আষাঢ়ের সন্ধ্যায় বাদলের সুর

‘মায়া-বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ শীর্ষক আয়োজনে সুর আর ছন্দের মূর্ছনা ছড়ালেন আফজাল হোসেন ও শামা রহমান। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলেছবি: জাহিদুল করিম

কখনো হৃদয়ের ব্যাকুলতা, অভিমান; কখনো দ্রোহ, প্রেম আর বিরহ—আষাঢ়ের ঝলমলে সন্ধ্যায় হৃদয় নিংড়ে সুরের মায়াজাল ছড়ালেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী শামা রহমান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশের কবিতার ছন্দে তাঁকে সঙ্গ দিলেন অভিনেতা, নির্দেশক আফজাল হোসেন।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার একটি হোটেলে ‘মায়া-বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে এম ডব্লিউ ম্যাগাজিন বাংলাদেশ। গান ও কবিতার যুগলবন্দীতে তন্ময় ছিলেন দর্শকেরা। সুর আর ছন্দের মূর্ছনা ছড়ালেন শামা ও আফজাল।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামতেই হোটেলটির বলরুম পূর্ণ হতে থাকে। তখন সন্ধ্যা ছয়টা, মঞ্চের সব আলো নিভে গেছে। মিলনায়তনজুড়ে ঘনঘোর অন্ধকার। চারপাশে মেঘ গুড়গুড় শব্দ। মেঘভাঙা বৃষ্টির ছন্দের তালে ছাতা হাতে মঞ্চের সামনে এলেন উপস্থাপক সারাহ আলম।

তিনি বললেন, ‘এই বাদল সন্ধ্যায়, যখন জানালার কাচে বৃষ্টির ফোঁটা গড়িয়ে পড়ছে, তখন হৃদয়জুড়ে কদম ফুলের ঘ্রাণ, ঠিক তখনই শুরু হচ্ছে মায়া–বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল।’

গান ও কবিতার যুগলবন্দীতে তন্ময় ছিলেন দর্শকেরা
প্রথম আলো

এরপরই মঞ্চে আসেন এম ডব্লিউ ম্যাগাজিন বাংলাদেশের সম্পাদক ও প্রকাশক রুমানা চৌধুরী এবং স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মালিক মোহাম্মদ সাঈদ।

তাঁদের বক্তব্য শেষ হতেই কৃত্রিম বিদ্যুতের ঝলকানি ও মেঘের গর্জন ভেসে আসে। তখনই হাস্যোজ্জ্বল ভঙ্গিমায় মঞ্চে আসেন শামা রহমান ও আফজাল হোসেন। মাইক্রোফোন হাতে আফজাল হোসেন বলেন, ‘আশা করি, এই ইট–কাঠ আর কোলাহলের শহরে থেকেও পর হয়ে যাওয়া বৃষ্টির সুর, রূপ, রস, ঘ্রাণ বুকে নিয়ে এক বিশেষ আনন্দের স্মৃতি বয়ে ঘরে ফিরতে পারবেন।’

এরপর শামা রহমান কণ্ঠে তুললেন মোহজাগানিয়া সেই গান ‘বাদল-দিনের প্রথম কদম ফুল’; রবীন্দ্রসংগীতটি বৃষ্টিদিনের অবিচ্ছেদ্য গানে পরিণত হয়েছে। শ্রোতারা গানটি উপভোগ করেছেন। এরপর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আষাঢ়’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন আফজাল হোসেন। আবৃত্তি শেষে ‘আবার এসেছে আষাঢ়’ পরিবেশন করেন শামা রহমান।

সুর আর ছন্দের মূর্ছনা ছড়ালেন শামা ও আফজাল
ছবি: জাহিদুল করিম

রবীন্দ্রনাথের পর এবার সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে আওড়ালেন আফজাল, আবৃত্তি করলেন, ‘ওখানে কে, কেউ না বাতাস। বাতাস কি কেউ না?’ এরপর জীবনানন্দ দাশের ‘পঁচিশ বছর পরে’, ‘আকাশলীনা’ আবৃত্তি করেছেন তিনি। পাঁচ দশক ধরে মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমা—তিন মাধ্যমেই সমান উচ্চতায় অভিনয় করছেন আফজাল হোসেন।

