সিডনি বিমানবন্দরে জেমসের সঙ্গে
জনপ্রিয় সংগীত তারকা জেমস। মন মাতানো কণ্ঠের জন্য জনপ্রিয় এই রক তারকার দেশে এবং বিদেশে পরিচিত ‘গুরু’ নামে। ছেলেবেলা থেকে গানের সঙ্গে তাঁর গড়ে ওঠে সখ্য। সংগীতজগতে দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পার করে এখনো সবুজ প্রাণের জেমস। লিসেন ফর আয়োজিত ‘বাংলাদেশ নাইট ২০১৭’ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে সিডনি পৌঁছেছেন তিনি। সিডনির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নেমেই প্রবাসী বাঙালি ভক্তদের ভালোবাসায় সাড়া দিয়েছেন। প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন নিজের এবং বাংলাদেশের সংগীত নিয়ে।
গানের বাইরে অন্য কিছু ভাবতে পারি না
দীর্ঘদিন শ্রোতা ও ভক্তদের নতুন কোনো গান উপহার দিতে পারেননি। জেমস এখন কী করছেন? সিডনি বিমানবন্দরে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘গানের বাইরে অন্য কিছু নিয়ে কখনোই ছিলাম না, গান নিয়েই কাজ করছি।’ বাংলা গানের প্রতি বাঙালিদের ভালোবাসা কমে গেছে? জেমস বলেন, ‘এ ধারণা ভুল। আসলে বাংলা গানের কদর কমেনি, বদলেছে গান শোনার মাধ্যম। ২০০৯-১০ সালের পর থেকে মূলত সিডি আকারে গানের অ্যালবাম বের করাটা কমে গেছে।’ একটু দম নিয়ে আবার বললেন, ‘প্রথম দিকে গান রেকর্ড করা হতো গ্রামোফোনে। সেখান থেকে পরিবর্তন হয়ে গান রেকর্ড করা শুরু হলো অডিও ক্যাসেটে, তারপর সিডিতে। এখন সেটা পুরোপুরিই বদলে গিয়ে হয়েছে ডিজিটাল। এখন মোবাইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে বা বিভিন্ন অ্যাপে গান শোনে মানুষ। আর ইউটিউব তো রয়েছেই।’ এ পরিবর্তনের সঙ্গে শিল্পীদের তাল মিলিয়ে নিতে অনেকটা সময় লেগেছে। এ কারণেই আসলে মাঝখানে বাজারে জনপ্রিয় শিল্পীদের অ্যালবামের দেখা মেলেনি বলে মনে করেন জেমস। তবে ইদানীং আবার সবাই নতুনভাবে শুরু করেছেন বলে জানান তিনি।
আন্তর্জাতিকভাবে বাংলা গানের কদর আর শ্রোতা বেশি
আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলা গানের কদর রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বে বাংলা ভাষার অবস্থান অষ্টম, সেই দিক থেকে হলেও বাংলা গানের শ্রোতার সংখ্যা আন্তর্জাতিকভাবে অনেক বেশি। এদিকে জনপ্রিয় শিল্পীরা দেশে কনসার্ট কম করছেন, এমনটাও ভুল বললেন তিনি। জেমস বলেন, ‘গানের কনসার্টের মৌসুম রয়েছে। আর বাংলাদেশে কনসার্টের জনপ্রিয়তা বেড়েছে, কমেনি।’ দেশের বাইরের সংগীত অঙ্গনেও খ্যাতি আর ভক্ত রয়েছে জেমসের। সংগীতজীবনের শুরুর দিকে জেমস তাঁর ব্যান্ডে ইংরেজি কভার গান করতেন। অল্প দিনেই সেসব গান বাদ দিয়ে সৃজনশীল মৌলিক বাংলা গান গাইতে শুরু করেন। দেশের বাইরে কিছু চলচ্চিত্রে সুপারহিট গান উপহার দিয়েছেন তিনি। জানালেন, কোনো দিন ভালো লাগলে আবারও এমন কাজ করবেন তিনি।
যে দেশে যাই, ভক্তদের ভালোবাসা খুব কাছে টানে
ইদানীং কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করেছেন জেমস। নিজের জনপ্রিয় সব গানে প্রবাসের ক্লান্তি ভুলিয়েছেন প্রবাসীদের। আর সব ভ্রমণই স্মরণীয় বলে জানান জেমস। বললেন, ‘যে দেশেই যাই, সেখানেই ভক্তদের ভালোবাসা খুব কাছ থেকে দেখতে পাই। ভক্তদের ভালোবাসা খুব কাছে টানে।’ তবে এত ব্যস্ততার মাঝেও নিজ উদ্যোগে একটি বৃদ্ধাশ্রম ও এতিমখানা পরিচালনা করেন এই সংগীত তারকা। তবে স্বভাবে যেমন স্বল্পভাষী মানুষ তিনি, তেমনই প্রচারবিমুখ। নিজের বিভিন্ন কাজের কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তবে ছোট্ট কথায়, নিজেদের এই অবদানকে সামান্য কিছুই দাবি করেন তিনি।
ভালো লাগে অস্ট্রেলিয়া
আজ ৪ নভেম্বর সিডনিতে লিসেন ফর আয়োজিত ‘বাংলাদেশ নাইট ২০১৭’ অনুষ্ঠানে সবাইকে আমন্ত্রণ জানান জেমস। সেই সঙ্গে জানান পাঁচ বছর পর আবার অস্ট্রেলিয়ায় আসার কথা। বললেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় বরাবরই ভালো লাগে। তার বেশি ভালো লাগে এখানকার বাঙালিদের ভালোবাসা। গান গাওয়ার সময় তাদের উৎসাহ আর আনন্দ দেখে আমি খুব আনন্দ পাই।’