সুরস্রষ্টা কমল ও শিল্পী ফিরোজার জন্মদিন আজ

হামিন আহমেদ, তাহসিন আহমেদ (ওপরে), ফিরোজা বেগম ও শাফিন আহমেদ। ছবি: হামিন আহমেদের সৌজন্যে
হামিন আহমেদ, তাহসিন আহমেদ (ওপরে), ফিরোজা বেগম ও শাফিন আহমেদ। ছবি: হামিন আহমেদের সৌজন্যে

দেশের প্রখ্যাত সংগীত ব্যক্তিত্ব কমল দাশগুপ্ত ও ফিরোজা বেগমের আজ জন্মদিন। ২৮ জুলাই ১৯১১ সালে যশোরে কমল দাশগুপ্ত এবং ১৯৩০ সালের একই দিনে ফরিদপুরে জন্মগ্রহণ করেন ফিরোজা বেগম। বাংলা গানের এ দুই কিংবদন্তিতুল্য শিল্পী ছিলেন স্বামী-স্ত্রী।

কমল দাশগুপ্ত ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা সুরস্রষ্টা ও সংগীত পরিচালক। রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলের গানের বাইরে আধুনিক বাংলা গানের স্বর্ণযুগের ভিতটা রচিত হয়েছে তাঁর হাত ধরেই। খ্যাতিকে পাশে সরিয়ে রেখে জীবনভর সংগীতসাধনা করে গেছেন। আর বাংলা সংগীতভুবনকে দিয়েছেন বৈচিত্র্যময় সব সুরের গান। ১৯৭৪ সালের ২০ জুলাই ৬২ বছর বয়সে নীরবে পৃথিবী ছাড়েন তিনি।

হামিন আহমেদ, ফিরোজা বেগম ও শাফিন আহমেদ। ছবি: হামিন আহমেদের সৌজন্যে
হামিন আহমেদ, ফিরোজা বেগম ও শাফিন আহমেদ। ছবি: হামিন আহমেদের সৌজন্যে

ফিরোজা বেগমের কণ্ঠমাধুরীতে মুগ্ধ ছিলেন স্বয়ং কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কবির অনেক গান তাঁর কণ্ঠ হয়ে বেঁচে আছে বাংলা সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে। নজরুলের গানকে ‘নজরুলসংগীত’ হিসেবে বাড়তি মর্যাদা দানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এই শিল্পী। নজরুলসংগীতকে মানুষের মনের আঙিনায় পৌঁছে দিতে ফিরোজা বেগম আজীবন সাধনা করে গেছেন। ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মারা যান এই শিল্পী।

কমল দাসগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত
কমল দাসগুপ্ত। ছবি: সংগৃহীত

কমল দাসগুপ্ত
কাজী নজরুল ইসলাম নিজের গানের সুর নিজেই করতেন। মাঝেমধ্যে স্নেহভাজনদের দিয়েও করাতেন। কমল দাশগুপ্ত ছিলেন সে রকম একজন। ১৯৩৪ সাল থেকে নজরুল ইসলামের গানের সুর করতে শুরু করেন কমল। পরে দেখা যায় তাঁর চেয়ে বেশি নজরুলের গান আর কেউ সুর করতে পারেনি। প্রায় ১৫০, কারও মতে ২০০, কেউবা মনে করেন নজরুলের ৪০০ গানের সুর করেছেন কমল।

১৯৩৫ সালে এইচএমভি (হিজ মাস্টার্স ভয়েস) গ্রামোফোন কোম্পানিতে সুরকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেছিলেন কমল। কাজ করেছিলেন কলাম্বিয়া রেকর্ড কোম্পানিতেও। এইচএমভিতে ১ মাসে ৫৩টি গান রেকর্ড করে রীতিমতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। এ ছাড়া প্রতি মাসে গড়ে ৪৫টি করে গান সুর করার কৃতিত্ব ছিল কমল দাশগুপ্তের। ১৯৪৩ সালে যূথিকা রায়কে দিয়ে মীরাবাঈয়ের ভজন গাওয়ান। সেই ভজন এত জনপ্রিয় হলো যে মহাত্মা গান্ধী যূথিকাকে ‘মীরাবাঈ’ উপাধি দিয়ে ফেললেন। আর সুরকার কমল দাসগুপ্তকে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয় দিল ‘ডক্টরেট’ উপাধি।

ফিরোজা বেগম। ছবি: সংগৃহীত
ফিরোজা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

ফিরোজা বেগম
কলকাতার এইচএমভির মহড়ায় কবি নজরুলের সঙ্গে প্রথম পরিচয় হয় ফিরোজার। সেখানকার অডিশনে ফিরোজা বেগম কবিকে তাঁর ‘যদি পরানে না জাগে আকুল পিয়াসা’ গানটি শুনিয়েছিলেন। তাঁর বয়স তখন ১১ নয়তো ১২ বছর। গানটি শুনে নজরুল খুব প্রশংসা করেছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন অল-ইন্ডিয়া রেডিওতে গান করে সংগীতবোদ্ধাদের তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। ১৯৪২ সালে এইচএমভি থেকে তাঁর গানের প্রথম রেকর্ড বের হয়।

ফিরোজার শৈশব কেটেছে যশোরে, কৈশোরের কিছুদিন কেটেছে কোচবিহারে। তাঁর পরিবারের উপার্জনের উৎস ছিল গুপ্ত প্রেস। পরে সপরিবারে তাঁরা চলে যান কলকাতায়। কলকাতার মানিকতলার একটি বাড়িতে তাঁরা বসবাস শুরু করেন। নয় ভাইবোনের সবাই ছিলেন সংগীতের সঙ্গে যুক্ত। সবার রেকর্ড বেরিয়েছিল এইচএমভি থেকে। বাড়িতেই সংগীতের ভিতটা তৈরি হয়েছিল ফিরোজার। সে সময় বাড়িতে বিখ্যাত সব ওস্তাদের আনাগোনা ছিল।

‘মোমের পুতুল’ ও ‘দূর দ্বীপবাসিনী’ গান দুটি সংগীতজীবনে তাঁকে বড় সাফল্য এনে দেয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৩৮০টির বেশি একক সংগীতানুষ্ঠান করেছিলেন তিনি, পেয়েছেন বহু পুরস্কার। স্বাধীনতা পদক ও একুশে পদক এর অন্যতম। এ ছাড়া তিনি পেয়েছেন মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননা পুরস্কার, নেতাজি সুভাষচন্দ্র পুরস্কার, সত্যজিৎ রায় পুরস্কার, নজরুল আকাদেমি পদক।

গান করছেন ফিরোজা বেগম। ছবি: সংগৃহীত
গান করছেন ফিরোজা বেগম। ছবি: সংগৃহীত

ফিরোজা ও কমল
১৯৫৬ সালে কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে বিয়ে হয় ফিরোজা বেগমের। তখন কমল দাশগুপ্তর বয়স ছিল ৪৩ বছর। কলকাতায় তাঁদের সন্তান তাহসিন, হামিন ও শাফিনের জন্ম হয়।

( পুনঃপ্রকাশিত)