নেপথ্যের চার সংগীতজ্ঞের কণ্ঠে গান

কিংবদন্তি চার সংগীত পরিচালক আলী হোসেন, আলম খান, আলাউদ্দিন আলী ও শেখ সাদী খান। পর্দার আড়ালের গুণী এই সংগীত ব্যক্তিত্ব, যাঁদের সুরে এত দিন শিল্পীরা গান করেছেন, হয়েছেন খ্যাত। যাঁদের সুরারোপিত অসংখ্য গান হয়েছে কালজয়ী। এবার তাঁদেরই গাইতে দেখা যাবে এক মঞ্চে। আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেমে আয়োজন করা হয়েছে ‘১২তম চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের মঞ্চে তাঁরা গাইবেন নিজেদেরই সুর করা শ্রোতাপ্রিয় গান।
আলী হোসেন গাইবেন তাঁর সুরারোপিত সুবীর নন্দীর গাওয়া ‘কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো সে কথা তুমি যদি জানতে’, আলম খান গাইবেন তাঁর সুরারোপিত এন্ড্রু কিশোরের গাওয়া ‘কারে বলে ভালোবাসা কারে বলে প্রেম’, আলাউদ্দিন আলী গাইবেন তাঁর সুরারোপিত প্রয়াত নায়ক জাফর ইকবালের গাওয়া ‘যেভাবে বাঁচি বেঁচে তো আছি জীবন আর মরণের মাঝামাঝি’, এবং শেখ সাদী খান গাইবেন তাঁর সুরারোপিত ভারতীয় শিল্পী কুমার শানুর গাওয়া ‘আমার মনের আকাশে আজ জ্বলে শুকতারা’ এই গানগুলো। ইতিমধ্যেই গানগুলো অডিও ধারণ করা হয়ে গেছে। নতুন করে সব গানের সংগীতায়োজন করেছেন ফোয়াদ নাসের বাবু। মূল অনুষ্ঠানে চারজন শুধু ঠোঁট মেলাবেন।
এত দিন শিল্পীদের দিয়ে নিজেদের গান গাইয়ে নিয়েছেন। কিন্তু এবার দৃশ্যপট ভিন্ন। নিজেই মাইক্রোফোনের সামনে। বিষয়টা কেমন লেগেছে—আলাদা করে জানতে চাইলে মুঠোফোনে আলম খান বলেন, ‘প্রথমত, আমি সব সময় শিল্পীদের দিয়ে গান গাইয়ে নিয়েছি। গান গাইতে হবে কখনো ভাবিনি। কিন্তু চ্যানেল আই কর্তৃপক্ষের অনুরোধে গাইতে রাজি হলাম। তবে নিওমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই একটু ঠান্ডায় আমার গলা বসে যায়। সেই অবস্থায়ই গানটি গেয়েছি। কী গাইলাম, ফাইনাল মিক্সড এখনো শুনিনি। তবে রেকর্ডিস্ট আজম বাবুকে বলে দিয়েছি, ভয়েজ ভালো না হলে আবার দেব। কিন্তু আমার গায়কীতে কোনো রকম মেলোডাইন বা অটো টিউনার ব্যবহার করা যাবে না।’
আলাউদ্দিন আলী বলেন, ‘আমি ‘দুই পয়সার আলতা’ ছবির আবহসংগীতে ‘কী বা জাদু জানো বন্ধুরে’ এই গানটি গেয়েছিলাম বহু বছর আগে। এর দীর্ঘ অনেক বছর পর বিটিভির ঈদ অনুষ্ঠানে একবার একটি গান গেয়েছিলাম। এত দিন পর মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের পরিচালক ইজাজ খান স্বপন অনুরোধ করল গাইতে। ব্যক্তিগতভাবে আমি চ্যানেল আই তথা ফরিদুর রেজা সাগরের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। এ ছাড়া আলম ভাইও (আলম খান) ফোনে বললেন, আমি গাইতে রাজি হলে তিনি গাইবেন। তাই রাজি হলাম।
আলাউদ্দিন আলী আরও বলেন, ‘যে গানটি এই অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে, এটি আমি আগেও নিজেদের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সময় গেয়েছি, তাই মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে গানটি গাইতে বেশি অসুবিধা হয়নি।’
শেখ সাদী বলেন, ‘আমি তো সুরকার। কণ্ঠশিল্পী না। আমার কণ্ঠ দরাজ হলেও একটু ভাঙা। আবার সুর আরোহণে তারার দিকে কম যায়। সেই হিসেবে একটা ভয় ছিল। কারণ, আমি চাইলেই তো আর কুমার শানুর মতো গানটি গাইতে পারব না। তারপরও গানটি গাইলাম চ্যানেল আইয়ের অনুরোধে। কারণ, এই প্রস্তাবটি আমার ভালো লেগেছে। আমার সতীর্থ অন্যরা কী বলবেন জানি না, তবে আমি বলব, আমি প্রস্তাব পেয়ে বেশ পুলকিত হয়েছি। তারা আমাকে সুযোগ দিয়েছে এ রকম একটি আয়োজনে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য।’
শেখ সাদী খান আরও বলেন, সুরকারদের কণ্ঠে আবেগটা ভালো থাকে। কারণ, সুরটা তাঁর করা। সে হিসেবে আমি চেষ্টা করেছি। যদিও মনে হচ্ছে, দর্শক গান শুনে বলবেন, এত বাজে গায় (হাসি)।

এই চার কিংবদন্তির মধ্যে আলী হোসেন সবচেয়ে প্রবীণ। গানটি গাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমে যখন চ্যানেল থেকে প্রস্তাব পাই, তখন ভেবেছিলাম মঞ্চে উঠে শুধু দু-চারটা কথা বলতে হবে, স্মৃতিচারণা করতে হবে। কিন্তু তাঁরা জানালেন, গান গাইতে হবে। যেহেতু একটু-আধটু আমি গাই। বিটিভিতেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দু-চার লাইন গেয়েছি। তাই রাজি হলাম। তা ছাড়া আমার সতীর্থ যাঁরা গাইছেন, তাঁদের চেয়ে তুলনামূলক আমার কণ্ঠটা একটু ভালোই। তবে স্টুডিওতে গান গাইতে গিয়ে মনে হয়েছে, গলায় দম নেই, সুর কম লাগছে। গানের স্কেলটাও চওড়া লাগছিল। পরে স্কেল নামিয়ে কণ্ঠ দিয়েছি। আমি বলব, মোটামুটি গেয়েছি।’
চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের পরিচালক ইজাজ খান স্বপন জানালেন, এই চার সংগীতজ্ঞকে সংগীত পরিবেশনের পর অনুষ্ঠানে সম্মাননা হিসেবে উত্তরীয় এবং একটি অঙ্কের চেক হাতে তুলে দেওয়া হবে।