খোদ কোরিয়াতেই কমছে কে–পপের জনপ্রিয়তা

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপ—সর্বত্র মুহূর্তেই ফুরিয়ে যায় কে–পপ কনসার্টের টিকিট; কনসার্টে নামে লাখো শ্রোতার ঢলএক্স থেকে

দশকের পর দশক ধরে বিশ্বজুড়ে তরতরিয়ে বাড়ছে কে–পপের জনপ্রিয়তা। বিলবোর্ড তালিকা রীতিমতো শাসন করছে বিটিএস, ব্ল্যাকপিঙ্ক, সেভেনটিন বা স্ট্রে কিডসের মতো কে–পপ গ্রুপ। অ্যালবাম বিক্রিতে বিশ্বখ্যাত শিল্পীদেরও টেক্কা দিচ্ছে তারা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপ—সর্বত্র মুহূর্তেই ফুরিয়ে যায় কে–পপ কনসার্টের টিকিট; কনসার্টে নামে লাখো শ্রোতার ঢল। তবে বিশ্বজুড়ে প্রভাব বাড়লেও স্বদেশ দক্ষিণ কোরিয়ায় রীতিমতো হোঁচট খাচ্ছে কে–পপ। দেশটিতে ক্রমেই তলানিতে গিয়ে ঠেকছে কে–পপের প্রভাব।

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসের পরিসংখ্যান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মিউজিক চার্ট সার্কেল চার্ট। তাতে বলা হয়, গত বছরের তুলনায় এই বছর প্রকাশিত শীর্ষ ৪০০ গানের ডিজিটাল স্ট্রিমিং ৬ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় এই পতনের হার প্রায় ৫০ শতাংশ। অ্যালবাম বিক্রিও ৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪২ দশমিক ৪ মিলিয়নে, যেখানে গত বছর তা ছিল ৪৬ দশমিক ৭ মিলিয়ন।
সার্কেল চার্ট বলছে, গত বছর ৯টির মতো অ্যালবাম প্রতিটি ১ মিলিয়নের বেশি করে বিক্রি হয়েছিল, এবার সেই সংখ্যা ৭–এ নেমে এসেছে । গত বছর সেভেনটিনের অ্যালবাম তিন মিলিয়নের মাইলফলক ছুঁয়েছিল। তবে এই বছর কোনো অ্যালবাম বিক্রির হিসাবে তিন মিলিয়নের ধারেকাছে যায়নি।

আরও পড়ুন

কমছে কেন

বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয়তা বাড়লেও দক্ষিণ কোরিয়ায় কমছে কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সার্কেল চার্টের ডেটা সাংবাদিক কিম জিন-উ মনে করেন, বিদেশি শ্রোতা ধরতে গিয়ে কে-শিল্পীরা ইংরেজি গান গাইছেন বেশি। ইংরেজি গানের প্রতি ঝোঁক আর একঘেয়ে সাউন্ডের কারণে স্থানীয় শ্রোতারা কে–পপে আগ্রহ হারাচ্ছেন।

কে–পপ ব্যান্ডের বাইরে একক শিল্পীর উত্থান ঘটেছে। বিভিন্ন চার্টে সাফল্য পাচ্ছেন একক শিল্পীরা। চলতি বছর শীর্ষ ১০-এর মধ্যে ৭ জনই একক শিল্পী, যা আগে ব্যান্ডগুলোর জন্য বরাদ্দ ছিল। সংগীত সমালোচক লিম হি-ইয়ুনের ভাষ্য, আইডলদের (গ্রুপ) গানগুলো শুনতে দারুণ, তবে অনেক সময় শ্রোতাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারছে না।

আরও পড়ুন

নতুন গ্রুপগুলো হতাশ করছে

কে–পপের জনপ্রিয়তার ক্ষেত্রে মেয়েদের নতুন গ্রুপগুলো বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নতুন গ্রুপকে বলা হয় ‘রুকি’ গ্রুপ। ২০২৫ সালের প্রথম ভাগে নতুন কোনো গ্রুপের সাফল্য দেখা যায়নি। অথচ এই গ্রুপগুলো সাধারণত নতুন ভক্ত তৈরি করে এবং বাজারকে চাঙা রাখে। এই বছর শীর্ষ ১০–এ জায়গা পেয়েছে কেবল তিনটি গার্ল গ্রুপ-এসপা, আইভ ও নিউজিনস; তবে এগুলো কোনোটিই ‘রুকি’ নয়।

ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা
এক বিনোদন সংস্থার কর্মকর্তা (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে মূলধারায় প্রবেশ করতে গিয়ে অনেক গ্রুপ এমন গান করছে, যা কোরিয়ান শ্রোতাদের টানছে না।’ শিল্প–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, কে–পপ যদি ঘরোয়া বাজারে জনপ্রিয়তা হারাতে থাকে, তবে সেটি পুরো ইন্ডাস্ট্রির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

তথ্যসূত্র: কোরিয়া হেরাল্ড