ট করেন, যেখানে তিনি সংগীতের কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকরের কোলে বসে আছেন। জীবনে এই মুহূর্ত কীভাবে ধরা দিয়েছিল জানতে চাইলে আলিফ বলেন, ‘সম্ভবত ১৯৯০ কিংবা ৯১ হবে। তখন আমার বয়স ৯ বছর। কলকাতার ৪০০ বছর নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হবে কলকাতা স্টেডিয়ামে। সেখানে সংবর্ধনা দেওয়া হয় শ্রদ্ধেয় রুনা লায়লা আন্টি, আব্বু (আলাউদ্দিন আলী), ভূপেন হাজারিকাসহ কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকরকে। মনে আছে, আমরা উঠেছিলাম গ্র্যান্ড ওবেরয় হোটেলে। ওনার সঙ্গে রুনা আন্টির থ্রুতে দেখা করেছিলাম।’
লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্তটি ছিল ২০ থেকে ২৫ মিনিটের মতো। দিন–তারিখ পরিষ্কার মনে না থাকলেও আলিফ এটুকু বললেন, ‘আমার স্পষ্ট মনে আছে, সময়টা দুপুর ১২টা কি সাড়ে ১২টা হবে, আমার তো বয়স তখন কম। আমার চেয়ে আম্মুর এক্সাইটমেন্টটা ছিল অনেক বেশি। আম্মু তাঁর অনেক বড় ফ্যান ছিলেন, আম্মুর থ্রুতে তো আমি লতাজির গান শুনেছি। আম্মুর চোখে–মুখে যে অভিব্যক্তি ছিল, ওটা দেখে আমি খুবই এক্সাইটেড ছিলাম। কারণ ওটার বিশালতা বোঝার জন্য তো একটা বয়স লাগে। এখন যেমন বুঝি, তখন তো এমন বুঝতাম না। তখন তো একটা বাচ্চা মানুষ, গেছি, ছবি তুলেছি—একজন বড় তারকার সঙ্গে ছবি তুলেছি। এখন আমি বুঝি যে কতটা লাকি আমি, এই জীবনের লতাজির মতো একজন ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দেখা হয়েছে আমার।’
কথায় কথায় আলিফ জানান, সেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গান গেয়েছিলেন রুনা আন্টি, ভূপেন হাজারিকা আর লতাজিও গান করেছিলেন। আর আমার আব্বু রুনা আন্টির সঙ্গে প্লে করেছিলেন।
আজকের দিনে নব্বইয়ের দশকের সেই অনুভূতি সম্পর্কে আলিফ বলেন, ‘ছবিটা যখন তুলেছি, তখন তো প্রিন্ট করে অ্যালবামে রাখা ছিল। আমার বিয়ের পর ছবিটা স্ক্যান করেছিল ফয়সাল (আলিফের স্বামী কাজী ফয়সাল আহমেদ)। এরপর আমি ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করে যে রিঅ্যাকশন পাই, তখন আস্তে আস্তে আরও বেশি করে অনুধাবন করা শুরু করলাম, আমি আসলে কতটা লাকি, ওনার কোলে বসার সুযোগ পেয়েছি। লতাজি নিজেই কিন্তু আমাকে কোলে বসিয়েছিলেন, আমাকে ধরে ছবিটা তুলেছেন। তাঁর মতো একজন কিংবদন্তিকে আমি দেখতে পেরেছি, তাঁর পাশে বসতে পেরেছি, এ অনুভূতি বলে বোঝানোর মতো নয়!’
আলিফ আলাউদ্দিন জানান, কলকাতায় তাঁরা যে হোটেলে উঠেছিলেন, একই হোটেলে লতাজিও ছিলেন। এটা জানার পর থেকে তাঁর আম্মুর চোখ–মুখ জ্বলজ্বল করছিল। আলিফ বলেন, ‘এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ, রুনা আন্টি আমাদের নিয়ে যাবেন কিংবদন্তি লতা মঙ্গেশকরের রুমে। লিফটে আম্মু রুনা আন্টিকে বললেন, “রুনা আপা, আমার খুব নার্ভাস লাগছে।” রুনা আন্টি হাসলেন, বললেন, “ইটজ ওকে।” ওনার হোটেল স্যুইটে বসলাম। উনি রুম থেকে বের হতেই সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম। কেমন যেন দ্যুতিময় তিনি। কিছুক্ষণ কথা, তারপর ছবি তোলার পালা। কিংবদন্তি নিজেই তাঁর পাশে আমাকে আদর করে বসালেন, ছবি তুললেন। তানি লায়লা (রুনা আন্টির মেয়ে), সেও ছবি তুলল। এবারে মায়ের ছবি তোলার পালা। লতাজি উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছেন, আম্মু তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে থাকলেন। ওনাকে উঠতে দিলেন না। আমি অবাক হয়ে দেখলাম কী অদ্ভুত শ্রদ্ধাবোধ! এটা আমার আব্বু-আম্মু দুজনেরই ছিল।’