গান ও কবিতার মাঝে আফজাল হোসেন শামা রহমানকে প্রশ্ন করেন, গানটা শুরু করলেন কীভাবে?—শামার ছোট্ট উত্তর, ‘সাত বছর বয়স থেকে গান শিখেছি। এখনো শিখছি।’ প্রায় দেড় ঘণ্টার পরিবেশনায় ‘কৃষ্ণকলি আমি তারে বলি’, ‘ও যে মানে না মানা’, ‘আজি ঝড়ের রাতে’, ‘মেঘের পর মেঘ জমেছে’, ‘এসো হে নিশীথ রাতে’সহ বেশ কয়েকটি গান গেয়ে শোনান শামা রহমান।

বক্তব্য রাখছেন স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মালিক মোহাম্মদ সাঈদ
প্রথম আলো

আমাদের সাহিত্য, সংগীত আর লোকজ কাব্যে যে বর্ষা বারবার ফিরে আসে, এ অনুষ্ঠান যেন তারই এক সজীব স্মারক। গানের সুরে আর কবিতার ছন্দে তাই ফিরে ফিরে এসেছে সোঁদা মাটির ঘ্রাণ, নদীর উচ্ছলতা আর হারানো সময়ের মায়া।

অনুষ্ঠানে রুমানা চৌধুরী বলেন, ‘শৈশবে বৃষ্টিতে ভেজার নিষ্পাপ আনন্দ, ঝোড়ো হাওয়ায় উদ্বেলিত মন কিংবা সিক্ত কদম ফুল হাতে কল্পনায় হারিয়ে যাওয়া, এসব কিছুর মধ্য দিয়েই বর্ষা হয়ে ওঠে স্মৃতির ঝাঁপি খুলে বসার এক নিঃশব্দ আহ্বান। আর ঠিক তখনই কানে বাজে কোনো গুনগুন, কোনো সুর, কোনো পরিচিত গান। বর্ষার এসব আমেজ নিয়েই আমাদের আজকের এই আয়োজন।’ এম ডব্লিউর সাংস্কৃতিক যাত্রায় বরাবরের মতো এবারও মায়াকে পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ দেন তিনি।

মালিক মোহাম্মদ সাঈদের মতে, মায়া কেবল একটি স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড নয় বরং রূপচর্চার এমন একটি অনুষঙ্গ, যা প্রকৃতির বিশুদ্ধতা ও বাঙালির চিরায়ত নান্দনিকতাকে ধারণ করে।

তিনি জানান, মায়ার বেশির ভাগ উপাদান সংগ্রহ করা হয় নাটোরের বিখ্যাত ঔষধি গ্রাম থেকে। বরাবরের মতো আগামীতেও মায়া বাংলার নিজস্ব সৌন্দর্য ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বক্তব্য রাখছেন এম ডব্লিউ ম্যাগাজিন বাংলাদেশের সম্পাদক ও প্রকাশক রুমানা চৌধুরী
প্রথম আলো

আয়োজনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিল সান কমিউনিকেশনস লিমিটেড। আগামীকাল রোববার রাত সাড়ে ১০টায় মাছরাঙা টেলিভিশনে অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হবে।

আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথিরা
প্রথম আলো

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম, বেঙ্গল গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের লিটু, স্কয়ার টয়লেট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী, চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম, জামাল উদ্দিন আহমেদ, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, এমসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি নিহাদ কবির, স্থপতি সাঈদ মুস্তাফা খালিদ, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আনিসুল হক, অভিনেতা জাহিদ হাসান, চঞ্চল চৌধুরী, আরিফিন শুভ, অভিনেত্রী আফসান আরা বিন্দু, রুনা খানসহ আরও অনেকে।

আরও পড়ুন