২৫ লাখ টাকা জিতল চট্টগ্রামের মহিমা

গানের রিয়েলিটি শোতে অংশ নিয়ে ২৫ লাখ টাকার প্রথম পুরস্কার জিতল চট্টগ্রামের মেয়ে মহিমা দেব ত্রয়ী। শহরটির সিটি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মহিমার এই প্রাপ্তি ঘটেছে স্টার সার্চ প্রতিযোগিতায়। জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে গতকাল সেরার নামটি ঘোষণা করা হয়।

প্রতিযোগিতার প্রধান তিন বিচারক তারিক আনাম খান, পূর্ণিমা ও চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে স্টার সার্চ প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ান মহিমা দেব ত্রয়ী
ছবি : সংগৃহীত

ছোটবেলা থেকেই গানের তালিম নিচ্ছে মাহিমা। একমাত্র বড় ভাই মহৎ দেব আপনের কাছে প্রথম গানের হাতেখড়ি। এরপর ওস্তাদ রিটন কুমার ও শুভ্রত দাশ অনুজের কাছে গান শিখছে। মহিমার বাবা অজিৎ দেব জানালেন, ছোটবেলা থেকেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন সংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে শতাধিক পুরস্কার অর্জন করেছে ত্রয়ী। গান, আবৃত্তি ও গীতাপাঠে তার এসব অর্জন ঘটেছে বলে জানালেন তিনি। ২০১৯ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহেও শাস্ত্রীয় সংগীতে সেরার পুরস্কার জিতেছে ত্রয়ী।

বাবা–মায়ের সঙ্গে ত্রয়ী
ছবি : ত্রয়ীর বাবার সৌজন্যে

‘টফি স্টার সার্চ’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে দেড় মাস ধরে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় রয়েছে ত্রয়ীর পরিবার। পরিবারের সমর্থন ও নিজের পরিশ্রমে এমন অর্জনে ভীষণ উচ্ছ্বসিত ত্রয়ী। প্রথম আলোকে ত্রয়ী বলল, ‘এত দিন অনেক পুরস্কারই পেয়েছি। কিন্তু এমন অর্জন হবে, কোনো দিনই ভাবিনি। আমার স্বপ্নটা অনেক বড় হয়ে গেছে। আমার মা–বাবা হয়তো গান করতে চেয়েছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। মা–বাবা আমার ভাই ও আমার মাধ্যমে তাঁদের স্বপ্ন পূরণের চেষ্টা করছেন। আমরাও মা–বাবার স্বপ্ন পূরণের চেষ্টাই করে যাচ্ছি।’

বাবা–মা ও একমাত্র ভাইয়ের সঙ্গে ত্রয়ী
ছবি : ত্রয়ীর বাবার সৌজন্যে

২৫ লাখ টাকার সম্মানী দিয়ে কী করবে জানতে চাইলে ত্রয়ী বলল, ‘কিছু ইনস্ট্রুমেন্ট কিনব। হারমোনিয়াম, তবলা কিনব আর সংগীতের ওপর একটা ডিগ্রি নেব। এই টাকায় আরেকটা কাজ করব, তা হচ্ছে মাকে ১৭ ভরি সোনা কিনে দেব।’ সোনা কেন? ‘চট্টগ্রামের ডাবলমুরিং থানার পাশে আমার বাবার স্মৃতি স্টুডিও অ্যান্ড মিউজিক নামে একটি দোকান ছিল। দোতলায় স্টুডিও আর নিচতলায় ক্যাসেট ও সিডির দোকান। বাবা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ওখানেই থাকতেন। মা আমাদের দুই ভাই–বোনকে গানের তালিমে নিয়ে যেতেন। ২০০৭ সালের একদিন গানের ক্লাসে দিয়ে এসে বাসায় দেখেন, সব চুরি হয়ে গেছে। এর মধ্যে মায়ের ১৭ ভরি সোনা ছিল আর পরিষ্কার মনে আছে, চোরেরা আমার গান শেখার হারমোনিয়ামটা ভেঙে রেখে যায়। হারমোনিয়াম মেরামত করে গান শেখার কাজ এখনো চালিয়ে নেওয়া গেলেও সোনা আর পাওয়া যায়নি। তাই পুরস্কারের চেকের টাকা পেলে মায়ের সেই চুরি হওয়া স্বর্ণালংকার ফিরিয়ে দেব। নিজের জন্য নতুন একটা হারমোনিয়াম আর তবলা কিনব।’

প্রতিযোগিতার প্রধান তিন বিচারক তারিক আনাম খান, পূর্ণিমা ও চঞ্চল চৌধুরীর সঙ্গে স্টার সার্চ প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ান মহিমা দেব ত্রয়ী
ছবি : সংগৃহীত

অনেক প্রতিযোগীর মধ্য থেকে সংগীত বিভাগে অংশ নেওয়া মহিমা দেব ত্রয়ীকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ত্রয়ীর হাতে পুরস্কার হিসেবে তুলে দেওয়া হয় ক্রেস্ট ও ২৫ লাখ টাকার চেক। প্রথম ও দ্বিতীয় রানারআপ হিসেবে ঘোষণা করা হয় ঈশান দে ও সাদমান খানের নাম। সংগীত বিভাগে অংশ নেওয়া এই দুই প্রতিযোগীও পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন ক্রেস্ট এবং যথাক্রমে ১৫ ও ১০ লাখ টাকার চেক। চতুর্থ থেকে দশম স্থান অধিকারী প্রতিযোগীরা পেয়েছেন ক্রেস্ট ও তিন লাখ টাকার চেক।
২১তম থেকে ৩০তম এবং ১১তম থেকে ২০তম স্থান অধিকার করা প্রতিযোগীরা পেয়েছেন ক্রেস্ট এবং যথাক্রমে ১ ও ২ লাখ টাকার চেক। প্রতিযোগিতার প্রধান তিন বিচারক তারিক আনাম খান, পূর্ণিমা ও চঞ্চল চৌধুরী বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন এবং তাঁদের হাতে ক্রেস্ট ও চেক তুলে দেন।