প্রতুল মুখোপাধ্যায় হাসপাতালে

প্রতুল মুখোপাধ্যায়
প্রতুল মুখোপাধ্যায়

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও সংগীতশিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় গুরুতর অসুস্থ। ২ মে তিনি হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন। দ্রুত তাঁকে কলকাতার সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তাঁকে এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকদের মতে, তাঁর অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তবে বিপদ কাটেনি। তাঁর বয়স ৭৭। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন তিনি।

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের অসুস্থতা নিয়ে তাঁর স্ত্রী সর্বাণী মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘২ মে মাঝরাতে ওনার একটা হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর সকালে ক্যালকাটা হার্ট ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। এখন কিছুটা ভালো আছেন।’

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এবার পয়লা বৈশাখে একাধিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। অসুস্থ হওয়ার দুদিন আগেও একটি সাহিত্য পত্রিকার অনুষ্ঠানে যান। সেখানে গান গেয়েছেন। যেদিন অসুস্থ হয়েছেন, সেদিনও দুটি অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর।

প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের খুব জনপ্রিয় হওয়া গানের মধ্যে অন্যতম ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এই একটি গানের জন্য বাঙালির অন্তরের অনেকটা জায়গা দখল করে আছেন তিনি। যেকোনো অনুষ্ঠানে গাওয়া হয় গানটি। এ ছাড়া তাঁর ‘ডিঙা ভাসাও সাগরে’ গানটিও বাঙালির মনে গেঁথে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন গণ-আন্দোলনে প্রতুল মুখোপাধ্যায় অনেক দিন থেকেই অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করেছেন।

এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতালে প্রতুল মুখোপাধ্যায়। ছবি: রতন বসু মজুমদার
এসএসকেএম (পিজি) হাসপাতালে প্রতুল মুখোপাধ্যায়। ছবি: রতন বসু মজুমদার

বাংলাদেশে প্রতুল মুখোপাধ্যায় প্রথম এসেছিলেন ১৯৪২ সালে, বাবার সঙ্গে। এরপর আসেন ২০১০ সালে ২৬ মার্চ। সেদিন তিনি প্রথম আলোর কাছে বাংলাদেশে আসার অনুভূতি ব্যক্ত করেছিলেন এভাবে, ‘অ্যারোপ্লেন থেকে যখন বাংলাদেশে ভূমি প্রথম দেখতে পেলাম, মনে হলো কী আর নতুন দেশে এলাম। এ যে আমার নিজের ঘরেই যাচ্ছি। একটি স্মরণীয় দিনে (স্বাধীনতা দিবস) আসতে পেরে বেশি ভালো লাগছে।’

ওই বছর ‘সত্যেন সেন গণসংগীত উৎসব ও জাতীয় গণসংগীত প্রতিযোগিতা’র প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। উৎসবের আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এর আগে আরও একবার প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তখন আসতে পারেননি। বললেন, ‘কিছুটা অভিমানও ছিল। সেটা বলব না। যখন জানতে পারলাম, নতুন প্রজন্মের অনেক শ্রোতা আমার গান শোনার জন্য অপেক্ষা করছে, তখন সব অভিমান ভুলে গেছি।’

বাংলা চলচ্চিত্র ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’-এ প্লেব্যাক করেছেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। তাঁর অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘পাথরে পাথরে নাচে আগুন’ (১৯৮৮), ‘যেতে হবে’ (১৯৯৪), ‘ওঠো হে’ (১৯৯৪), ‘কুট্টুস কাট্টুস’ (১৯৯৭), ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’ (২০০০), ‘তোমাকে দেখেছিলাম’ (২০০০), ‘স্বপনপুরে’ (২০০২), ‘অনেক নতুন বন্ধু হোক’ (২০০৪), ‘হযবরল’ (২০০৪), ‘দুই কানুর উপাখ্যান’ (২০০৫), ‘আঁধার নামে’ (২০০৭)। বাংলাদেশে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন থেকে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের একটি অ্যালবাম প্রকাশিত হয় ২০১১ সালের মার্চে। অ্যালবামটির নাম ‘আমি বাংলায় গান গাই’। প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র—অন্বেষণ প্রযোজিত ও মানস ভৌমিক পরিচালিত ‘প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের গান’ এবং সমকালীন চলচ্চিত্র প্রযোজিত ‘ডিঙা ভাসাও’।