
সিনড্রেলাকে নিয়ে তার বাবার গাওয়া সেই গানের কথাগুলো আজ একবার মনে করিয়ে দেওয়া যাক। কোথাও গান বেজে উঠলেই ছোট্ট সিনড্রেলা ঘুরে ঘুরে নাচ শুরু করত। রাজ্যের কাজের বোঝা মাথায় নিয়ে বসে থাকা বাবাকে এসে বলত, ‘বাবা প্লিজ, এসো, আমরা নাচি।’ বাবা তাঁর ‘রাজকন্যা’র সঙ্গে নাচ করতেন। সিনড্রেলা যখনই ডাকত, বাবা তখনই তার সঙ্গে নাচ করতেন। কেননা ঘড়ির কাঁটা খুব দ্রুত চলে যেত মাঝরাতের দিকে। সিনড্রেলা ঘুমাতে চলে যেত। সিনড্রেলা যতক্ষণ জেগে থাকবে, ততক্ষণ একটি গান থেকেও বঞ্চিত হতে চান না বাবা।
২০০৭ সালে অসাধারণ এই গানটি করেন মার্কিন শিল্পী স্টিভেন কার্টিস চ্যাপম্যান। ওই বছর প্রকাশিত তাঁর ‘দিস মোমেন্ট’ অ্যালবামে ঠাঁই হয় গানটির। আর পৃথিবীর সংগীতপিপাসু সব বাবা ও মেয়ের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নেয় সিনড্রেলা গানটি। এই সিনড্রেলা আর কেউ নয়, চ্যাপম্যানের মেয়ে মারিয়া। তাকে ভেবেই বাবা-মেয়ের চিরায়ত মমতার গল্পে গানটি করেছিলেন শিল্পী। এ গান নিয়ে অ্যালবামটি প্রকাশের ঠিক পরের বছর ঘটল অঘটন। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মারিয়া চলে গেল। ঘরের কাছেই একটি দুর্ঘটনায় মারা যায় সে। এ ঘটনায় ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন চ্যাপম্যান ও তাঁর স্ত্রী। মারিয়াকে চীন থেকে দত্তক নিয়েছিল চ্যাপম্যানের পরিবার। যদিও তাঁদের ছিল তিন সন্তান। তবু চীন থেকে মোট তিনজন অভিভাবকহীন শিশুকে দত্তক নিয়েছিল চ্যাপম্যান পরিবার। তাদেরই একজন মারিয়া।

শিশু-দত্তকের অভিজ্ঞতা থেকে চ্যাপম্যান গড়েছেন ‘শো হোপ’ নামের একটি দাতব্যপ্রতিষ্ঠান। অভিভাবকহীন শিশুদের দত্তক নেওয়ার যাবতীয় তথ্য ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয় প্রতিষ্ঠানটি। মারিয়ার মৃত্যুর পর চীনের লুইয়াংয়ে অভিভাবকহীন বিশেষ শিশুদের দেখভালের জন্য চালু করা হয় ‘মারিয়াস বিগ হাউস অব হোপ’।
মারিয়ার মৃত্যুর পর ‘সিনড্রেলা’ গানটি আর গাইবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একাধিকবার গ্র্যামিজয়ী এই শিল্পী। কিন্তু পরে তাঁর মনে হয়, মারিয়া চায় না যে তিনি এই গানটি গাওয়া বন্ধ করে দেন। মারিয়ার প্রতি সম্মান জানিয়ে চ্যাপম্যান আবারও গাইতে শুরু করেন সিনড্রেলা। ২০০৯ সালে বিউটিউইলরাইজ অ্যালবামের জন্য চ্যাপম্যান গাইলেন ‘হ্যাভেন ইজ দ্য ফেস’ গানটি। এই গান নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাঁর কাছে। চ্যাপম্যান বলেছিলেন, ‘আমি এখন স্বর্গ নিয়ে ভাবি। কেননা আমার মেয়েটা এখন ওখানেই থাকে।’
রাসেল মাহ্মুদ, এবিসি নিউজ অবলম্বনে