সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন মমতাজ

ভারতের তামিলনাড়ুর একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন শিল্পী মমতাজ বেগম। ছবি: সংগৃহীত

তিন দিন আগে বিমানবন্দরে বসে লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী মমতাজ ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘খারাপ নিউজ দেখতে দেখতে চোখ, মন এখন ক্লান্ত। দুঃখ সইতে সইতে নাকি সুখ আসে, তেমনি খারাপ খবর দেখতে দেখতে একটা ভালো খবর পেয়ে আর ঘরে থাকতে পারলাম না। সাহস করে বের হয়েছি।’ সেদিন বের হয়ে কোথায় যাচ্ছিলেন না জানা গেলেও আজ সোমবার সন্ধ্যায় তা জানালেন। ভারতের তামিলনাড়ুর একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি নিতে সেদিন বিমানে ভারতের পথে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এমন একটি প্রাপ্তিতে ভীষণ খুশি এই শিল্পী ও সাংসদ।

ডক্টরেট ডিগ্রি লাভকে জীবনের অন্যতম একটি বড় ঘটনা বলে মনে করেন মমতাজ। ছবি: সংগৃহীত

শনিবার ১০ এপ্রিল ভারতের তামিলনাড়ুর গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটি এ সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশের লোকগানের শিল্পী ও সাংসদ মমতাজকে। একটি বার্তায় তারা উল্লেখ করে, শিল্পী হিসেবে ৭০০টির বেশি একক অ্যালবামের রেকর্ড, সুদীর্ঘ ৩০ বছর বাংলা গানকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা ও সমাজসেবা ছাড়াও নানামুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রেখে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মমতাজ। যে কারণে তারা বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শনিবার তাঁকে ‘ডক্টর অব মিউজিক’ পদক প্রদান করে। মমতাজের হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান পি ম্যানুয়েল। একই সময়ে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন চেন্নাইয়ের সাবেক জেলা জজ থিরু এজে মুরুগানানথাম, তামিলনাড়ুর আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু খলিফা মাস্তান সাহেব ক্বাদিরি, কেরালা ডক্টর এ পি জে আবদুল কালাম ইনস্টিটিউট অব বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পরিচালক উইলাত কোরাইয়া।

মমতাজ
প্রথম আলো

সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করতে ১০ এপ্রিল সকালের ফ্লাইটে ভারতে রওনা হন মমতাজ। যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে আজ ১২ এপ্রিল তিনি দেশে ফিরেছেন। ঢাকার বাড়িতে বসে তিনি কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। এমন একটি সম্মাননা প্রাপ্তির অনুভূতি জানিয়ে মমতাজ বলেন, ‘৩০ বছর ধরে গানের সঙ্গে আছি। মানুষের ভালোবাসা পেয়ে চলছি। চেষ্টা করেছি, মানুষের পাশে থাকার। জনপ্রতিনিধি হয়েও সব সময় মানুষের কাছাকাছি আছি। এই সময়ে আমি অনেক সম্মাননা অর্জন করেছি। কিন্তু এবার যা ঘটেছে, তা আমার জীবনের অন্যতম একটি বড় ঘটনা। আমার জন্য অনেক বড় পাওয়া। দেশের বাইরের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন প্রাপ্তি আমার আগামী দিনের পথচলায় অনেক বেশি অনুপ্রাণিত করবে।’

গান ও রাজনীতির বাইরেও নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন মমতাজ। ছবি: সংগৃহীত

মমতাজ তিন দশকের বেশি সময় ধরে পেশাদার শিল্পী হিসেবে কাজ করছেন। সংগীতজীবনে সাত শতাধিক একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। ২০০০ সালে হানিফ সংকেতের আমন্ত্রণে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে গান করেন তিনি। মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায় ও সোহেল আজিজের সুরে ‘রিটার্ন টিকিট’ গানটি গেয়েছিলেন সে সময়। এরপরই রাতারাতি সারা দেশের শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যান তিনি। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন মমতাজ। ২০১৮ সালে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন এই শিল্পী। তার আগে ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংসদ সদস্য মনোনীত হন।

মমতাজ

গান ও রাজনীতির বাইরেও নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন মমতাজ। দায়বদ্ধতা থেকে ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন মমতাজ চক্ষু হাসপাতাল। ২০০৮ সালে সিঙ্গাইরে তাঁর গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘মমতাজ শিশু ও চক্ষু হাসপাতাল’। বাংলাদেশ বধির ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি তিনি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন ২০১০ সাল থেকে। মমতাজ বেগম আন্তর্জাতিক চক্ষু চিকিৎসা সংস্থা অরবিসের দৃষ্টিদূত ও অস্ট্রেলিয়ার একটি শিক্ষাবিষয়ক সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।