প্রথম গান, দ্বিতীয় বিরতির পর
জোহান, লুকান, শেহরিনা, নাবিল ও সুজয়—এই পাঁচ বন্ধুকে নিয়ে ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে রক ব্যান্ড ‘সাবকনসাস’। তখন তাঁরা সবাই ও-লেভেলের শিক্ষার্থী। শুরুতে তাঁদের পরিচিতি আসে টেলিভিশনের ব্যান্ড শোতে গান গেয়ে, আর স্টেজ শো করে। ২০০২ সালে রিয়েলিটি শো ‘স্টার সার্চ’-এ সেরা ব্যান্ড হয় ‘সাবকনসাস’। আর জোহান হন সেরা গিটারিস্ট। এভাবে তাঁদের পরিচিতি অনেক বাড়িয়ে দেয় এই প্রতিযোগিতা। ‘প্রজন্ম’ শিরোনামের একটি মিশ্র অ্যালবামে প্রকাশিত হয় ব্যান্ডের প্রথম গান ‘ঝুমকা’। আর ২০০২ সালে প্রকাশিত হয় তাঁদের প্রথম অ্যালবাম ‘মাটির দেহ’। অ্যালবামের ‘মাটির দেহ’, ‘মাঝি’, ‘দিল দে’, ‘হে নবী’ গানগুলো তরুণ শ্রোতারা পছন্দ করেন। ২০০৪ সালে আসে দ্বিতীয় অ্যালবাম ‘তারার মেলা’। ব্যান্ডের গাওয়া ‘অহনা’, ‘দুঃখ দুঃখ’, ‘অকারণ’, ‘গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল’ শ্রোতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পায়।
এ দুই অ্যালবাম প্রকাশ করার পর ব্যান্ডের দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জোহান ও লুকান পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। অনিয়মিত হয়ে পড়ে ব্যান্ডের কার্যক্রম। মাঝে ৯ বছর বিরতির পর ২০১৩ সালে তারা প্রকাশ করে তাদের তৃতীয় পূর্ণাঙ্গ অ্যালবাম ‘শিল্পের ঘর’। এরপর আবার কেটে গেছে ৯ বছর, ২০২২–এ এসে তারা প্রকাশ করল নতুন গান ‘সাদা ঘোড়া’। নতুন এই গান প্রকাশের মধ্য দিয়ে সংগীতাঙ্গনে নিয়মিত হওয়ার আভাস দিলেন ব্যান্ডের সদস্যরা।
ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য জোহান গত শুক্রবার জানালেন, এটি তাঁদের চতুর্থ অ্যালবাম ‘রূপকথার কাব্য’–এর প্রথম গান। এখন থেকে যথাবিরতিতে নতুন সব গান প্রকাশ করবেন তাঁরা। গত কয়েক মাসে কয়েকটি গান বানানোর কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। ব্যান্ডের গানগুলো জোহানের নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা জেএ স্টুডিও, ব্যান্ডের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ও কয়েকটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত হবে। জোহান বলেন, ‘এখন নতুন গান প্রকাশে বেশি মনোযোগী আমরা। এই গান (সাদা ঘোড়া) নিয়ে আমাদের নবযাত্রা হচ্ছে। এরপর আরও অনেক গান প্রকাশ করব।’
তৈরি হচ্ছে নতুন গান। নিয়মিত মহড়ায় অংশ নিচ্ছেন দলের সবাই। চলছে স্টেজ শো। সব মিলিয়ে সময়টা দারুণ উপভোগ করছেন ‘সাবকনসাস’ সদস্যরা। নব্বইয়ের দশকে গড়ে ওঠা এই ব্যান্ডের সদস্যদের মতে, তাঁরা এখন আরও পরিণত, আরও অভিজ্ঞ। সবাই মিলে নতুন করে, নতুন ভাবনাচিন্তার গান শ্রোতাদের উপহার দিতে চান। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও এরই মধ্যে ঠিক করে নিয়েছেন জানিয়ে জোহান বলেন, ২০২৩ সালে দলের ২৫ বছর পূর্তিতে আরও অনেক নতুন গান নিয়ে তাঁরা হাজির হবেন।
‘সাদা ঘোড়া’ গানের কথা লিখেছেন মুহাম্মদ নাফিসুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রাফিকস ডিজাইনের ওপর পিএইচডি করছেন তিনি। গানটি প্রসঙ্গে বলেন, ভালোবাসা ঠিক যেন এক একটা রূপকথা। ভালোবাসায় পড়া যায় কিন্তু এই অনুভূতি ফ্রেমে বাঁধা যায় না। অন্যের ভালোবাসায় পড়ার গল্পটা শোনা যায়, তবে নিজেরটা কেন যেন বলা যায় না। খুব পরিচিত হলেও এই অনুভূতি থাকে মায়াজালে ঘেরা, খুব প্রিয় কিন্তু অনেক সময়ই অজানা। ভালোবাসার একটা আবেশি রূপকথার সাম্রাজ্যের গান এই ‘সাদা ঘোড়া’
সাবকনসাসের অনিয়মিত উপস্থিতির কারণও জানালেন জোহান, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেতে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাঁদের দুই ভাইকে বেছে নিতে হয় প্রবাসজীবন। এর মধ্যেই ফ্লোরিডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি করেন জোহান আর নিউইয়র্কের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় ব্যাচেলর করেন লুকান। পড়াশোনা শেষে এক দশক আগে লুকান দেশে ফিরে এসে বাবার গড়া আর্কিটেকচারাল ফার্মের দায়িত্ব নিলেও যুক্তরাষ্ট্রেই থেকে যান জোহান। গান নিয়ে ফুয়াদ আল মুক্তাদিরের সঙ্গে টুকটাক কাজও করেন। পাশাপাশি নিজে সেখানকার বিভিন্ন বড় বড় অনুষ্ঠানে পারফর্ম করতেন। ২০১৯ সালে জোহান স্থায়ীভাবে বাংলাদেশে এলেও ঢাকায় ছিলেন না।
কিছুদিন আগে দুই ভাই জোহান ও লুকানের মনে হলো, আবারও সাবকনসাস ব্যান্ড সংগঠিত করা দরকার। করেছেনও তা–ই। নতুনভাবে গড়ে তোলা এই ব্যান্ডে প্রথম দিককার সদস্যদের মধ্যে আছেন শুধু দুই ভাই। তাঁদের মনে হলো নতুন গান বানানো উচিত। ভক্ত–শ্রোতারাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের কাছে নতুন গান চাচ্ছিলেন। একটা সময় তাই সিদ্ধান্ত নেন, আবারও এক হবেন। গান বাঁধবেন। সেই চিন্তা থেকে নতুন তিন সদস্য নিয়ে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করল ব্যান্ড সাবকনসাস। জোহান আর লুকানের সঙ্গে নতুন যাত্রায় যুক্ত হলেন বেজ গিটারে আহাদ অন্তর ও সৈকত এবং অসি লিড গিটারে।