নজরুলসংগীতের ‘বিকৃত’ সুরারোপের প্রতিবাদ বাংলাদেশের শিল্পীদের

নজরুলসংগীতের ‘বিকৃতি’র প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে ধানমন্ডির নজরুল ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থাসংগৃহীত

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের গান ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট’কে ‘বিকৃতভাবে’ সুরারোপ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দেশের অগ্রগণ্য নজরুলসংগীতশিল্পীরা। তাঁরা বলেছেন, বলিউডের ‘পিপ্পা’ নামের একটি চলচ্চিত্রে অস্কারজয়ী ভারতীয় সুরকার এ আর রাহমান এই ‘বিকৃতি’ করেছেন।
নজরুলসংগীতশিল্পীরা দাবি করেছেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় যেন ঢাকার ভারতীয় দূতাবাসে এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়। কেউ কেউ এই ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নিতেও সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।
নজরুলসংগীতশিল্পীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কবি নজরুলের নাতনি মিষ্টি কাজী বলেছেন, এ ঘটনায় সরকারের কঠিন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

নজরুলসংগীতের ‘বিকৃতি’র প্রতিবাদে শনিবার বিকেলে ধানমন্ডির নজরুল ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থা। এতে নজরুলসংগীত সংস্থার সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আনাম শাকিল, কবির নাতনি মিষ্টি কাজী, নজরুলসংগীতশিল্পী শাহীন সামাদ, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলিন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম, নজরুলসংগীতশিল্পী সালাউদ্দিন আহমেদ, লীনা তাপসী খান, ইয়াসমিন মুস্তারী, সুজিত মোস্তফা, নজরুলগবেষক রাশেদুল ইসলাম ও মাহবুবুল হক উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে খায়রুল আনাম শাকিল বলেন, ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট ’গানটি অবিকৃত সুরে বিভিন্ন চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধকালে রণাঙ্গনের যোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে এই গান। গানটির নজরুল সুরারোপিত আদি রেকর্ড থাকার পরও এর বিকৃত পরিবেশনা কেবল অন্যায় ও বেআইনি নয়, নজরুলের সৃষ্টির প্রতিও অবজ্ঞা প্রদর্শন।
‘পিপ্পা’ সিনেমায় নজরুলের গানের সুর বদলে ফেলার অভিযোগ এনে মিষ্টি কাজী বলেন, ‘কবি নজরুল শুধু বাঙালির কবি নন, তিনি সারা বিশ্বের কবি। দাদুর গানের সুর বদলে ফেলার অনুমতি এ আর রাহমানকে কে দিল?’ তিনি বলেন, এ আর রাহমানের উচিত ছিল আরও দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় কবি সম্পর্কে আরও জেনে গানটি নিয়ে কাজ করার।

‘পিপ্পা’ বিতর্কের মধ্যে ভারতের গণমাধ্যমে খবর আসে, কবি নজরুলের পুত্রবধূ কল্যাণী কাজী ২০২১ সালে এ আর রাহমানকে গানটি ব্যবহারের অনুমতি দেন। এ ঘটনায় কাজী নজরুলপুত্র অনিরুদ্ধ কাজীর ছেলে কাজী অনির্বাণ জানান, কল্যাণী কাজী গানটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও তিনি গানটি রেকর্ডের পর শুনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই গান কবির পরিবারকে শোনানো হয়নি।

সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গের অবতারণা করা হলে মিষ্টি কাজী বলেন, তিনি এই ব্যাপারে কিছু জানেন না। ২০২১ সালের অক্টোবরে তাঁর চাচি মারা গেছেন।
সংগীতশিল্পী বুলবুল ইসলাম বলেন, এ আর রাহমানের সংগীতায়োজনে বিকৃত সুরে কণ্ঠ মিলিয়েছেন বেশ কজন বাঙালি পেশাদার শিল্পী। তাঁরা তো অন্তত এই গান সম্পর্কে জানতেন! তিনি বলেন, প্রতিবাদ চলছে, পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থাও নিতে হবে। গানটি ইউটিউব থেকে সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যেন তা উদাহরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কণ্ঠসৈনিক শাহীন সামাদ বলেন, ‘আমি জানি, না কেন তিনি (এ আর রাহমান) এই ন্যক্কারজনক কাজটি করলেন। সর্বস্তরে এর তীব্র প্রতিবাদ হওয়া দরকার। সরকারিভাবেও এ ঘটনার নিষ্পত্তি হওয়া দরকার।’