মেলায় যাই রে: বৈশাখ এলে যে গান শোনা যায় বেশি

মাকসুদুল হক
ছবি: সংগৃহীত

বৈশাখের অপেক্ষা কেবল নতুন বছরের জন্য নয়, বৈশাখী মেলার জন্যও। বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে বৈশাখী মেলা বাংলাদেশের ঐতিহ্য। সেই প্রাণের ডাককে গানে রূপ দিয়েছিল জনপ্রিয় ব্যান্ড ফিডব্যাক। ১৯৯০ সালে ‘মেলা’ অ্যালবামের ‘মেলায় যাই রে’ গানটি দিয়ে তোলপাড় তুলেছিল গানের দলটি। পয়লা বৈশাখ এলেই শোনা যেত ‘মেলায় যাই রে’।

মঞ্চে মাকসুদুল হক
ছবি: প্রথম আলো

‘জেগেছে বাঙালির ঘরে ঘরে, এ কী মাতনদোলা, বছর ঘুরে এল আরেক প্রভাত নিয়ে, ফিরে এল সুরের মঞ্জুরি, পলাশ–শিমুলগাছে লেগেছে আগুন, এ বুঝি বৈশাখ এলেই শুনি, মেলায় যাই রে, মেলায় যাই রে’... এ–ই ছিল মাকসুদের গাওয়া জনপ্রিয় সেই গান। গানটির কথা ও সুর মাকসুদুল হকের। গানটি তিনি লিখেছিলেন ১৯৮৮ সালে। এক সাক্ষাৎকারে মাকসুদ বলেছিলেন, গানটি একবারে লেখেননি তিনি। সময় নিয়েছিলেন প্রায় দুই মাস। সংশোধন করেছিলেন সাত-আটবার। তারপর করেন সুর। গানটির রেকর্ডিংও এক দিনে হয়নি। ঢাক, ঢোল, মন্দিরার শব্দ ধারণ করতে হয়েছে ডিজিটাল মাধ্যমে। এভাবে পুরো গানটি তৈরি করে রেকর্ড করতে লেগে যায় এক থেকে দেড় বছর। তবে রেকর্ড করার আগেই মঞ্চে গানটি করত ফিডব্যাক। স্মৃতিচারণ করে মাকসুদ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ১৯৮৮ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হলে ফিডব্যাকের প্রথম কনসার্ট হয়। সেখানেই প্রথম গানটি করেন তাঁরা। গানটির সঙ্গে একত্রে নেচেছিলেন মেডিকেল কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। সেদিন নাকি দর্শক-শ্রোতার অনুরোধে দুবার গাইতে হয়েছিল গানটি।

এই গান নিয়ে একসময় ওঠে মৃদু বিতর্ক। গানের একটি চরণ ‘বখাটে ছেলের ভিড়ে ললনাদের রেহাই নাই’ যেন ইভ–টিজিংয়ে উদ্বুদ্ধ করে, এমন কথাও অনেককে বলতে শোনা যায়। এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মাকসুদ বলেছিলেন, নব্বইয়ের দশকেই প্রথম ‘ইভ–টিজিং’, ‘যৌন হয়রানি’ শব্দবন্ধগুলো মানুষের সামনে আসে। তখন এগুলো তেমন স্পর্শকাতর বিষয় ছিল না, যতটা আজ হয়েছে। ১৯৯৩ সালে গানটি প্রকাশের তিন বছর পর আমরা প্রথম কোনো পাবলিক অনুষ্ঠানে নারী লাঞ্ছনার ঘটনার কথা জানতে পারি। মাকসুদ বলেছিলেন, ‘২০১৫ সালের বৈশাখে নারী লাঞ্ছনার ঘটনাটি আমাকে হতাশ করেছে, ভীষণ পীড়া দিয়েছে।’

সেই পুরোনো সদস্যদের ফিডব্যাক
ছবি: সংগৃহীত

‘মেলা’ ছাড়া ফিডব্যাকের বেশ কিছু গান আজও ভীষণ জনপ্রিয়। ১৯৮৬ সালে দলটি বের করে প্রথম অ্যালবাম ‘ফিডব্যাক’। এরপর একে একে আসে উল্লাস, মেলা, জোয়ার, বাউলিয়ানা, বঙ্গাব্দ ১৪০০, দেহঘড়ি, আনন্দ, শূন্য-২ অ্যালবামগুলো। ১৯৯৬ সালে ফিডব্যাক ছেড়ে নতুন ব্যান্ড ‘মাকসুদ ও ঢাকা’ গড়েন মাকসুদুল হক।