যে গানে অমর আজাদ রহমান

সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান। ছবি: প্রথম আলো
সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান। ছবি: প্রথম আলো

অনেকটা নিভৃতেই চলে গেলেন আধুনিক বাংলা গানের কিংবদন্তী সুরস্রষ্টা ও সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান। তাঁর এই চিরপ্রস্থানে যবনিকাপাত ঘটল সংগীতের একটি অধ্যায়ের। শুধু একজন সুরকার হিসেবেই নন, একাধারে তিনি ছিলেন কণ্ঠশিল্পী, গীতিকার ও বাংলা খেয়াল রাগের প্রবর্তক। তাঁর অমর সৃষ্টিগুলো বাংলা গানকে করেছে সমৃদ্ধ।

আজাদ রহমানের সুরারোপিত ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’ গানটি দিয়েই শুরু করা যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণাদায়ী অন্যতম ছিল এই গান। ১৯৭০ সালে গানটি রেকর্ড হয় করাচি ট্রান্সক্রিপশন সার্ভিসে। নয়ীম গহরের লেখা এই গানে ওই সময় কণ্ঠ দেন নজরুলসংগীতের প্রখ্যাত শিল্পী ফিরোজা বেগম ও সাবিনা ইয়াসমীন। তাঁদের সঙ্গে নেপথ্যে সমবেত কণ্ঠ দেন জিনাত রেহানা, নাসির হায়দার, আহমেদুল্লাহ সিদ্দিকী, আসাদুল হক ও লায়লা মোজাম্মেল। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পর এই গান সাবিনা ইয়াসমীনের একক কণ্ঠে আবার ধারণ করা হয়।

বাংলা চলচ্চিত্রে তিনি রেখে গেছেন কালজয়ী কিছু গান। তেমনি কিছু গানের কথা উল্লেখ করা যায়।
যাদুর বাঁশি চলচ্চিত্রের ‘আকাশ বিনা চাঁদ থাকিতে পারে না, জাদু বিনা বাঁশি বাজিতে পারে না’। আহমেদ জামান চৌধুরীর লেখা এই গান গেয়েছিলেন রুনা লায়লা। রুনা লায়লা তাঁর ফেসবুক পোস্টে প্রতিক্রিয়ায় জানান, ‘আজাদ ভাইয়ের সুরারোপিত এই গানের জন্য শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে আমি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করি।’
চলচ্চিত্রে তাঁর সুরারোপিত বেশ কিছু গানে তিনি নিজেই কণ্ঠ দিয়েছিলেন, এর মধ্যে দুটি গান এখনো সব ধরনের শ্রোতার প্রিয় গান। একটি ‘এপার ওপার’ চলচ্চিত্রের 'ভালোবাসার মূল্য কত আমি কিছু জানি না, এ জীবন তুল্য কি তা আমি সে তো বুঝি না’। ফজল–এ–খোদার লেখা এই গান কানে বাজলেই চোখে ভেসে ওঠে অভিনেতা সোহেল রানার মুখটি।

আজাদ রহমানের হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন গীতিকবি কবির বকুল। ছবি: ফেসবুক
আজাদ রহমানের হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন গীতিকবি কবির বকুল। ছবি: ফেসবুক

অন্য আরেকটি গান ‘ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়, বাতাসের বেগ দেখে মেঘ চেনা যায়’। ‘দস্যু বনহুর’ চলচ্চিত্রের এই গান লিখেছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার।
সুরকার, কণ্ঠশিল্পীর পাশাপাশি তিনি গীত রচনাও করেছেন। তাঁর লেখা ও সুর করা একটি গান 'মনেরও রঙে রাঙাব, ফুলেরও ঘুম ভাঙাব’। ‘মাসুদ রানা’ চলচ্চিত্রের এই গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন সেলিনা আজাদ (তাঁর সহধর্মিণী)। গানটি কানে বাজলেই ভেসে ওঠে কবরীর মুখ।
এ ছাড়া যে গানগুলো সুরস্রষ্টা হিসেবে তাঁকে অমর করে রাখবে তেমন কয়েকটি গানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘অনন্ত প্রেম’ চলচ্চিত্রের ‘ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি’, গেয়েছেন মোহাম্মদ খুরশীদ আলম ও সাবিনা ইয়াসমীন। মোহাম্মদ আবদুল জব্বারের গাওয়া ‘মাস্তান’ চলচ্চিত্রের গান ‘এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি কেন একা বয়ে বেড়াও’।
‘আগন্তুক’ চলচ্চিত্রের দুটি গান শাহনাজ রহমতুল্লাহর গাওয়া আজিজুর রহমানের লেখা ‘অলিরা গুনগুন গুনগুন গুনগুনিয়ে’ এবং আবু হায়দার সাজদুর রহমানের লেখা ও মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের গাওয়া ‘বন্দী পাখির মতো মনটা কেঁদে মরে’। এ রকম আরও অসংখ্য কালজয়ী গান সৃষ্টি করে গেছেন তিনি।

শীর্ষ ১০ গান ­­­

১. জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো
২. ভালোবাসার মূল্য কত
৩. ডোরাকাটা দাগ দেখে বাঘ চেনা যায়
৪. মনেরও রঙে রাঙাব
৫. ও চোখে চোখ পড়েছে যখনি
৬. আকাশ বিনা চাঁদ
৭. এক বুক জ্বালা নিয়ে বন্ধু তুমি
৮. বন্দী পাখির মতো
৯. অলিরা গুনগুন গুনগুন গুনগুনিয়ে
১০. ওই মধু চাঁদ আর এই জোসনা