‘পুরস্কার ঠিকই পেয়েছি কিন্তু আব্বা দেখে যেতে পারেন নাই’
শৈশবে গায়ক ইমরান মাহমুদুলের কাছে বাবা মানেই ছিল জীবনের সবকিছু। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুর মতো বাবাকে ঘিরে অনেক পরিকল্পনাও ছিল। ক্যারিয়ারে ইমরানের অনেক বড় স্বপ্নের একটি ছিল বাবাকে তাঁর অর্জন দেখানো। ছেলের সেই অর্জন কিছুটা দেখলেও ইমরানের সেরা কৃতিত্ব দেখে যেতে পারেননি তাঁর বাবা। এই আফসোস এখনো বয়ে বেড়ান এই তরুণ গায়ক।
ইমরান জানান, গানে সব সময় প্রেরণা দিতেন তাঁর বাবা মোজাম্মেল হক। বাবা চাইতেন ছেলে গান দিয়ে মানুষের ভালোবাসা পাবেন। ছেলের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে। ছেলেকে নিয়ে বাবার কৌতূহল চোখে পড়ার মতো ছিল। বাবার সেসব কথা স্মরণ করে এই গায়ক বলেন, ‘আমি এগিয়ে যাই, এটাই বাবা সব সময় চেয়েছেন। এই সাপোর্টের মধ্যে বাবা আনন্দ পেতেন। আমি আশ্বস্ত হতাম বাবার ভালোবাসায়। বাবা একটা পরিবারের বটগাছ। এই ছায়া যত দিন থাকে, একটা সন্তানের তত দিন কোনো চিন্তা থাকে না। সেভাবেই আমি বেড়ে উঠছিলাম। সেভাবেই বাবাকে পাশে পেয়েছি।’
তাঁর গানের ক্যারিয়ারের সফলতা আসতে শুরু করলে সেগুলো দেখে বাবা মোজাম্মেল হক খুশি হতেন। ছেলের গান প্রশংসিত হয়, ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে। সেই গান কারও মুখে শুনলে গর্ব করতেন তাঁর বাবা। শুধু তা–ই নয়, প্রায়ই ছেলের গান শুনতে নিজেই চলে যেতেন কনসার্টে। বাবার জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা করতেন ইমরান। কিন্তু তাঁর বাবা কখনোই সেই আলাদা আসনে বসতেন না।
ইমরান বলেন, ‘বাবা আমার কনসার্টে গিয়ে কখনোই সামনে বসতেন না। আমার কনসার্টে একদম পেছনে গিয়ে গান শুনতেন বাবা। পেছনের দর্শকেরা আমার গান নিয়ে কী বলছেন, আমার গান কতটা পছন্দ করছেন, দর্শকেরা ইমরান ইমরান বলতেন, এটা বাবা কাছ থেকে শুনতে চাইতেন। ছেলের গান শুনে যখন ভক্তরা বলতেন, ‘ওয়ান মোর’ তখন বাবার ভালো লাগত। বাবা এই ভালোবাসাটাই আমাকে পথ দেখিয়েছে। আমার আজকের সফলতার অবদান বাবার জন্যই।’
ছেলের গান নিয়ে ভক্তদের উন্মাদনা শুরুটা দেখেছেন। একসময় ইমরান গানের জন্য মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার পান। সেই অর্জন দেখে বাবা খুশি হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর বাবার ইচ্ছা ছিল ছেলে গানের জন্য দেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবে। সেই পুরস্কার জীবন দশায় দেখে যেতেন পারেননি তাঁর বাবা। এই কষ্ট এখনো বয়ে বেড়ান এই গায়ক।
‘আব্বার অনেক ইচ্ছে ছিল আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাব, আর আব্বা সেটা দেখবে আমি অ্যাওয়ার্ড নিচ্ছি। আমি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ঠিকই পেয়েছি, সেটা আব্বা দেখে যেতে পারেন নাই। এই আফসোস আমার আজীবন থেকে যাবে।’ বলেন ইমরান।
‘বাবার সব স্মৃতি এখনো মনে ভেসে ওঠে।’ বললেন ইমরান। তিনি জানান, প্রতিটি ছেলের কাছেই তাঁর বাবার আদর্শ। ছেলেদের কাছে বাবার অন্য রকম একটা ভালোবাসা থাকে। ‘আমার কাছেও বাবা তেমনই একজন। আজ বাবা বেঁচে থাকলে অনেক কিছুই সহজ মনে হতো। যেগুলো এখন অনেক কঠিন মনে হয়। বাবার ছায়ার নিচে থাকাটাই শান্তির। বাবা সব সময় বটবৃক্ষের মতো। বাবা যেখানেই থাকো ভালো থেকে। আমার আব্বার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন তাঁকে বেহেশত নসিব করুক আমিন।’ বলেন ইমরান। তাঁর বাবা ২০১৭ সালে ১২ সেপ্টেম্বর মারা যান।