‘আগামী সংসদে কপিরাইট আইন সংশোধনের জন্য উত্থাপন করা হবে’

শনিবার ছিল সংগীতসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর মোর্চা সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব ও সম্মেলনের শেষ দিনপ্রথম আলো

রাত পৌনে নয়টায় মঞ্চের সব বাতি নিভে গেল। নামল অন্ধকার। ঠিক পরেই যে আলোটা জ্বলল, তা অন্য রকম আনন্দ বয়ে আনল বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে। সত্যিকারের প্রাপ্তির আনন্দ নিয়ে গেয়ে উঠলেন তাঁরা। কারণ, দেশের সংগীতাঙ্গনের মানুষদের সত্যিকারের প্রাণের দাবি প্রতিষ্ঠার দিকে অনেকটাই এগিয়ে গেছে সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ।

আজ শনিবার ছিল সংগীতসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর মোর্চা সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব ও সম্মেলনের শেষ দিন। সন্ধ্যায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে কবি নজরুল ইসলামের ‘আমার কোন কূলে আজ ভিড়ল তরী’, ও ‘আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন’ গেয়ে শোনান ইউসূফ। জয়িতা গেয়ে শোনান কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘সখী ভাবনা কাহারে বলে’, ‘এসো শ্যামল সুন্দর’ গান দুটি। সম্মেলনের সংগীতপর্ব শুরু হয় সভ্যতা ও সন্ধির সঙ্গে শিশুশিল্পীদের সম্মেলক কণ্ঠে পঞ্চকবির গানের কোলাজ দিয়ে।

জাতীয় নাট্যশালায় সংগীত ঐক্য বাংলাদেশের জাতীয় উৎসব ও সম্মেলনের শেষ দিনে বাংলা সিনেমার বিভিন্ন সময়ের জনপ্রিয় গানগুলোর কোলাজ পরিবেশন করেন এ প্রজন্মের শিল্পীরা
প্রথম আলো

বিকেলে প্রথম অধিবেশনে ৪৫ জেলা শহর থেকে আসা ১১৫ জন শিল্পীকে নিয়ে মতবিনিময় করেন সংগীত ঐক্যের নেতারা। দেশের সংগীত–সংশ্লিষ্টদের যৌক্তিক সম্মান-সম্মানী, কপিরাইটসহ ১৮ দফা প্রস্তাব নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়, যার সব কটিতেই ঐক্যমত পোষণ করেন তাঁরা। সন্ধ্যার অধিবেশনে প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘শিল্পীরা গত ৫০ বছর গান গেয়ে গেছেন। কী পেলাম, সেটা ভাবেননি। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসে তাঁরা একত্র হয়েছেন। এতে আমরা আনন্দিত। সংগীত বিবর্তনশীল। অনেক পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি, সেগুলো আলিঙ্গন করে নিচ্ছি। বর্তমানে এ জায়গায় বহু সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। সংগীতশিল্পীরা এখান থেকে কীভাবে লাভবান হবেন, সেটা ভাবতে হবে। সংগীত ঐক্যের দাবি অডিটরিয়াম, সংগীত একাডেমি ও কল্যাণ তহবিল করা সম্ভব। মন্ত্রী উদ্যোগ নিলে আমরা সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।’

প্রধান অতিথি জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী
প্রথম আলো

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘শিল্পীরা হৃদয়ের তাগিদে গান করেন, আমরা তাঁদের কিছুই দিতে পারি না। কেবল দূর থেকে ভালোবাসা ছাড়া। ক্ষুধা–দারিদ্র্য নিয়ে শিল্প বাঁচবে না। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে জেলা শিল্পকলার শিল্পীদের ১০ হাজার ও উপজেলার শিল্পীদের ৭ হাজার টাকা সম্মানী দেওয়ার। আগামী সংসদে কপিরাইট আইন সংশোধনের জন্য উত্থাপন করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ’ সংগীত–সংশ্লিষ্টদের সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতকল্পে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে ১৫ দফা প্রস্তাব পেশ করে। সংশোধিত কপিরাইট আইন পাস হলে সংগীত–সংশ্লিষ্টদের প্রস্তাব বা দাবিদাওয়া অনেকটাই পূরণ হবে। জাতীয় সংসদের আগামী অধিবেশনে আইনটি পাস হতে পারে বলে আশা করছি।’

বক্তৃতা দেন সংগীত ঐক্যের মহাসচিব শহীদ মাহমুদ জঙ্গী
প্রথম আলো

সংগীত ঐক্যের মহাসচিব শহীদ মাহমুদ জঙ্গীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ, নকিব খান, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে কণ্ঠশিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী, কোনাল, হৈমন্তী রক্ষিত, অপু আমান, রাজিব ও আকাশ মাহমুদ গেয়ে শোনান বাংলা চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সময়ের জনপ্রিয় গানের মেডলি। সেসবের মধ্যে ‘মনেরও রঙে রাঙাব’, ‘আবার এল যে সন্ধ্যা’, ‘ঢাকা শহর আইসা আমার’, ‘সব সখী রে পার করিতে’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘আমার গরুর গাড়িতে’, ‘একা একা কেন ভালো লাগে না’, ‘আছেন আমার মোক্তার’সহ আরও বেশ কিছু গান। লোকগান গেয়ে শোনান অংকুর ও আশিক।

বিশেষ পরিবেশনার পরিকল্পনা ছিল নকীব খান, মানাম আহমেদ, কুমার বিশ্বজিৎ ও বাপ্পা মজুমদারের। পরিবেশনের তালিকায় শিল্পীদের মধ্যে আরও ছিলেন মেহেরিন, জয় শাহরিয়ার, কিশোর, রন্টি, শাওন গানওয়ালা, এ আই রাজু, অবন্তী সিঁথি ও রাজু আহমেদ। এ ছাড়া গানের দল ফিডব্যাক ও সোলসের পরিবেশনার অপেক্ষায় ছিলেন মিলনায়তনভর্তি শ্রোতা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ
প্রথম আলো

এর আগে গত ১৭ জুন চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে শুরু হয় এ উৎসব। আজ ঢাকায় ছিল শেষ আয়োজন।