সংগীত ব্যক্তিত্ব মোবারক হোসেন খান আর নেই

প্রখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব মোবারক হোসেন খান আর নেই। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে সংগৃহীত
প্রখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব মোবারক হোসেন খান আর নেই। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে সংগৃহীত

প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী আয়েত আলী খানের ছেলে সংগীত ব্যক্তিত্ব মোবারক হোসেন খান আর নেই। আজ রোববার সকালের কোনে একসময় ঘুমের ভেতর মারা গেছেন তিনি। প্রথম আলোকে খবরটি নিশ্চিত করেছেন তাঁর মেয়ে অধ্যাপক রিনাত ফৌজিয়া খান।

তিনি প্রথম আলোকে জানান, দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন তাঁর বাবা। সঙ্গে ছিল বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা। আজ ভোরে স্ত্রী ফৌজিয়া ইয়াসমীন খেয়াল করেন মোবারক হোসেন খানের শরীর নিথর হয়ে আছে, হাত দিয়ে দেখেন শরীর ঠান্ডা। তাই ঠিক কখন মারা গেছেন, তা বলা যাচ্ছে না। তবে ভোরের কোনো একসময় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন মোবারক হোসেন খান। আপাতত তাঁর মরদেহ রাখা হয়েছে বারডেমের হিমঘরে। ছেলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরার পর জানাজা ও দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মোবারক হোসেন খান ১৯৩৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার শিবপুর গ্রামের সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁ প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী। মা উমার উন-নেসা। তাঁর চাচা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মোবারক হোসেন খান সবার ছোট। তাঁর বড় তিন বোন আম্বিয়া, কোহিনূর ও রাজিয়া এবং বড় দুই ভাই প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ আবেদ হোসেন খান ও বাহাদুর হোসেন খান।

মোবারক হোসেন খান। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
মোবারক হোসেন খান। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী বড় দুই ভাই সংগীতে মগ্ন ছিলেন। তাই বাবা চেয়েছিলেন, মোবারক হোসেন খান যেন সংগীতের পাশাপাশি পড়াশোনা করেন। এ জন্য সংগীতে দীক্ষা গ্রহণের পূর্বে তিনি মাইনর স্কুলে প্রথম থেকে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ গ্রহণ করেন। দেশ বিভাগের পূর্ব থেকে তাঁর বাবার গান শেখানোর উদ্দেশ্যে কুমিল্লা জেলায় যাতায়াত ছিল এবং ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তাঁরা সপরিবারে সেখানে চলে যান। মোবারক হোসেন খান কুমিল্লা জেলা স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৫২ সালে মেট্রিক পাস করেন। পরে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাস বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।

সাবিনা ইয়াসমীন, রিনাত ফৌজিয়া খান ও শেখ সাদি খানের সঙ্গে মোবারক হোসেন খান। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে সংগৃহীত
সাবিনা ইয়াসমীন, রিনাত ফৌজিয়া খান ও শেখ সাদি খানের সঙ্গে মোবারক হোসেন খান। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে সংগৃহীত

১৯৬২ সালের ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ বেতারের অনুষ্ঠান প্রযোজক হিসেবে মোবারক হোসেন খানের কর্মজীবন শুরু হয়। পরে তিনি বাংলাদেশ বেতারের পরিচালক হিসেবে ৩০ বছর কর্মরত ছিলেন। এ সময় তিনি কয়েকটি বই লিখেছেন। লেখালেখি সূত্রে পরিচয় হয় কবি আল মাহমুদের সঙ্গে। আল মাহমুদ ছিলেন তখন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সহকারী পরিচালক। তাঁর মাধ্যমে ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম সংগীতবিষয়ক বই ‘সংগীত প্রসঙ্গ’। বিভিন্ন পত্রিকায় তাঁর সংগীতবিষয়ক লেখা নিয়ে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় বই ‘বাদ্যযন্ত্র প্রসঙ্গ’। এরপর তিনি রচনা করেন ‘সংগীত মালিকা’। এই বইটিও প্রকাশ করে বাংলা একাডেমি। পরে তিনি সংগীত ও শিশুবিষয়ক ৫০টি গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি ১৯৯২ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।

মোবারক হোসেন খান। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে সংগৃহীত
মোবারক হোসেন খান। ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে সংগৃহীত

মোবারক হোসেন খান জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীনের বড় বোন সংগীতশিল্পী ফৌজিয়া ইয়াসমীনকে বিয়ে করেন। তাঁদের তিন সন্তানের মধ্যে কন্যা রিনাত ফৌজিয়া সংগীতশিল্পী আর দুই ছেলে তারিফ হায়াত খান ও তানিম হায়াত খান।

তিনি একুশে পদক পেয়েছেন ১৯৮৬ সালে। এ ছাড়া পেয়েছেন স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৪) ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার (২০০২)।