কত্থক দিয়ে শুরু চতুর্থ রাত

আর্মি স্টেডিয়ামে উচ্চাঙ্গসংগীতের আসরে গতকাল নৃত্য পরিবেশন করেন মুনমুন আহমেদ ও তাঁর দল রেওয়াজ l ছবি: খালেদ সরকার
আর্মি স্টেডিয়ামে উচ্চাঙ্গসংগীতের আসরে গতকাল নৃত্য পরিবেশন করেন মুনমুন আহমেদ ও তাঁর দল রেওয়াজ l ছবি: খালেদ সরকার

রাধা প্রতি সন্ধ্যায় যমুনা নদী থেকে ছোট কলসিতে করে পানি আনতে যায়। দুষ্ট কৃষ্ণ ঢিল মেরে কলসির সব পানি ফেলে দেয়। কৃষ্ণের কাছে রাধা জানতে চায়, কেন সে এমন কাজ করল? কত্থকের লক্ষ্ণৌ ঘরানার জনক বিন্দাদিন মহারাজ ঘটনাটি নিয়ে লিখেছিলেন বিখ্যাত ঠুমরি ‘মোরি গগরিয়া কাহেকো ফোড়ি রে শ্যাম’। গতকাল রোববার বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে বেঙ্গল উচ্চাঙ্গসংগীত উৎসবের চতুর্থ রাতে বাংলাদেশের শিল্পী মুনমুন আহমেদ এই গানের সঙ্গে কত্থক নাচে দেখালেন কৃষ্ণের প্রতি রাধার অভিমান। পণ্ডিত বিরজু মহারাজের এই শিষ্য দেখিয়ে দিলেন, কৃষ্ণ সে অভিমান ভাঙল কী করে।

গত রাতের প্রথম পরিবেশনায় ছিলেন মুনমুন ও তাঁর দল রেওয়াজ। রাগ ভিন্ন ষড়জে গুরুবন্দনা দিয়ে তাদের পরিবেশনা শুরু হয়। এরপর ত্রিতাল। শেষ হয় দ্রুত লয়ে দুটি পরন ও যুগলবন্দি দিয়ে। পরের পরিবেশনা ছিল তরুণ তবলাশিল্পী নীলেশ রণদেবের। পণ্ডিত সুরেশ তালওয়ালকারের এই শিষ্য এরই মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গুণী শিল্পীদের সঙ্গে সংগীতসভায় বাজিয়েছেন। গতকালের পরিবেশনায় তবলায় তিনতাল বাজান তিনি। হারমোনিয়ামে ছিলেন মিলিন্দ কুলকার্নি।

এরপর মঞ্চে আসেন জয়তীর্থ মেউন্ডি। কিরানা ঘরানার এই শিল্পী রাগ শুদ্ধ কল্যাণ, আদানা ও নাট্যগীতে খেয়াল পরিবেশন করেন। তবলায় ছিলেন আজিঙ্কা যোশি। এ প্রতিবেদন লেখার সময় মঞ্চে ছিলেন তবলাশিল্পী পণ্ডিত যোগেশ শামসি ও পণ্ডিত শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনতালের যুগলবন্দিতে তাঁরা মাতিয়ে তোলেন শ্রোতাদের।

তালিকায় এরপর আছে দুই বোন রঞ্জনী ও গায়ত্রী বালাসুব্রামানিয়ামের কর্ণাটকি কণ্ঠসংগীত ও বেহালা পরিবেশনা। এরই মধ্যে তাঁরা ড. বালমুরালিকৃষ্ণ ও তানজোর বিশ্বনাথনের মতো শিল্পীদের সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করেছেন। এরপর আছে পণ্ডিত তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের সরোদ, তবলায় থাকবেন যোগেশ শামসি। সবশেষ পরিবেশনা পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর। পদ্মশ্রী ও বঙ্গবিভূষণ খেতাব পাওয়া এই শিল্পী খেয়াল পরিবেশন করবেন।

গত শনিবার উৎসবের তৃতীয় রাতের চতুর্থ পরিবেশনায় ছিল পণ্ডিত অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের তবলা। তিনতালে উঠান, পেশকার, কায়দা, গৎ ও চক্রদার পরিবেশন করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন পুত্র উদীয়মান তবলাশিল্পী অনুব্রত চট্টোপাধ্যায়। এরপর শোনা যায় পণ্ডিত উদয় ভাওয়ালকারের ধ্রুপদ—রাগ আভোগী। এই গুণী শিল্পী শাস্ত্রীয় সংগীতের আদিরূপ ধ্রুপদকে আবার জনপ্রিয় করতে ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।

আজ রাতের পরিবেশনা: আজ উৎসবের শেষ রাত। পরিবেশনা শুরু হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীদের কণ্ঠসংগীত দিয়ে। প্রবাদপ্রতিম পণ্ডিত শিবকুমার শর্মা শোনাবেন সন্তুর। খেয়াল গাইবেন কুমার মারদুর। পণ্ডিত কুশল দাস সেতার শোনাবেন। পরের পরিবেশনা আরতি অঙ্কালিকারের খেয়াল। গত আসরের মতোই উৎসবের এবারের আসরও শেষ হবে পণ্ডিত হরিপ্রসাদ চৌরাসিয়ার মনোমুগ্ধকর বাঁশি দিয়ে।