জন্মদিনে শুনতে পারেন মান্না দের আলোচিত গানগুলো
‘কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই’ গানটি শোনেননি, এমন বাঙালি পাওয়া মুশকিল হবে। এ গানের শিল্পী মান্না দের আজ ১০৩তম জন্মদিন। ১৯৫৩ সালে ‘দো বিঘা জমি’ তাঁকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়। ‘সে আমার ছোট বোন’, ‘যদি হিমালয় আল্পসের’, ‘যদি কাগজে লেখো নাম’ গানগুলোও তাঁর জনপ্রিয় বাংলা গানের অন্যতম। বাংলা ছাড়াও হিন্দি, গুজরাটি, মারাঠি, ভোজপুরি, পাঞ্জাবি, কোঙ্কনি ও অসমিয়া ভাষায় গেয়েছেন তিনি। পাশাপাশি রবীন্দ্র ও নজরুলসংগীতও গেয়েছেন এই কিংবদন্তি শিল্পী।
পূর্ণ চন্দ্র দে ও মহামায়া দের চার ছেলে ও এক মেয়ের তৃতীয় ছেলে প্রবোধ চন্দ্র দে। কাকা কৃষ্ণ চন্দ্র দে তাঁকে ডাকতেন মান্না নামে। সংগীতভুবনে মান্না দে নামেই তিনি খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। ১৯১৯ সালের ১ মে ভারতের কলকাতায় তাঁর জন্ম। গান আর পড়ালেখা একসঙ্গেই শুরু হয়েছিল তাঁর। গানে গানে মাতিয়ে রাখতেন সহপাঠীদের। ত্রিশের দশকে ছাত্রজীবনে আন্তকলেজ সংগীত প্রতিযোগিতায় পরপর তিন বছর তিনটি পৃথক বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করেন তিনি। কাকা শিল্পী কৃষ্ণ চন্দ্র দে একাধারে ছিলেন মান্নার সংগীতগুরু ও প্রেরণার উৎস। বিখ্যাত কাকার সুবাদে সংগীতজীবনের শুরু থেকেই উপমহাদেশের খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞদের সান্নিধ্য এবং তাঁদের কাছে তালিম নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর।
১৯৪২ সালে কাকা কৃষ্ণ চন্দ্রের সঙ্গে বোম্বে (মুম্বাই) যান মান্না। পরের বছর ‘তামান্না’ ছবিতে সুরাইয়ার সঙ্গে একটি দ্বৈত গান করার সুযোগ পান। গানটি জনপ্রিয়তা পাওয়ায় মান্নার এগিয়ে যাওয়ার পথ সুগম হয়। উপমহাদেশের আরেক সংগীতজ্ঞ শচীন দেববর্মনের সঙ্গে কাজের সুযোগ পান তিনি। ১৯৫০ সালে ‘মশাল’ ছবিতে শচীনের লেখা ‘ওপার গগন বিশাল’ এবং ১৯৫২ সালে একই গল্পের বাংলা ও মারাঠি ছবিতে ‘আমার ভুপালী’ গানটি গেয়ে গানের ভুবনে নিজের জায়গা পাকা করে নেন তিনি।
মান্না দের সেরা ১০ হিন্দি গানের মধ্যে রয়েছে ‘জিন্দেগি কেইসি হ্যায় পহেলি’ (আনন্দ), সুরকার সলিল চৌধুরী, ‘ইয়ে রাত ভিগি ভিগি’ (চোরি চোরি), সুরকার শঙ্কর জয়কিশান, ‘এক চতুর নার বড়ি হোশিয়ার’ (পড়োসান), সুরকার আর ডি বর্মন, ‘লাগা চুনরি মে দাগ’ (দিল হি তো হ্যায়), সুরকার রোশন এবং ওম সোনিক, ‘অ্যায় মেরে পেয়ারে বতন’, (কাবুলিওয়ালা), সুরকার সলিল চৌধুরী, ‘পুছো না কেইসে ম্যানে র্যায়েন বিতায়ি’ (মেরি সুরত তেরি আঁখে), সুরকার এস ডি বর্মন, ‘তু পেয়ার কা সাগর হ্যায়’ (সীমা), সুরকার শঙ্কর জয়কিশান, ‘অ্যায় মেরি জোহরা জেবিঁ’ (ওয়ক্ত), সুরকার রবি, ‘চুনরি সামহাল গোরি’, ‘বাহারো কে স্বপনে’, সুরকার আর ডি বর্মন, ‘ইয়ে দোসতি হাম নেহি তোড়েঙ্গে’ (শোলে), সুরকার আর ডি বর্মন।
বাংলা গান গানগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বড় একা লাগে’ (চৌরঙ্গী), সুরকার অসীমা ভট্টাচার্য, ‘আমি যামিনী তুমি শশী হে’ (এন্টনী ফিরিঙ্গী), সুরকার অনিল বাগচি, ‘এমন বন্ধু আর কে আছে’ (দীপ জ্বেলে যাই), সুরকার হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ‘তা বলে কি প্রেম দেবে না’ (মৌচাক), সুরকার নচিকেতা ঘোষ, ‘যদি কাগজে লেখো নাম’ (অ্যালবাম: সুন্দরী গো), সুরকার নচিকেতা ঘোষ, ‘শাওন রাতে যদি’ (দেবদাস), ‘কত দিন দেখিনি তোমায়’, সুরকার কমল দাশগুপ্ত, ‘বাজে গো বিনা’ (মর্জিনা আবদুল্লা), সুরকার সলিল চৌধুরী, ‘আমি যে জলসাঘরে’ (এন্টনী ফিরিঙ্গী), সুরকার অনিল বাগচি, ‘এই এত আলো এত আকাশ (আলো আমার আলো), সুরকার পবিত্র চট্টোপাধ্যায়।
কেরালার মেয়ে মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী সুলোচনা কুমারনের সঙ্গে প্রেমে জড়ান মান্না। ১৯৫৩ সালে বিয়ে করেন তাঁরা। তাঁদের দুই মেয়ে সুরমা দে ও সুমিতা দে। ২০১২ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মান্না দের স্ত্রী মারা যান। পরের বছর মারা যান তিনি।